আমার বাসার কাজের বুয়ার চার মেয়ে। সবাই বিবাহিত। রমজানে মেয়েদের বাড়িতে ইফতারী দিতে হবে, এজন্য চার মাসের বেতন অগ্রীম নেয়ার আব্দার করেছে। বুয়ার চোখে কেবলি পানি। বাকি চার মাস সে ছোট্ট বাচ্ছাদের নিয়ে কিভাবে চলবে। আবার যদি মেয়েদের ইফতারী না দেয় তাহলে মেয়ারা নির্যাতনের স্বীকার হবে।
গত সাপ্তাহে ইসহাক মিয়া মেয়েকে ঋন মাজন নিয়ে লাখ টাকা খরচ করে বিয়ে দিয়েছেন। মেয়ে রমজান আসতেই ফোন দিয়েছে, আব্বা শাশুড়ি আম্মা বলেছেন, “কি গো বউ তোমার বাপে কয় মন ইফতারী পাঠাইব”।
আমার বাড়ি পাঁচমন ইফতারী দিতে হবে বাবা। তাদের অনেক বড় গাও(গ্রাম)। পুরা গাও বন্টন করতে হবে। না হয় তাইনের (স্বামীর) শরম হবে। ইসহাক মিয়ার এখন সুদী টাকা আনা ছাড়া আর কোন পথ নেই। না হলে মেয়ে জামাইয়ের বাড়ি মুখ দেখাতে পারবে না।
আমার বিয়ের পর রমজান আসতেই আব্বা বিয়াইর জন্য ইফতারি দিয়ে পাঠালেন। ছেলে পক্ষ থেকে ইফতার পাঠানো সুন্নত, পাশাপাশি প্রথাবিরোধী একটি আন্দোলন। সাথে সাথে আমার শশুড় কে ফোন দিয়ে বলে দিলেন বিয়াই আপনি বউমাকে রমজানে দেখে যাবেন, কিন্তু রুসমী ইফতারী আনবেন না। এসব প্রথা আমাদের বন্ধ করতে হবে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় অনেক আলেম বন্ধুর বাড়িতেও শশুড় বাড়ির ইফতারীর আযোজনের দাওয়াত পাই এবং মর্মাহত হই। ইফতার করানো সুন্নত কিন্তু বাধ্য করে মনের পর মন ইফতারী খাওয়া হারাম বৈ কিছু নয়।
বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলের মতো সিলেটে মেয়ের বাড়ি ইফতারী পাঠানোর প্রথা সবচেয়ে বেশি। অনেকটা বাধ্যতা মূলক। যা গরীবদের জন্য অসহনীয় এক যাতনা। অসংখ্য নারী এবং তার পরিবার এই ইফতারি দেয়াকে কেন্দ্র করে নির্যাতিত হয়। এই ইফতারী মানুষকে দেখানোর একটি অহংকারের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমার শশুর বাড়ি থেকে এতো মন ইফতারি এসেছে। মেয়ের বাপেরতো দেবার মতো সামর্থ্য থাকতে হবে। সেটা দেখার বিষয় নয়। এই মারাত্মক ব্যাধি কণ্যাদায়গ্রস্থ পিতা বা বিধবা নারী ও মায়ের জন্য কতোটা কষ্টের, তা কেবল ভুক্তভুগীই জানেন। নতুবা মেয়েকে শশুর বাড়ীর লোকজনের পক্ষ থেকে সীমাহীন শারিরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হবে।
রমজানে মাসের প্রার্থনা,কোনো নারী এবং তার পরিবার যেনো এই ইফতারি দেয়ার প্রথা, রুসম ও রেওয়াজের কারনে নির্যাতিত না হয়। একজন স্বামীই পারে তার স্ত্রীকে এই নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে। সবার পরিবারেই তো মেয়ে আছে।অন্তত তার কথা চিন্তা করুন।
আসুন রমজানে রোজার নামে এসব অনৈসলামিক কু-প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। নিজেদের চারপাশে “রেওয়াজী ইফতার’ প্রথাবিরোধী আন্দোলন গড়ি তুলি। শশুড় বাড়ির এই প্রথাগত ইফতারকে না বলি। (সংগৃহীত ও সম্পাদিত)