হিমালয় ডেস্ক: ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বলেছে, অবৈধ মুসলমান অভিবাসীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। তাদের বঙ্গোপসাগরে ছুড়ে ফেলা হবে। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভারতীয় জনতা পার্টির(বিজেপি) প্রধান আবারো অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ‘উইপোকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরেও তিনি একই ধরনের মন্তব্য করেছিলেন, তখন অমিত শাহের বক্তব্যের জোর নিন্দা জানিয়েছিলো মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালায়ও তাদের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্টে বিষয়টি উল্লেখ করেছে। অমিত শাহ বলেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের এক এক করে ধরে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করবে। এর মাধ্যমে তিনি মূলত বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বোঝাতে চেয়েছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতের যাওয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও শিখদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন। ভারত ইতোমধ্যেই মিয়ামার থেকে যাওয়া ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিমদের বহিষ্কারের বিষয়ে কাজ করছে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।
রয়টার্সের রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডান হাত হিসেবে পরিচিত অমিত শাহ’র এই বক্তব্য ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ও সংখ্যালঘু গ্রুপগুলো এর নিন্দা জানিয়েছে। টুইটারে অনেকেই বলছেন, অমিত শাহর এই বক্তব্য জাতিগত নিধনের উস্কানি।
কেরালা ভিত্তিক সংগঠন দ্য কেরালা ক্রিশ্চিয়ান ফোরাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের ঐক্যবদ্ধতা ও স্বকীয়তার ওপর সরাসরি আক্রমন বিজেপি প্রধানের এই বক্তব্য। সংস্থাটি অমিত শাহের ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে।
কথিত অবৈধ অভিবাসী আখ্যায়িত করে মুসলমানদের দেশছাড়া করতে অমিত শাহের হুমকি অবশ্য এটাই প্রথম নয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দলীয় এক সমাবেশে তিনি বলেন, ভারতে থাকা ‘অবৈধ বাংলাদেশিদের’ শনাক্ত করে তাদের এক এক করে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। একই বছরের আগস্টে কলকাতায় বিজেপির এক সমাবেশে তিনি বলেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াতেই ভারতে নাগরিক তালিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে। অমিত শাহ বলেন, নাগরিক তালিকা (এনআরসি) হচ্ছে বেছে বেছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। মমতার বিরোধিতায় এটি বন্ধ হবে না। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা তৃণমূল কংগ্রেসের ভোটব্যাংকে পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গত আসামে এনআরসিতে প্রায় ৪০ লাখ মুসলমান দেশ থেকে বিতাড়নের হুমকিতে রয়েছে। ভারত সরকার বলছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর যারা সেখানে গিয়েছে তাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে। কিন্তু প্রকাশিত তালিকায় দেখা গেছে কয়েক পুরুষ ধরে আসামে বসবাস করেও তাদের নাম ওঠেনি এনআরসিতে। মূলত আসামের মুসলমানরাই এতে হুমকির মধ্যে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেও একই ধরনের এনআরসি করার কথা বলছে বিজেপি। যদিও রাজ্যটিতে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বিজেপির এই ধারণার বিরোধীতা করছে শুরু থেকেই।