মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছে এ অভিযোগ আসার পর দ্রুত বিষয়টি তদন্ত করে ভাতা বরাদ্দ দেওয়ার নির্দেশ দিই। সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ দিলে সেই ভাতা কেন তাঁদের পরিশোধ করা হবে না, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছি। এখন বিষয়টির সুরাহা হয়েছে। তবে এই গলদ বা ভুল যারা করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ গত ২ জানুয়ারি ‘সাড়ে ৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা লোপাট’ শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে ওই অর্থ পরিশোধে পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে পরের দিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত রিট করেন। এ ছাড়া বরিশাল জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা না দেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দেন আদালত। কমিটির তদন্ত চলাকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ টাকা ছাড় করল।
গত চার বছর বরিশালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান শেখ রিয়াদ মুহাম্মদ নূর কয়েক দফা তথ্য অধিকার আইনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় বরিশাল জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে। সমাধান না পেয়ে শেখ রিয়াদ তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২৮ আগস্ট ও ১০ অক্টোবর কমিশনে শুনানি হয়। কমিশন মন্ত্রণালয়কে সম্মানী ভাতা দিতে ব্যবস্থা নিতে বলে।
গত ৩১ মার্চ বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভাতা মন্ত্রণালয় থেকে ছাড় করা হয়েছে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে দ্রুত এ টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পৌঁছাবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বরিশাল জেলার মোট ভাতাভোগী ছিলেন ৬ হাজার ২৩২ জন। ২০১৫ সালের এপ্রিলে আরও ২২৪ জন যুক্ত হয়ে মোট সংখ্যা দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪৫৬। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা পেতেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের জন্য প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার নামে ব্যাংক হিসাবে ১৫ হাজার টাকা করে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু জমা হয় ১০ হাজার টাকা করে। আর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জমা হয় ১৫ হাজার টাকা করে। তাহলে তাঁদের এক মাসের (মার্চ) ভাতা কোথায় গেল, সেই প্রশ্নই তুলেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। বরিশালের মুক্তিযোদ্ধা এনায়েতুর রহমান, ধীরেন চন্দ্র বিশ্বাস, আমীর আলী, আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা চার বছর ধরে যে কষ্ট করেছেন, তাতে কোনো কাজ হয়নি। তবে প্রথম আলোতে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার পর এবং আদালতে তা নিয়ে রিট হওয়ার পরই তাঁরা ভাতা ফেরত পেতে যাচ্ছেন।