অপরাধ বিজ্ঞানে ভাঙা জানালা তত্ত্ব (Broken Window Theory) নামে একটা বিষয় আছে।
মনে করুন আপনার একটা বাড়ি আছে আর ঐ বাড়িতে অনেকগুলো জানালা আছে। একদিন ঐ বাড়ির একটা জানালা ভেঙে একজন চোর কিছু জিনিস চুরি করে নিয়ে গেলো। আপনি ঐ ভাঙা জানালা আর মেরামত না করে উক্ত অবস্থায় রেখে দিলেন, এই রেখে দেওয়াটাকেই
সম্ভাব্য চোরেরা এই বাড়ির প্রতি আপনার অবহেলা হিসেবে দেখবে এবং তাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি খাটিয়ে ভেবে নিবে এই উদাসীন মালিকের বাড়িতে চুরি করা কম বিপজ্জনক। আর এমনিভাবে ভালো জানালাগুলোও আর ভালো থাকবে না। (One unrepaired broken window is a signal that no one cares, and so breaking more windows costs nothing).
তেমনিভাবে শৃঙ্খল এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র যদি ছোটখাটো অপরাধকে খুব গুরুত্বের সাথে নেয় তাহলে সম্ভাব্য অপরাধীদের কাছে এটা একটা সংকেত হিসেবে কাজ করে যে এই প্রশাসন অনেক সচেতন সুতরাং এখানে সামান্য অপরাধ করেও ছাড় পাওয়া যাবেনা। এর বিপরীতটা হওয়া মানেই অপরাধীদের কাছে ইতিবাচক সংকেত যাওয়া যে প্রশাসন এখানে উদাসীন সুতরাং এখানে অপরাধ করাটা তুলনামূলক নিরাপদ।
একজন একবার ছিনতাই করলো আপনি কিছু মনে করলেন না কিংবা আপনার পুলিশ তাকে ধরেও ৫০০ টাকা সেলামি নিয়ে ছেড়ে দিলো। দুইদিন পরে সে ডাকাতি করবে, তারপর চাঁদাবাজি করবে মানুষ হত্যা করবে। এই বিষয়টা অন্যান্য সম্ভাব্য ছিনতাইকারীরাও ইতিবাচক সংকেত হিসেবে নিয়ে ছিনতাই শুরু করবে।
এখানে নারী উত্যক্তকরণের ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক স্বাভাবিক বিষয়, কোন আটক কিংবা ট্রায়াল হয়না। এখানে একজন দরিদ্র সাধারণ নারীকে কোন ক্ষমতাসীন লোকজন ধর্ষণ করলে কোন বিচার হয়না প্রশাসন টাকা খেয়ে ছেড়ে দেয়, এরকম ঘটনা শতশত। এসব দায়মুক্তি অপরাধকে বাড়িয়ে তোলে, অপরাধীকে অপরাধ করতে পজিটিভ সিগনাল দেয়।
তারপরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর কেউ ধর্ষণের শিকার হয়, তারপর মিডিয়া এবং জনতা ফাঁসি এবং ক্রসফায়ার চেয়ে ফুঁসে ওঠে। তারপর জনরোষের কারণে কেউ ক্রসফায়ারের বলি হয়, একটা অপরাধের বিচার করতে রাষ্ট্র নিজেই একটা অপরাধ করে বসে। ঢাকার বুকে একজন সিরিয়াল ধর্ষক ঘুরে বেড়ায় প্রশাসন ওসবের খবর জানেনা। জানালা ভাঙা রেখে আরও জানালা ভাঙার জন্য আহ্বান জানাতে থাকে আমাদের উদাসীন প্রশাসন। এদিকে মৃত্যুদণ্ড আর ক্রসফায়ার অপরাধ কমাবে ধারণায় বিশ্বাসী জনতা আশায় বুক বেধে বসে থাকে।