মনপুরা ভোলা জেলার বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশে অবস্থিত। দ্বীপ এলাকায় প্রায় ৩৭৩১৯ কি.মি. এবং জনসংখ্যাপ্রায়৫০,০০০। মেঘনার কোলে লালিত চর্তুদিকে মেঘনা নদীবেষ্টিত সবুজ শ্যামল ঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা। সু বিশাল নদী-নালা ,চতুর্দিকে বেড়ীবাঁধ, বিভিন্ন ধরনের ধানের ক্ষেত, বিশাল ম্যানগ্রোভ প্রজাতির গাছের বাগনে সমৃদ্ব।এই এলাকায় সম্পূর্ণভাবে ভ্রমণকারীরা জন্য সৌন্দর্য পূর্ণ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যতে ভরপুর এই দ্বীপটির অবস্থান একটু দুর্গম হলেও আপনি যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিন্ন রূপ দেখতে এবং তাঁর স্বাদ নিতে চান তবে এই দ্বীপে বেড়াতে আসতে পারেন।এখানে সকাল বেলার সুর্য যেমন হাঁসতে হাঁসতে পুর্বদিকে ডিমের লাল কুসুমের মত উদিত হতে দেখা যায়, তেমনি বিকেল বেলাতেও আকাশের সিঁড়ি বেয়ে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে পশ্চিম আকাশে মুখ লুকায়। মনপুরাতে এসেই কেবল সুর্যোদয় ও সুর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করা যায়।
* ঢাকা থেকে কিভাবে যাওয়া যায়?
* লঞ্চে গেলে কিভাবে ? লঞ্চ ছাড়ার ডিটেইল সময়সূচি
* যাতায়াত ভাড়া কেমন পরবে?
* কোন ঋতুতে গেলে কি কি সুবিধা/অসুবিধা?
* রাতে থাকার ব্যবস্থা কোথায়,কিভাবে, খরচ?
* খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আর খরচ?
* দর্শনীয় স্থান গুলোর লিস্ট
* ক্যাম্পিং এর সুবিধা আছে কি নাই?
* কি কি জিনিস সাথে নেয়া প্রয়োজন?
* টিপস
### এ ছাড়া আর যা যা প্রয়োজনীয় ইনফো আপনার কাছে আছে প্লিজ কমেন্ট করুন। সেই অনুযায়ী ডক টা আপডেট করা হবে। এর বাইরে কোন প্রশ্ন থাকলে শেয়ার করুন। সবার তাতে উপকার হবে। ধন্যবাদ।
ঢাকা থেকে কিভাবে যাওয়া যায়
ঢাকার সদরঘাট থেকে যেতে হবে – ঢাকা থেকে মনপুরা যাওয়ার জন্য প্রতিদিন ২ টা লঞ্চ বরাদ্দ রয়েছে – ৪ টা লঞ্চ রোটেশন পদ্ধতিতে ডেইলি ২ টা করে ছেড়ে যায়, প্রতিদিন বিকাল ৫.৩০ মিনিটও সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিট, লঞ্চ ১ মিনিট ও লেট করে না, বি কেয়ার ফুল।
বিকাল ৫.৩০ টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় “এম.ভি ফারহান – ৩” অথবা “এম.ভি ফারহান – ৪” এর মধ্যে যে কোন ১ টা। দুইটাই লাক্সারিয়াস লঞ্চ । এদের মধ্যে প্রতিদিন ১টা করে লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশ্যে সদরঘাট থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টায় ছেড়ে যায়। এদের মধ্যে প্রতিদিন ১টা করে লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশ্যে সদরঘাট থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টায় ছেড়ে যায়। সেটি কালিগঞ্জ – বিশ্বরোড – দৌলত খাঁ – মির্জাপুর – শরাশগঞ্জ – ভোলা তজুমুদ্দিন হয়ে মনপুরা ঘাটে পৌঁছবে পরদিন সকাল ৬-৭ টায়। (ঢাকায় ফেরত যাবার লঞ্চ ছাড়ে দুপুর ১২ টায়)। আপনাকে নামতে হবে মনপুরা ঘাট।
এম.ভি ফারহান ৩- ০১৭৮৫৬৩০৩৬৬।
এম.ভি ফারহান ৪- ০১৭৮৫৬৩০৩৬৮, ০১৭৮৫৬৩০৩৬৯,০১৭৮৫৬৩০৩৭০।
দুইটা একি মালিকের লঞ্চ। যে কোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
লঞ্চে গেলে ভাড়া পড়বে- ডেকে ৩৫০ টাকা। কেবিন সিঙ্গেল- ১২০০ টাকা, ডাবল-২২০০ টাকা, ভিআইপি – ভাড়া জানি না —- হাতিয়া এর তমুরদ্দী ঘাট পর্যন্ত।
অক্টোবর থেকে এপ্রিল ১৫ তারিখ এখনকার আবহাওয়া অনুযায়ী মনপুরা দ্বীপ ভ্রমনের জন্য বেস্ট। অন্য সময় বর্ষা থাকে ও ঝড়ের কারনে মেঘনা নদী ও সাগর উত্তাল থাকে।শীত কালে গেলে রাস্তাঘাট সব ভালো পাবেন, খালের মধ্যে পানি কম পাবেন, ফলে বনের মধ্যে যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন, বিকেলে হরিণের পাল দেখতে পারবেন।
থাকার ব্যবস্থা :
হোটেল / বাংলো তে থাকতে পারেন (সাধারন মান)।
হোটেল দ্বীপ : ০১৭১-৩৯৬৫১০৬
প্রেস ক্লাব গেষ্ট হাউস : ০১৯১-৩৯২৭৭০৬
হোটেল আইল্যান্ডঃ সদর রোড, হাজিরহাট বাজার মনপুরা, ভোলা – ০১৭১১৭০১২৮৬
কারিতাস হোটেলঃ হাজিরহাট বাজারের দক্ষিন পাশে মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের সাথে = অবস্থিত। ০১৯২৩৩৭৬৩৬৫
পানি উন্নয়ন বোর্ড ডাকবাংলোঃ উপজেলা সদরের হাজিরহাট বাজারের দক্ষিন পাশ্বে আবাসিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে অবস্থিত – ০১৯২৩৩৭৬৩৬৫
জেলা পরিষদ ডাকবাংলোঃ উপজেলা সদরের বাঁধের হাটের সরকারী দিঘীর পাশে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোটি অবস্থিত। : ০১৯৩৪১৭৫৩৬৯
এছাড়া চোধুরী সাহেবের বাংলো সহ আরো অনেক থাকার বোর্ডিং বা হোটেল আছে। দরদাম করে থাকতে পারবেন।
খাবার দাবার :
খাবার দাবার বেশি একটা ভালো পাবেন, সামুদ্রিক মাছ, মাংস, মোটা চালের ভাত, রুটি সব ই পাবেন,তবে প্রি – অর্ডার করে রাখা ভালো। এখানে খাবারের রীতিমত আইটেম ছাড়াও বিশেষ বিশেষ কিছু খাবার না খেলে না মহিষের কাচা দধি, টাটকা ইলিশ, বড় কই, মাগুর, কোরাল, বোয়াল ও গলদা চিংড়ি। মেঘনা নদী থেকে ধরে আনা টাটকা ইলিশ ও চর থেকে আনা কাঁচা দুধের স্বাদই আলাদা।
দর্শনীয় স্থান :
১. ৪নং দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়ন ম্যানগ্রোভ বন : উপজেলা সদর থেকে ২০কি.মি. দক্ষিনে মেঘনা নদীর কোল ঘেষে চর পিয়াল আর চর পাতালিয়া নামে দুটি চর এর ভিতরের বাগানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এর আশে পাশে বিকেল বেলায় ঘুরতে গেলে হরিনের পাল দেখা যায়। এক কথায় এটি হরিনের অভয় বিচরণ ভুমি। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে ৫ কিমি. দক্ষিনে পঁচা কোড়ালিয়া বাজার সংলগ্ন ওয়াপদা বেড়ীবাধের কাছে গেলেই দেখা যায়।
২. মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন : হাজিরহাট সদর থেকে পায়ে হেঁটে মাত্র ৫ মিনিটে ল্যান্ডিং স্টেশনে যাওয়া যায়।
মনপুরার প্রধান শহরের প্রায় ৫ শত গজ পশ্চিমে মেঘনা নদীর কিনারায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয় ল্যান্ডিং স্টেশনটি। ২০০৫ সালের শেষের দিকে বরিশালস্থ মেসার্স রুপালী বিল্ডার্স ল্যান্ডিং স্টেশনের কাজ শুরু করে। যাত্রীবাহী সী-ট্রাক সহ অন্যান্য লঞ্চ-নোঙ্গরের পাশাপাশি যাত্রীদের উঠানামায় দারুন সুবিধা হবে ভেবে ল্যান্ডিং ষ্টেশনটি নির্মিত হয়। মেঘনার প্রচন্ড স্রোতের তীব্রতায় ল্যান্ডিং স্টেশনের সামনের ৪টি পিলার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। একপর্যায়ে পিলারগুলো নদী থেকে উঠিয়ে পুনরায় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ শুরু করে ঠিকাদার। পরবর্তীতে কাজও সম্পন্ন করা হয়। সী-ট্রাকসহ অন্যান্য যাত্রীবাহী লঞ্চ , ট্রলার পিলারের সাথে বেধে নঙ্গর করে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এটি নির্মিত হলেও বর্তমানে সে ব্যাপারে কোন কাজে আসছেনা।
৩. উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন ক্রসডেম এলাকা : উপজেলা সদর থেকে ৫ কিমি: দক্ষিনে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন। অত্র ইউনিয়নের শুরুতেই ক্রসডেম এলাকা । এখানেই হরিনের বিচরণ। এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়।রিক্সা , মোটর সাইকেল,দিয়ে যাওয়া যায়। মনপুরা উপজেলার একটি পর্যটন এলাকা । ক্রসডেম এলাকা। এখানে প্রায় সময় হরিন দেখা যায়। এবং প্রতিদিন সূর্যাস্ত দেখা যায়। মনপুরাবাসী একদিকে নিরাশ হলেও অন্যদিকে বিকালের আড্ডায় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন ল্যান্ডিং স্টেশনকে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী বিনোদন কেনদ্র হিসেবে এখানে ঘুড়তে আসে। পড়ন্ত বিকেলে এখানকার আড্ডায় পর্যটনের একটি উপাদান হিসেবে বেছে নিয়েছেন সূর্য অস্ত যাওয়ার অপরুপ দৃশ্য। এখানকার হাজার হাজার মানুষের মনকে প্রফুল্ল করতে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এই স্থাপনাটি ।
৪. চৌধুরী প্রজেক্ট : মনপুরা উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৭ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে রিক্স্রা কিংবা মোটরসাইকেল যোগে চৌধুরী প্রজেক্টে যাওয়া যায়।
এছাড়া শীত মৌসুমে এর চিত্র পাল্টে যায়। সাইবেরিয়া থেকে ছুটে আসা অতিথি পাখিদের আগমনে চরাঞ্চলে যেন নতুন প্রাণ জেগে ওঠে। শীত মৌসুমে বাংলাদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। এর মধ্যে সিংহভাগই ভোলায় অবস্থান করে। তখন সাগর কন্যা মনপুরা অতিথি পাখিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। দেশের অন্যসব পর্যটন কেন্দ্রের তুলনায় মনপুরার চিত্র কিছুটা ভিন্ন। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষের সমাহার দেখে প্রথমে একে ঠিক চর মনে হবে না। যেন ক্যানভাসে আঁকা শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়া।
কি করে ঘুরবেন :
সব চেয়ে ভালো সল্যুশন মোটার সাইকেল ভাড়া করা। চালকই সব ঘুরে দেখাবেন আপনাকে। সারাদিনের জন্য হাজার টাকার মত নেবে। মোটর সাইকেল ড্রাইভারের নম্বর।নাম নয়ন, ফোন- ০১৭৬-৪৬৮৬৭৮২।
** আপনি যদি হাতে সময় নিয়ে যান তবে ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে ভোলার ঢালচর থেকে ঘুড়ে আসতে পারেন।
ক্যাম্পিং এর সুবিধা :
ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ জায়গা মনপুরা। পুরা দ্বীপে যেখানে মন চায় সেখানেই তাঁবু টাঙ্গানো যাবে, জন্তু জানোয়ারের কোনো ভয় নাই, চোর ডাকাতের বালাই নেই। একটা ভালো জায়গা দেখে তাবু ফেলে নিন।
তেমন কিছুই নেয়া লাগবে না, সব-ই পাওয়া যাবে, এরপরও যদি কিছু লাগে তাহলে বাজারে পাওয়া যাবে।
টিপস :
# স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন, অনকে সম্মান এবং সুবিধা পাবেন।
# এলাকার মানুষের সাথে মিশে যেতে শিখুন, ভালো অতিথেয়তা পাবেন।
# শুধু রবি এবং গ্রামীনফোন এর নেটওয়ার্ক পাবেন।