হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বোর্ড-ইন ব্রিজ থেকে নামলে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কক্ষের দূরত্ব মাত্র ২০০ গজ। সোনার চালান নিয়ে এটুকু দূরত্ব পার হলেই মিলবে ২০ হাজার টাকা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে তা-ই করতে যাচ্ছিলেন জনাথন মুক্তি বারিকদার (৩৪)। সঙ্গে ছিল চার কেজি সোনা। কিন্তু নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে এ চালান গছানোর আগেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
বিমানবন্দর এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপস অ্যান্ড মিডিয়া) মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, জনাথন মুক্তি বারিকদার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তাঁর কাছ থেকে পাওয়া সোনার বাজারমূল্য ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। গ্রেপ্তারের পর জনাথন মুক্তি বারিকদার নিজেকে সোনার চালানটির বাহক হিসেবে দাবি করেন। চালানটি উড়োজাহাজ থেকে বের করে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিলে তিনি ২০ হাজার টাকা পেতেন।
এপিবিএন সূত্রে জানা যায়, দুবাই থেকে আজ সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে ঢাকায় আসে এমিরেটসের ফ্লাইট। ইকে ৫৮২ নম্বর এই ফ্লাইটে পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে যান জনাথন মুক্তি বারিকদার। বিমানবন্দরের ৭ নম্বর বোর্ড-ইন ব্রিজে এমিরেটসের এই উড়োজাহাজ থেকে যাত্রী নামানোর জন্য ডকিং করার পর জনাথন ভেতরে ঢোকেন। ঘণ্টাখানেক পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে নেমে আসেন তিনি। এ সময় উড়োজাহাজটি নিরাপত্তায় থাকা এপিবিএনের সদস্যরা জনাথনকে তল্লাশি করতে চান। কিন্তু তিনি এপিবিএনের সদস্যদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু করেন। সেখানে তল্লাশি করতে না পেরে জনাথনকে বিমানবন্দর এপিবিএন কার্যালয়ে এনে তল্লাশি করা হয়। তল্লাশিতে তাঁর পরনে দুই জুতার শুকতলায় ১৬টি করে মোট ৩২টি সোনার বার পাওয়া যায়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জনাথনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে এপিবিএন জানায়, মামুন নামে তাঁর সহকর্মী তাঁকে এমিরেটসের উড়োজাহাজের ভেতরই সোনার এই চালান হস্তান্তর করেন। এরপর জনাথন ওই উড়োজাহাজের টয়লেটে গিয়ে তাঁর পরনে জুতোর শুকতলায় সুকৌশলে কালো স্কচটেপে মোড়ানো সোনার চালানটি লুকিয়ে রাখেন।
বোর্ড-ইন ব্রিজ থেকে বাইরে এসে এই চালান বিমানের ক্লিনিং ইনচার্জ আতিককে হস্তান্তর করার কথা ছিল জনাথনের। ক্লিনারদের কক্ষে সোনার চালানটি পৌঁছে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি ২০ হাজার টাকা পেতেন। জনাথনের বাড়ি খুলনার খালিশপুর উপজেলার বড় বয়রা গ্রামে। তিনি ২০১৪ সাল থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে বিমানে যোগ দেন। এর আগেও একাধিকবার এভাবে সোনা চোরাচালান করেছেন। জনাথনের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের চোরাচালানবিরোধী ধারায় মামলা হয়েছে। তবে বিমানের ক্লিনিং ইনচার্জ আতিকসহ এ ঘটনায় জড়িত অন্য ব্যক্তিদের ধরতে বিমানবন্দরে অভিযান চালানো হয়েছে। কৌশলে তাঁরা পালিয়ে গেছেন। আতিককে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।