আফসানা সুমী
টাওয়ার অব লন্ডনঃ লন্ডন শহরে টেমস নদীর উত্তর তীরে প্রায় হাজার বছরের পুরোনো এই ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ অবস্থিত। সম্রাট উইলিয়াম ১০৭০ খ্রীষ্টাব্দে যখন এই দুর্গ তৈরির আদেশ দিয়েছিলেন, তখন তিনি চেয়েছিলেন – এই দুর্গ হবে ক্ষমতার প্রতিভূ স্বরূপ এবং সুরক্ষার প্রথম ও প্রধান ক্ষেত্র। কিন্তু তাঁর দূরদর্শিতা যে এক হাজার বছর পরেও মানুষকে আকর্ষণ করবে তা বোধহয় সম্রাট উইলিয়ামের স্বপ্নেরও বাইরে ছিল। নর্মান রাজত্ব থেকে বর্তমানের দ্বিতীয় এলিজাবেথের সময় এর মধ্যে বহু জল বয়ে গেছে টেমস নদী দিয়ে, তেমনই প্রায় প্রতিটি রাজা বা রাণীর আদেশে এই দুর্গে কিছু না কিছু পরিবর্তন হয়েছে। মধ্যযুগীয় রাজাদের আমালে ‘টাওয়ার অফ লন্ডন’ ছিল একাধারে বাসস্থান এবং বহিঃশত্রু থেকে সুরক্ষার প্রথম ধাপ। টিউডর রাজত্বে এই দুর্গের ব্যবহার হয় মুলত অত্যাচার, শাস্তি, শিরোচ্ছেদের কেন্দ্র হিসেবে। বর্তমানে এখানে রাণীর রত্নসম্ভার সজত্নে রক্ষিত এবং ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে লন্ডনে আসা পর্যটকদের অবশ্য দ্রষ্টব্যের তালিকায় পড়ে। ১৯৮৮ সালে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে’র আখ্যা পাওয়া এই দুর্গে প্রতি বছর প্রায় ২লক্ষ কৌতুহলি মানুষের আনাগোনা।
ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামঃ এখাণে বিভিন্ন ধরণের চমৎকার প্রদর্শনী আপনাকে মুগ্ধ করবে। বিশেষ আকর্ষন হিসেবে আছে ডাউনোসোর গ্যালারি, যেখানে ডায়নোসোরের ফসিল, তার বিস্তারিত ইতিহাস আপনাকে নিয়ে যাবে ডায়নোসোর যাগে। আছে ম্যামালস গ্যালারি। বড় নীল তিমির প্রতিকৃতিটি কখনোই ভোলার নয়। এছাড়া ডারউইন সেন্টারে যাবেন অবশ্যই, যেখানে নিজে নিজে ঘুরে বেড়াতে পারবেন, দেখতে পারবেন বিজ্ঞানীরা কিভাবে কাজ করছেন।
বাকিংহাম প্যালেসঃ লন্ডনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাড়ি। রাজ পরিবারের গ্রীষ্মকালীন অবকাশের ফাঁকে বেড়িয়ে আসতে পারেন বাড়িটিতে। তবে অবশ্যই রানীদের ব্যাক্তিগত কোয়ার্টারে প্রবেশ করা যায় না। এখানে আপনি স্টেট কক্ষে প্রবেশ করতে পারবেন যেখানে রানী এবং রাজ পরিবারের সদস্যরা দেশের অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন, বিভিন্ন উৎসব এবং অফিসিয়াল কাজে যোগ দেন। রাজকীয় সংগ্রহের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বস্তু আপনার নজর কাড়বে। প্রাসাদটির ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আভিজাত্য আপনার ভ্রমণে যোগ করবে ভিন্ন মাত্রা।
মাদাম তুসো মিউজিয়াম
মাদাম তুসো মিউজিয়াম বিশ্বখ্যাত বরেণ্য ব্যাক্তিদের মোমের অবয়বের সংগ্রহশালা। এখানে বিভিন্ন দেশের সম্মানিত নেতাদের, সংগীতশিল্পী, বলিউড হলিউড এর তারকারা, বিভিন্ন সময়ের বিখ্যাত বিজ্ঞানী দার্শনিকদের মুর্তি দেখতে পাবেন। মিউজিয়ামে প্রবেশমুখে পাহারা রত দারোয়ানদের দেখলেই চমকে উঠবেন আপনি। মানুষ মনে হলেও এরা মূর্তি। এদের দেখেই বুঝে যাবেন ভেতরে কি বিস্ময় অপেক্ষা করছে আপনার জন্য।
ওয়েস্ট মিনিস্টার এবে
প্রাচীন এই চার্চ ১৬ টি রাজকীয় বিয়ের সাক্ষী। এটি বেশ ব্যস্ত জায়গা। ঐতিহাসিক কোন কিছু যেন আপনার চোখ এড়িয়ে না যায় সেজন্য সম্ভব হলে আগেই কিছু পড়াশোনা করে যান চার্চটি সম্পর্কে। যদি আপনি বই পড়ুয়া হন, তবে অবশ্যই ‘কবি কর্নার’ এ যাবেন। এখানে বিখ্যাত লেখক জিওফ্রি চসার, চার্লস ডিকেন্স এবং রুডিয়ার্ড কিপ্লিং এর কবর রয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশ রাজ পরিবারের কয়েক সদস্যের কবর আছে এখানে। ওয়েস্ট মিনিস্টারের এবে এর স্থাপত্য শৈলীও মুগ্ধ করবে আপনাকে।
বিগ বেনঃ বিগ বেন ওয়েস্ট মিনিস্টারে অবস্থিত। ডাক নাম গ্রেট বেল, এখানকার বিশাল ঘড়িটির জন্য এই নাম। তবে অফিসিয়ালি এটি এলিযাবেথ টাওয়ার নামে লিপিবদ্ধ। রানী দ্বিতীয় এলিযাবেথের নামে এই নামকরণ। এটি একটি চমৎকার স্থাপণা। বিগ বেনের ঘড়িটি যেন লন্ডনের ল্যান্ডমার্ক। তাই লন্ডনে গেলে অবশ্যই যাবেন এখানে। ভ্রমণে লন্ডন এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। এখানে আছে আভিজাত্য, আছে জ্ঞান, দর্শন, বিজ্ঞান। লন্ডনের সংস্কৃতি, এখানকার মানুষের আচার ব্যবহার-শিষ্ঠতাও মুগ্ধ করবে আপনাকে। পরিকল্পিত শহর লন্ডনের জীবনযাত্রাও এক উপভোগ্য ভ্রমণ উপাদান।
Related articles
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।
HimalaySep 20, 2023