উন্নত দেশগুলোর সাথে পিছিয়ে থাকলেও পর্যটন সেক্টরে আমাদের দেশ খুব একটা পিছিয়ে নেই। পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান। বছর পাঁচেক আগেও এ সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ লাখ ছিল। আর ২০০০ সালের দিকে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ৩ থেকে ৫ লাখ। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া আর প্রাচীন জনপদ হিসেবে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক সম্পদই রয়েছে এই দেশে। কিন্তু আশংকা হচ্ছে, বিগত বছরগূলোতে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় পর্যটন শিল্পে আমাদের দেশ সেভাবে এগিয়ে যায়নি। অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়াও এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ট্যুর অপারেটররা। তবে নানা সমস্যার মধ্যেও আশার কথা হলো, পর্যটন নিয়ে সরকারের রয়েছে নানাবিধ পরিকল্পনা। টেকনাফ নিয়ে যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তার নাম প্রিপারেশন অব ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান অব কক্সবাজার টাউন অ্যান্ড সি-বিচ আপ টু টেকনাফ। এতে রয়েছে পর্যটন কেন্দ্রিক কক্সবাজারকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা। খবরে প্রকাশ, পর্যটন খাতের উন্নয়নে নতুন সরকার আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।
পর্যটনকে বলা হয়ে থাকে Everybody’s business. এর সাথে জড়িত আছে হোটেল, রেস্তোরা, এয়ারলাইন্স, পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহন মালিক-শ্রমিক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি ও পেশার অসংখ্য মানুষ। যাদের আর্থিক উন্নতির প্রভাব পড়ে দেশজুড়ে। অন্যদিকে বর্তমানে পর্যটন ব্যবসায় এগিয়ে যাচ্ছে স্বল্পন্নোত দেশ থেকে শুরু করে বিশ্বের উন্নত দেশগুলিও। তাই এ খাতের উন্নয়ন যেকোন দেশের জনবান্ধব সরকারের কাছেই একটি চ্যালেঞ্জ বলে গণ্য।
আমাদের দেশে পর্যটন শিল্পের প্রসারে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন এবং বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড কাজ করছে। কিন্তু বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এদেশে সরকারিভাবে যেকোন কাজে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। বিশ্লেষকদের মতে, দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পর্যটন কেন্দ্র এবং এগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নে ১৭টি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যদি তাদের উন্নয়ন ভাবনায় পর্যটনকে সম্পৃক্ত করে, তাহলেই এ খাতের প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব। এখন পৃথিবীতে ৭৩০ কোটি জনসংখ্যার বিপরীতে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১২০ কোটি। ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হবে ৪৫০ কোটি। বোদ্ধা মহলের ধারণা, এসব পর্যটকের অর্ধেকই আসবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে। এই বাজার ধরতে হলে এখন থেকেই আমাদের ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনানুযায়ী। গড়ে তুলতে হবে পর্যটন বান্ধব অবকাঠামো ও পরিবেশ। তাহলেই এগিয়ে যাবে পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ।
সবাইকে ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা।