মাও: মুহা: সাইফুল ইসলাম ফুয়াদ: মহান আল্লাহ যে কয়টি ইবাদত পালন করা আবশ্যকীয় করেছেন; সবগুলো ইবাদত ফরজ হওয়ার পেছনে যে উদ্দেশ্যে কাজ করে তা হল ; বান্দা যেন তাকওয়া অর্জন করতে পারে। তাকওয়া হচ্ছে অন্যায় ও অপরাধ মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার একটি অনুপম পথ। রমাদানের সিয়াম সাধনা ব্যক্তির মাঝে আল্লাহর ভয় তথা তাকওয়া সৃষ্টি করে। আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি জাগ্রত করে। সমাজকে অন্যায় ও অপরাধ মুক্ত করতে হলে এই আল্লহভীতির কোন বিকল্প নেই। লোক চক্ষুর অন্তরালে যেখানে পুলিশি প্রহরা নিস্ক্রিয়, গোয়েন্দা বাহিনীর দৃষ্টি যেখানে পৌছেনা, স্যাটেলাইটের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেখানে অসহায়, সেখানে ও আল্লাহর ভয় ব্যক্তিকে অপরাধ মুক্ত রাখতে পারে। তাই মানব মনে আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া সৃষ্টি করাই হল রমাদানের মূল উদ্দেশ্য। সুরা বাকারায় রমাদানের সিয়াম ফরজ করার বিধান নাজিল করে মহান আল্লাহ বলেন ” হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজাকে ফরজ করা হয়েছে যেমন পূর্ববর্তী নবীর অনুসারীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল যাতে তোমরা তাকওয়ার গুণাবলী অর্জন করতে পার। “( সুরা বাকারা১৮৩) এখানে আল্লাহতায়ালা রোযার উদ্দেশ্য হিসেবে তাকওয়া অর্জনকে বুঝিয়েছেন। আর যে তাকওয়ার অধিকারী সেই মুত্তাকি। তাকওয়ার শাব্দিক অর্থ ভয় করা, বিরত থাকা, পরহেজগার হওয়া, তবে শরিয়াতের পরিভাষায় তাকওয়া এক গভীর ব্যাপক অর্থবহ শব্দ। শরিয়াতে এ শব্দটি এমন এক অভ্যান্তরীন অনুভূতির নাম, যা মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় এবং মহব্বত পয়দা করে। এক কথায় একে আল্লাহভীতি ও বলা হয়।আল্লাহর ভয় এবং মহব্বত এ দুটি বিষয় মানুষের ঈমানি অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। তাকওয়া এমন এক গুণ, যা নির্দিষ্ট কোন কাজ,পোশাক বা সিমাবদ্ধ কয়েকটি আমলের নাম নয় বরং তাকওয়া হল মুমিন জীবনের সর্বব্যাপী অবিচ্ছেদ্যগুণ, যা তার চিন্তায়,কথায় ও কাজে প্রকাশ্য- গোপন সকল বিষয় সব সময়ের জন্যই সম্পৃক্ত থাকবে। তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সকল পর্যায়েই আল্লাহর ভয় তাকে নিয়ন্ত্রন করবে। জীবনের প্রতটি মুহূর্তে ক্ষমা, প্রতিটি কথা, কাজে ও চিন্তায় যদি সে তাকওয়ার গুণে গুণান্তিত থাকে, তবেই তার প্রতিটি মুহূর্ত হবে আল্লহর ইবাদতে পরিপূর্ণ, যে ইবাদত করার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন ” আমি জ্বীন ও মানব জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি”।( সুরা যারিয়াত -৫৬) অতএব প্রতিটি মুসলমানের উচিত, তাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সকল ত্রুটি – বিচ্যুতিগুলোকে এই মহিমান্বিত মাসে দূর করা, আত্নিক ও শারীরিক পরিশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে তাকওয়ার গুণে গুণাণ্বিত হওয়া। আল্লাহ যেন প্রতিটি মুসলমানকে উক্ত গুণে গুণাণ্বিত হওয়ার ও সমাজকে তাকওয়া ভিত্তিক সমাজে রুপান্তরিত করার তাওফিক দান করেন, আমীন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও শিক্ষক, দ: বড় মোকামিয়া তাহেরিয়া দা: মাদ্রাসা, বরগুনা