আসমা ইসলামঃ আখরোট নিয়ে আজ হিমালয় পাঠকদের সাথে একটু গালগল্প করব। আপনারা জানবেন আখরোটের নানাবিধ গুণের পরিচয়। ছোটবেলায় বইয়ে আখরোট শব্দটি পড়েছিলাম। কিন্তু বড় না হওয়া অব্দি চোখে দেখিনি। আসলে তখন চিনে বাদামকেই বাদাম নামে জানতাম আমরা। উৎসব পার্বণে মিষ্টান্ন রাঁধতে কাঠ বাদাম, কিংবা কাজু ও পেস্তা বাদাম বাসায় আসলেও তার দেখা আমরা ছোটরা পেতাম না। মা যক্ষের ধনের মতো কোথায় যেন লুকিয়ে রাখতেন। খাওয়ার সময় বলতো ওটার নামও নাকি বাদাম।
বড় বেলায় নিজে রান্না করতে গিয়ে তাহাদের সাথে আত্মীয়তা! রঙের ঢঙের রান্নায় প্রায়ই তাদের সহায়তার প্রয়োজন হয়। ওই বাদামের কথা বলছিলাম আর কি। যাহোক, আমি ভাবতাম আখরোট আখের মতোই লম্বাটে মিষ্টি টাইপের এক ধরনের বাদাম হবে। মাথামোটা ভুত আর কাকে বলে! থুরি পেত্নী! আমিই এ অপদার্থ। আরে গোলপাতা যেমন গোল নয়, আখরোটও আখের মতো লম্বা নয়। এটা বুঝলাম তেনাকে দেখিবার পরে। আর খেতে মিষ্টি তো নয়ই। তবে তার নাকি গুনের শেষ নাই। আসুন, চিনে নিই জনাব আখরোট সাহেবকে।
আখরোট এক প্রকার বাদাম জাতীয় ফল। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর, যাতে প্রচুর আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি আসিড আছে। এই ফলটি গোলাকার এবং ভেতরে একটি বীজ থাকে। পাকা ফলের বাইরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরের শক্ত খোলসযুক্ত বীজটি পাওয়া যায়; এই খোলসের ভেতরে থাকে দুইভাগে বিভক্ত বাদাম যাতে বাদামি রঙের আবরন থাকে যা এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈলাক্ত বীজকে বাতাসের অক্সিজেন থেকে রক্ষা করে ফলে তা খাওয়ার উপযোগী থাকে। আখরোট গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Juglans regia যা জুগল্যান্ডাসি গোত্রের পত্রপতনশীল বৃক্ষ। এই গাছ সাধারণতঃ ১০–৪০ মিটার (প্রায় ৩০–১৩০ ফুট) লম্বা হয়। এদের পালকের ন্যায় বহুধাবিভক্ত পাতা থাকে। পাতা সাধারণতঃ ২০০-৯০০ মিলিমিটার (৭–৩৫ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট।
সুস্বাস্থ্যের জন্য বাদামের উপকারিতা সবাই জানে। কিন্তু আখরোট বাদামের বিস্ময়কর গুণগুলো অনেকের অজানা। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, পেস্তা ও অন্যান্য বাদামের চেয়ে আখরোটের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। ওজন কমানো থেকে শুরু করে নানা অসুখের সমাধান আছে এতে। উচ্চ মাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাট থাকার কারণে আখরোট দেহের উপকারী কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং অপকারী কোলেস্টেরল কমিয়ে ফেলে। এটি স্ট্রোক এবং অন্যান্য হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
আখরোটে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বার্ধক্য, ক্যান্সার এবং স্নায়বিক রোগও প্রতিরোধ করে আখরোট। আখরোটের ওমেগা-৩ দেহের ত্বককে উজ্জ্বল করে। আদ্রতা ধরে রাখে এবং পুষ্টি যোগায়। ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কোষকে ধ্বংস করে আখরোট।
এই বাদামে আছে ভিটামিন বি এর উপাদান ফোলেট, রিবোফ্লাবিন এবং থায়ামিন। যা গর্ভবতী নারীদের জন্য আদর্শ খাবার। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ওষুধ হিসেবেও আখরোট খাওয়া যেতে পারে। আখরোট চুলের জন্য একটি ভালো খাবার। এতে আছে চুলকে শক্তিশালী করার উপাদান বায়োটিন। বায়োটিনের অভাবে চুল পড়ে এবং চুলের আগা ফেটে যায়। আখরোট চুল পড়া কমায় এবং চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।
আখরোট একটি নিম্ন কোলেস্টেরলযুক্ত সুস্বাদু খাবার, যা ওজন কমায়। তবে উচ্চ মাত্রার ক্যালরি থাকার কারণে ওজন কমানোর জন্য পরিমিত পরিমাণে আখরোট খাওয়া জরুরি।