এম এম রহমাতুল্লাহঃ অনেকদিন থেকেই ভাবছি পাতায়া ভ্রমণ নিয়ে লিখব। কারণ হিমালয় পাঠকদের মধ্যে অনেকেরই পাতায়ার ব্যাপারে আগ্রহের কথা জেনে অবাক হয়েছি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে যেতে সময় লাগে দুই ঘন্টা পনেরো মিনিট। আমার অবশ্য ঢাকা থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। কারণ মালয়েশিয়া থেকে থাইল্যান্ডে যাওয়া অনেক নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া থাকায় ওখান থেকে যাওয়াটাই ছিল আমার জন্য সহজ ও সাশ্রয়ী। যাহোক, ইমিগ্রেশন শেষ করে নীচ তলায় নামলাম। ইমিগ্রেশনে কোন ঝামেলা ছিলনা। এয়ারপোর্ট থেকে পাতায়ার দূরত্ব ১৫৭ কিলোমিটার। সুবর্ণভুমি এয়ারপোর্ট থেকে পাতায়া যেতে চাইলে নিচে নেমে পাতায়া বাসের টিকেট কাটবেন। সেখানে এক ঘণ্টা পরপরই পাতায়ার বাস পাওয়া যায়। যা অনেক আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই আপনি পাতায়া পৌঁছে যাবেন। আমরা একটি দারুণ আরামদায়ক চড়ে বসলাম। বলা যায়, ফাইভ স্টার বাস! এসি তো আছেই, এছাড়া একটা টয়লেটও আছে। ব্যাংকক থেকে পাতায়া সোজা রাস্তা। কোন জ্যাম নেই কোথাও। এই রাস্তাটা কখনো রাস্তা থাকে আবার কখনো ফ্লাইওভার হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের বাস ড্রাইভারের কোন তাড়া নেই। উনি হেলে-দুলে যাচ্ছেন। দীর্ঘ দুই ঘন্টা পরে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পাতায়া আসছি। আমাদের দেশের চালকরা এই রাস্তা পাইলে ৩০ মিনিটে নিয়ে আসতো! আমি বসছিলাম পিছনের সীটে। কিন্তু কখনো মনে হয়নি যে আমি পিছনের সীটে আছি। পথে প্রচুর ফ্লাইওভার দেখলাম। ডাবল, ত্রিপল লেনের ফ্লাইওভার। কালারফুল ফ্লাইওভার। মানে পীচটা লাল অথবা বেগুনি! পাতায়ায় গরম। অথচ ঢাকায় তীব্র শীত ছিল তখন। আমরা যখন পৌঁছাই, তখন সন্ধ্যা। বিমানে বাতাসের চাপে পাশের জনের কান বন্ধ হয়ে আছে। উনাকে বললাম, নাক-মুখ চাইপা কান দিয়া বাতাস ছাড়েন। কান খুইলা যাবে। সে কয়েকবার ট্রাই করে বলল, কান দিয়া তো বাতাস বাইর হয় না। কিন্তু নিচ দিয়া প্রচুর বাইর হইতাছে। আমি নাক চাইপা ধইরা গুগোল ম্যাপ খোললাম। বিদেশে সবচেয়ে বিশ্বস্ত পথ প্রদর্শক এটা। হোটেল থেকে বীচ ১৫ মিনিটের পায়ে হাটা পথ।
বিমানের পাশের সীটে আমার মতই একজন সলো ট্রাভেলার পেলাম, যে একা। আমি পাতায়ায় বাংলাদেশি ৭০০-৮০০/- টাকা দামের হোটেল খুঁজবো প্ল্যান করছিলাম। কিন্তু পাশের জন আগেই ৩৫০০/- টাকা দামের থ্রি স্টার হোটেল দেশ থেকেই বুকিং দিয়া গিয়েছিলেন। উনার সাথে আরও একজন ফ্রিতে যেহেতু রাখা যাবে আমি ৫০০ বাথ দেওয়ার চিন্তা করে ওনার সাথেই উঠে গেলাম। হোটেলে এসেই মনটা ফ্রেশ হয়ে গেলো। মনেই হচ্ছে না এতোদূর একা একা ঘুরতে চলে আসছি। বীচে যাওয়ার বিভিন্ন রাস্তা। আবার এইসব রাস্তাকে ঘিরেই হোটেল এবং মাসাজ (শরীর টেপাটিপি) সেন্টার। এরমধ্যে walking street নামের যেই রাস্তাটা আছে সেইটা পৃথিবীর অশ্লীলতম রাস্তা। দুইপাশে শুধুই ডিসকো সেন্টার। সেগুলার সামনে প্রায় কাপড়চোপড় ছাড়া মেয়েরা বসে/কাত হয়ে/দাঁড়িয়ে আছে।
পাতায়ার দর্শনার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় এরাবিয়ান নাদুসনুদুস ভাইদের। আরব হলেও মুসলিম জাতির কোন আদর্শই নেই এদের অধিকাংশের মাঝে। এরা আসে মূলত মৌজ-মাস্তি করতে। প্রকৃতির প্রতি এদের খুব একটা আকর্ষণ নেই। এরপরে শীতের অতিথি পাখির মতো আসে ইউরোপিয়ানরা। ওদের ওখানে প্রচণ্ড ঠান্ডা হওয়ার কারণে এরা থাই গরম হাওয়া খেতে আসে, থাকেও ১/২ মাস ব্যাপী। ইন্ডিয়ান ট্যুরিস্টরাও কম যায়না। এরা কথা কম বলে, কাজও কম করে; তবে দেখে বেশী। পাতায়াকে আপনি কিভাবে উপভোগ করবেন সেটা নির্ভর করবে আপনার আর্থিক সামর্থ্য আর মানসিকতার উপর। তবে পাতায়া নাম শুনলেই “ছিঃ” করে উঠার উপযুক্ত কোন কারণ নাই। এইখানে নির্মল আনন্দ নেওয়ার মতো উপকরণের অভাব নেই। থাইল্যান্ড জুড়ে কিছু খাবার পাওয়া যায় যার গন্ধ এবং চেহারা দেখলে আপনি আমার চেয়েও বেশী অসুস্থ হতে পারেন। বিচ্ছু (Scorpion), তেলাপোকা, ঝিনুক, গুবড়েপোকাসহ অদ্ভুত এবং ভয়ঙ্কর দর্শন সব পোকামাকড় ভাজা পাবেন প্রায় সব রাস্তায়। একেকটা থাই যেন একেকটা বেয়ার গ্রিলস। খাওয়ার জন্য আমরা খুঁজে খুঁজে বাঙালি বা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে যেতাম। একটা “আসল তরকারি” নিয়ে দুইভাগ করে ডাল/সবজী দিয়ে কাজ সারাতাম। পাতায়ায় পানির চেয়ে হিসুর দাম বেশী। এক বোতল পানি ২০ বাথ, অথচ হিসু করতে লাগে কোথাও কোথাও ৫০ বাথ পর্যন্ত।
রাস্তাঘাটে চলতে বাইক ভাড়া পাওয়া যায় চড়া দামে। এরচেয়ে আমাদের পুলিশের গাড়ির মতো দেখতে জীপগুলোর ভাড়া অনেক কম, যেগুলোকে ওরা টুকটুক বলে। যেখানেই যান ভাড়া ১০ বাথ মাত্র, সারা শহর ঘুরলেও। স্পীডও ভাল। পাতায়া কিংবা ব্যাংকক, সর্বত্র মেয়েদের আধিপত্য। বাসের কন্ডাকটর থেকে রেস্টুরেন্টের ওয়েটার, প্রায় সবাই মেয়ে। অনেকেই মনে করেন, এদের উন্নতির মূল হচ্ছে এই মেয়েরাই। ট্যুরিস্টদের আকর্ষণও এই মেয়েদেরকে ঘিরেই। তবে এখানে কারও একা আসা ঠিক না। নিজেকে এলিয়েন লাগবে। যদিও ভয়ের কোন কারণ নাই। ইন্ডিয়ার মতো দালাল নেই। আর বাঙালি হিসেবে আপনার দিকে “সাধারণত” কেউ ফিরেও তাকাবে না।
ঘুরতে চাইলে পাতায়ায় বীচ ছাড়াও কোরাল আইল্যান্ড আছে। এটা আরেকটা সুন্দর বীচ। এখানে গেলে দেখবেন “বিদেশি সিনেমা”র মতো সাদা মানুষেরা খালি গায়ে শুয়ে রোদ পোহাচ্ছে, একটু কালো হওয়ার জন্য। এদের দেখে মনে হয়, ফেয়ার এন্ড লাভলী ওয়ালারা সাদা হওয়ার ক্রিমের পাশাপাশি কালো হওয়ার ক্রিম বের করলে আরও বেশী দামে বিক্রি করতে পারত। আমরা কোরাল আইল্যান্ড গিয়েছিলাম একটা ৪০০ বাথের প্যাকেজে, স্পীডবোটে করে। স্পীডবোটের গতি রকেটের চেয়ে সামান্য কম হতে পারে। যাত্রাপথে আমাদের প্যারাসেইলিং করার সুযোগ দেওয়া হয়। প্যারাসেইলিং মানে আপনাকে একটা নরম দড়ি দিয়া বেঁধে প্যারাস্যুটের সাথে ঝুলিয়ে দিয়া একটা স্পীড বোটে করে সাগরের উপরে ঘুরাবে। ব্যাপারটা দারুণ রোমাঞ্চকর! তবে খরচ মাত্র ৫০০ বাথ।
এছাড়া আরেকটা জাহাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যেখান থেকে অক্সিজেন মাস্ক আর সিলিন্ডার কাধে নিয়ে গভীর সমুদ্রে সুইসাইড করার সুযোগ পাওয়া যায়! তবে সবাই ব্যর্থ হয় অবশ্য। এই ডাইভ দিতে খরচ হবে ১২০০ বাথ, বাংলাদেশী মুদ্রায় ৩০০০ টাকার মত। বেশী টাকা থাকলে আমি একবার ঝাপ দিতাম গভীর সমুদ্রে, ওরাই ছবি/ভিডিও করে রাখতো। গভীরে গিয়ে মাছ দেখা যায়, সাথে একজন স্বল্প পোশাক পড়া গাইডও থাকে। এরপরে কোরাল আইল্যান্ড। পানি এতোই স্বচ্ছ যে গলা সমান পানিতে নেমেও আন্ডারওয়ার্ল্ড দেখা যায়, এমনকি পায়ের পাতাও! জ্বর নিয়েই আমি নামছি, লাফিয়েছি, জয় করছি, জ্বর বাড়িয়েছি মাত্র।
কক্সবাজার থেকে এই বীচ অনেক বেশী সুন্দর। যারা বলে কক্সবাজার সেরা তারা শুধু শুধু দেশপ্রেম দেখান। কক্সবাজার এর বীচ সবচেয়ে বড়, কোরাল আইল্যান্ড চুনুপুটি। কিন্তু মাদী হাতি আর বাচ্চা হরিন তো এক না! এর পানি হাতে নিলেও মনে হবে নীল মেশানো আছে। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের মতো হুমকি ধমকি এখানে পাবেন না। কিন্তু যথেষ্ট ভদ্রভাবে ঢেউ আসবে, ভালো লাগবে। তবে আমাদের কক্সবাজার এরচেয়ে অনেক সুন্দর করে রাখা যেতো! কোরাল আইল্যান্ড থেকে ফেরার পরে দেখি পাতায়া বিচে ছবি তোলার সুযোগ রয়েছে। পাতায়ায় আরও আছে “টাইগার জু”। বাঘের গলায় হাত দিয়ে ছবি তুলতে পারবেন। তাছাড়া আছে মজার Repleys Believe it or Not জাদুঘর। আরও আছে পাতায়া “ফ্লোটিং মার্কেট”! ভাসমান এসব মার্কেটে পাবেন ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি। দেখার মতো জায়গার অভাব নেই পাতায়ায়। গুগল করে সেরা স্থানগুলো আগেই বাছাই করে রাখতে পারেন। তবে ফুকেট ও ক্রাবি ঘুরে আসতে পারেন খুব সহজেই।
ফুকেটঃ পাতায়ার মতই আরেকটি রাজ্য ফুকেট। এটাকেও অনেকে হানিমুন রাজ্য বলে। এখানে রয়েছে বাংলা ওয়ার্কিং স্ট্রিট। যেখানেপাতায়ার মত ট্যুরিস্টদের খুশী করার জন্য অনেক কিছুই মেলে। তবে ফুকেটে রয়েছে সুন্দর কয়েকটি বিচ। ফুকেট একটা সুন্দরতম দ্বীপ। যার ভিতরে আছে- খাড়ি, উপসাগর, পাম ঘেরা সাদা সমুদ্র সৈকত, দ্বীপঘন সাগর, বন্ধুভাবাপন্ন মানুষ, সুন্দর থাকার ব্যবস্থা, দারুন সামুদ্রিক খাবার, রাজকীয় পাহাড়, আয়েশি জলপ্রপাত এবং অনেক সামুদ্রিক পার্ক। এক কথায় অবকাশ যাপনের মধুর স্মৃতিসম্ভার তৈরিতে ফুকেটের মতো মনোরম জায়গা আর হয় না। ব্যাংকক হয়ে ফুকেট যেতে চাইলে তাহলে বিমানে বিমানে যাওয়াই ভাল। কারণ, বাসে যেতে অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন।
থাইল্যান্ডের ফুকেট দ্বীপের পশ্চিম উপকূলবর্তী এক জনপ্রিয় অবকাশ যাপনের গন্তব্যস্থল পাটোং সৈকত। সূর্য, বালি, সমুদ্র, এবং প্রলোভনসঙ্কুল রাত্রির একটি সন্মোহনী মিশ্রণ। এখানে সারা বিশ্বব্যাপী পৃষ্ঠপোষক রয়েছে। অতি উন্নত এই সৈকত রিসোর্ট শহরটিতে প্রায় ২ মাইল দীর্ঘ বিস্তৃত সাদা বালুকাময় সমুদ্র-সৈকত ও সন্নিহিত প্রচুর রেস্তোঁরা, হোটেল এবং বার রয়েছে। এছাড়া পাটোং-এ বেশ কিছু শ্রেষ্ঠ নিশি-সরণী আছে, যেগুলি তাদের নিবেদিত অগোছালো অভিলাষার জন্য দারুণ পরিচিত। যেমন প্যারাডাইস কমপ্লেক্স ও বাংলা রোড। বর্তমানে শহরটিতে একটি বৃহৎ শপিং মল এবং প্রচুর দোকান যুক্ত হয়েছে; যেগুলিতে পোশাক, আনুষঙ্গিক সামগ্রী ও হস্তশিল্প বিক্রিত হয়। পাটোং-এর সৈকত এলাকা নিজেই একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় আকর্ষণ। এটি সাঁতার, রৌদ্রস্নান ও জেট স্কিং ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধার জন্য বিখ্যাত। থাইল্যান্ড ভ্রমণে যাওয়ার পূর্বে নীচে উল্লিখিত পাটোং সৈকতের কাছাকাছি অন্যান্য পরিদর্শনমূলক স্থানগুলি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন। এর আশেপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
ওয়াট সিউয়ান খিরি ওং: সাধারণভাবে সুপরিচিত ওয়াট পাটোং হল একটি থাই বৌদ্ধ মন্দির। এটি পাটোং পাহাড়ের পাদদেশে ফারাবারামি ও ফিশিট কারানি রোডের সংযোগস্থলে অবস্থিত। মন্দিরটিতে নকশায়িত ঐতিহ্য ভবন ও প্রাথর্না সভার সঙ্গে গৌতম বুদ্ধের বিভিন্ন মূর্তিসহ একটি পবিত্র বাতাবরণ রয়েছে। মন্দিরে বসবাসকারী বহু সন্ন্যাসী রয়েছেন, যারা প্রকৃতিবাদী জীবনযাপন করেন।
টাইগার কিংডমঃ এটি এমন একটি স্থান যেখানে একজন ব্যাক্তি একই কক্ষে একটি বাঘের সঙ্গে নিরাপদ হতে পারেন এবং এটিই হল টাইগার কিংডম বা বাঘের রাজত্ব। টাইগার কিংডম-এর ধারণাটি বেশ সাধারণ। তারা জন্ম থেকেই মানুষের কাছাকাছি থাকে এবং তাদেরকে লালন করার অনুমতিও মঞ্জুর রয়েছে। মানুষেরা তাদের সঙ্গে ছবিও নিতে পারেন। যদিও সেখানে বেশ কিছু সংখ্যক নিয়ম-শৃঙ্খলা রয়েছে যা নথিপত্রে স্বাক্ষর ও অনুসরণ আবশ্যক এবং যা চুড়ান্ত সাক্ষাতের পূর্বে স্বাক্ষর করা বাঞ্চনীয়। টাইগার কিংডম বা বাঘের রাজত্ব, পাটোং গো-কার্ট স্পিডওয়ের নিকটে অবস্থিত।
পাটোং বক্সিং স্টেডিয়ামঃ আরেকটি পর্যটন প্রিয় হল সাই নামইয়েন রোডে অবস্থিত ৩৫০ আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়াম যেখানে মুয়ে থাই বক্সিং ম্যাচ প্রদর্শিত হয়। এই দ্বন্দযুদ্ধ স্টেডিয়ামের প্রশিক্ষণ শাখায় যারা অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক সেই সমস্ত অপেশাদার ও পেশাগত প্রশিক্ষণকারীদের মধ্যে হয়। আসনের সঠিক অবস্থানের উপর ভিত্তি করে টিকিট বিক্রীত হয়; রঙ্গভূমির যত কাছাকাছি আসন হবে, টিকিটের মূল্যও তত উচ্চ হবে। এখানে একটি বিশাল স্ক্রিন্ বা পর্দা রয়েছে, যা পিছনে আসন গ্রহণকারীদের এই ক্রীড়া-প্রতিযোগিতা প্রত্যক্ষীকরণ সহজ করে তোলে।
সমূদ্র-সৈকত ফূকেট দ্বীপের পশ্চিম উপকূলবর্তী দীর্ঘ প্রসারণে পাটোং সৈকত ছাড়াও অন্য অনেক সৈকত রয়েছে। পর্যটকরা একটি স্বল্প-ভ্রমণে সান্নিধ্যতম কয়েকটি স্থানে সফরের আনন্দ নিতে পারেন। যেমনঃ কালিম, ফ্রিডম ও প্যারাডাইস। সাধারণত ভিড় থেকে অব্যাহতি পেতে এগুলি উল্লেখযোগ্য। পাটোং-এর উত্তরে কালিম সৈকত হল ভ্রমণ অন্বেষণকারী ও পাহাড় ভ্রমণকারীদের জন্য একটি জনপ্রিয় পরিভ্রমণ স্থান। এর দক্ষিণ প্রান্তে ফ্রিডম সৈকত পাটোং উপসাগর থেকে প্রায় ৬৫০ ফুট ওপরে অবস্থিত এবং এখানে শ্বেত বালুকা, দীর্ঘ-লাঙ্গলবিশিষ্ট নৌকা ও সানবাথ বা রৌদ্রস্নানের জন্য অনেক জায়গা রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমে আচ্ছাদিত প্যারাডাইস সৈকত হল প্রায় ৪৯০ ফুটের এক অত্যাশ্চর্য্য ও ক্ষুদ্র টুকরো, যা প্রবালদ্বীপ এবং পাম ও ক্রান্তীয় কাজুবাদাম গাছের ঘন আবরণে আচ্ছাদিত।
ফুকেট মাইনিং মিউজিয়ামঃ কাঠুতে অবস্থিত এই যাদুঘর বা মিউজিয়ামটি, দ্বীপের টিন-খননের ঐতিহ্য থেকে শুরু করে চিত্রপট এবং গুহা পুর্নস্থাপণের মূর্তি, খনন, খনি-শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জীবনযাপনের পদ্ধতি প্রদর্শিত আছে।
কাঠু জলপ্রপাতঃ যে সমস্ত পর্যটকরা জুন ও নভেম্বরের মাঝামাঝি কোনও সময়ে পাটোং পরিদর্শনে যাওয়ার ইচ্ছা রাখেন, তবে কাঠু জলপ্রপাত অবশ্যই দর্শন করুন। এর কারণ হল এর প্রকৃত সৌন্দর্য কেবলমাত্র বর্ষাকালেই পরিলক্ষিত হয়। এই অসাধারণ জলপ্রপাতটি এক ঘন সবুজাভ তৃণশ্যামল দ্বারা পরিবেষ্টিত। পুলের মধ্যে সংগৃহীত বৃষ্টির পানি, এখানে ডুব দেওয়ার জন্য আদর্শ। এটি পাটোং সৈকত থেকে প্রায় ৫ মাইল দূরে অবস্থিত।
ক্রাভিঃ এক কথায় অসাধারণ, নান্দনিক, পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন একটি জায়গা ক্রাভি। সবচেয়ে বড় যে দিকটা, তা হল- ক্রাবিতে আপনি পাবেন মুসলমানের সংস্পর্শ; রয়েছে মসজিদ। এখান থেকে আপনি ভ্রমন করতে পারেন বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত এবং এই এলাকার বিভিন্ন আইল্যান্ড। এসবের মধ্যে অন্যতম হল- ফি ফি আইল্যান্ডের ভুবন ভোলানো রুপ। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আন্দামান সমুদ্রে স্পিডবোটে চলার দুঃসাহসী অভিজ্ঞতা লাভের পাশাপাশি হরেক রকমের ফলের রস উপভোগ করতে পারবেন ক্রাবিতে। যা আপনার মনকে করবে পুলকিত। এছাড়াও ক্রাবি লেকে উপভোগ করা যাবে প্যাডেল বোট চালানোর অভিজ্ঞতা। ছোট প্যাডেল বোটে করে ক্রাবি লেকে ভেসে বেড়ানোর সময় হালকা শীতল হাওয়া আপনাকে স্পর্শ করবে। সামান্য ঢেউয়ে চলতে চলতে দেখবেন বণ্য প্রাণী বানর লেকের ধারে খাবারের খোঁজে সদলবলে বের হয়ে চেঁচামেচি করছে। অন্যদিকে নৌকা চলছে খুব ধীরে গতিতে ঢেউয়ের তালে। ক্রাবিতে থাকা এবং খাবারের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। আমরা মুসলিমরা সাধারণত হালাল খাবারের সন্ধান করি। আর এই খাবারের জন্য এখানে রয়েছে অনেক হোটেল। আর মুসলিম জানতে পারলে ওরা আপনাকে সালাম দেবে। তারা বুঝতে পারবে, আপনি হালাল খাবার চাইছেন। তবে অবশ্যই দরদাম করে নেবেন, না হলে ঠকতে পারেন।