চট্টগ্রামে আবাসন মেলায় এবার প্রস্তুত বা রেডি ফ্ল্যাটের প্রতি গ্রাহকের ঝোঁক ছিল বেশি। যাঁরা কিস্তিতে ফ্ল্যাট কেনার চিন্তাভাবনা করছেন, তাঁদের কাছে প্রথম পছন্দ ছিল রেডি ফ্ল্যাট। দ্বিতীয় পছন্দ ছিল যেসব ভবনের কাঠামো মোটামুটি প্রস্তুত হয়ে গেছে তেমন প্রকল্প। গ্রাহকের এমন চাওয়া–পাওয়ার বিষয়টি জানা গেছে আবাসন কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে। আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, মেলায় ক্রেতাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে দুই ধরনের মত। তাঁদের কথা হলো, যেসব কোম্পানি গ্রাহকের আস্থা অর্জন করেছে তাঁদের কাছে ফ্ল্যাট বুকিং দিলে অনিশ্চয়তা থাকে না। তবে আস্থা অর্জন করেনি এমন কোম্পানির আবাসন প্রকল্পে দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়া ফ্ল্যাট বুকিং দিলে অনিশ্চয়তা থাকে। এই অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য প্রস্তুত ফ্ল্যাটই তাঁদের বেশি পছন্দ।
নগরের র্যাডিসন ব্লু হোটেলের মেজবান হলে চার দিনব্যাপী এই মেলা আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটি।
মেলায় একটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে ফ্ল্যাটের বিভিন্ন বিষয় যাচাই–বাছাই করছিলেন ব্যাংকার সামছুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের গৃহঋণ সুবিধার কারণে প্রস্তুত ফ্ল্যাটই পছন্দ। প্রতিটি কোম্পানি কমবেশি প্রস্তুত ফ্ল্যাটই মেলায় প্রদর্শন করেছে। এখন বুকিং না দিলেও দুটি কোম্পানির ফ্ল্যাট পছন্দ করে রেখেছি। মেলার পরই প্রতিষ্ঠান দুটির কার্যালয়ে গিয়ে যোগাযোগ করব।’ মেলা ঘুরে দেখা যায়, আগ্রহী ক্রেতারা স্টলে স্টলে ঘুরে পছন্দের এলাকায় পছন্দের প্রকল্প খুঁজছেন। ফ্ল্যাটের আকার, বর্গফুটপ্রতি দাম, আবাসন প্রকল্পে কী কী সুবিধা আছে ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করছেন।
মেলায় স্যানমার প্রপার্টিজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মাহফুজুল বারী বলেন, ‘মেলায় গতবারের চেয়ে বিক্রয় আদেশ বেশি পাওয়া গেছে। তবে বিক্রয়ের চেয়ে বড় বিষয় হলো, ক্রেতাদের চাওয়া–পাওয়ার বিষয়টি জানতে পারা। গ্রাহকের পছন্দের এলাকা, চাহিদা কেমন, কী ধরনের প্রকল্প নেওয়া হলে গ্রাহকের পছন্দ হবে—ক্রেতাদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে ধারণা পেয়েছি আমরা। পরবর্তী প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে।’ এবারের মেলায় অংশ নেওয়া ৩৮টি আবাসন প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৬টি আবাসন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে ১২০টি প্রকল্প নিয়ে এসেছে। এসব প্রকল্পে যেমন প্রস্তুত ফ্ল্যাট রয়েছে তেমনি ভবনের দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে এমন প্রকল্পও আছে। মাঝারি থেকে বিলাসবহুল সব ধরনের ফ্ল্যাট এনেছে মেলায় অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলো। আবাসন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সাতটি ভবন নির্মাণের উপকরণ এবং ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্টল ছিল মেলায়।
মেলায় জুমাইরাহ হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক কাজী আলী আকবর বলেন, মেলায় ক্রেতাদের চাহিদার অন্তত ৮০ ভাগ ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। আবার চলমান প্রকল্পের চেয়ে প্রস্তুত ফ্ল্যাট কেনার ঝোঁক ছিল বেশির ভাগ ক্রেতার।
মেলা শুরুর আগে রিহ্যাবের নেতারা জানিয়েছিলেন, চার দিনের মেলায় ৫০০ কোটি টাকার ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে গতকাল রিহ্যাবের সহসভাপতি ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, এবারের মেলায় অংশ নেওয়া ৩৮টি আবাসন প্রতিষ্ঠান ৩৭৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট ও প্লটের বিক্রয় আদেশ পেয়েছেন। দর্শনার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। গত বছর ১০ হাজার দর্শনার্থী মেলায় এলেও এবার ১২ হাজার দর্শনার্থী এসেছেন। পার্থক্য হলো, এবার দর্শনার্থীর চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা ছিল বেশি। তবে মেলায় অংশ নেওয়া আবাসন কোম্পানিগুলোর কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবার মেলার চার দিনের মধ্যে তিন দিন ছুটি থাকায় অনেকে চট্টগ্রামের বাইরে বেড়াতে গেছেন। একটানা ছুটি না হলে প্রকৃত ক্রেতার সংখ্যা আরও বেশি হতো।