বাংলাদেশ ক্রিকেটের বিভীষিকাময় ২০১৪ সালের শেষদিকে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজাকে। এর আগে টানা হারতে থাকা টাইগাররা তার স্পর্শে অনেকটাই বদলে যায়। একেরপর এক সাফল্যে বিশ্ব দরবারে নিজেদের অন্যভাবে চেনায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
যার নেতৃত্বে বদলে যায় বাংলাদেশ, সেই মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার অধিনায়ক হিসেবে আজ শেষ ম্যাচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডে ফরম্যাটে ৪৯ বার জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। এই ম্যাচ জিতলে টাইগার দলপতি হিসেবে জয়ের ফিফটি পূর্ণ করেই বিদায় নেবেন তিনি।
তবে টানা প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ওয়ানডে সংস্করণে নেতৃত্ব দেয়া মাশরাফীর ঝুলিতে আছে আরো অনেক অর্জন। তার নেতৃত্বেই পাকিস্তানকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। আছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের সুখস্মৃতি।
৩৬ বছর বয়সী এই ডানহাতি পেসারের অধীনে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ও চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। তার হাত ধরেই এসেছে এসেছে বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর থেকেই ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচেই নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক।
একনজরে দেখে নেয়া যাক অধিনায়ক মাশরাফীর বিভিন্ন পরিসংখ্যান:
এ পর্যন্ত ৮৭টি ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। এর মাঝে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ৪৯ বার, হার ৩৬ ম্যাচে। সাফল্যের হার ৫৬.৩২%।
২০১৪ সাল থেকে নড়াইল এক্সপ্রেসের অধীনে ১৫টি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মাঝে ১০টি সিরিজই জিতেছে টাইগাররা। চারটি হার ও একটি সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ।
মাশরাফীর সময়ে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলেছে তিনটি। এর মাঝে গত বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। এর আগে বহুজাতিক কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতেনি টাইগাররা। ২০১৮ এশিয়া কাপে তার অধীনেই রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে ক্যাপ্টেন মাশরাফী নেমেছেন ৫৮ ইনিংসে। ১১.৭৯ গড় ও ৯০.৫৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৫৭৮ রান। এ সময়ে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ৪৪ রানের।
নড়াইল এক্সপ্রেসের মূল কাজ ছিল বোলিং। দলপতি হিসেবে ৮৭ ইনিংসে ১০১ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। প্রতি উইকেটের পিছে খরচ করেছেন প্রায় ৩৬ রান। ইকোনমি রেট আধুনিক যুগের ক্রিকেট হিসেবে চমৎকার (৫.১২)। সেরা বোলিং ফিগার ছিল ২৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট।
অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ হলেও ক্যারিয়ারের ইতির ঘোষণা দেননি ম্যাশ। খেলে যেতে চান দলের এক সাধারণ সদস্য হয়ে। অগণিত টাইগার ফ্যানের প্রত্যাশা, আরো বেশি দিন তাকে দেখবেন জাতীয় দলের জার্সিতে। চিত্রা পাড়ের ছেলেটি কলার উঁচু করে দৌড়ে এসে বল ছুঁড়বে, শিকার করবে উইকেট, এমন মুহূর্ত আরো অনেকদিন দেখতে চায় তার ভক্তকূল।