সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিক, শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ঘোষিত নবম ওয়েজবোর্ড পুনঃপর্যালোচনা এবং এ নিয়ে নিউজ পেপার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) বারবার দেয়া নানা ধরনের ‘অনৈতিক-অসঙ্গত ও বিভ্রান্তিকর’ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশ (ডিইউজে)।
সংগঠনের সভাপতি আবু জাফর সূর্য ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশকে পাশ কাটিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভা কমিটি যে সুপারিশ করেছে তা সাংবাদিক সমাজকে মর্মাহত করেছে। সাংবাদিকরা মনে করে এর ফলে তাদের চিরাচরিত অধিকারের জায়গাটিতে অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের দুটি গ্র্যাচুইটির ক্ষেত্রে একটি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ও আইনানুগ নয়। কোনো আইনেই প্রচলিত বা পূর্বঘোষিত কোনো সুবিধাদি কর্তন করা যায় না। কিন্তু মন্ত্রিসভা কমিটি নবম ওয়েজবোর্ডে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের দুটি গ্র্যাচুইটিকে একটি করার সুপারিশ করেছে। ফলে দীর্ঘ দিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবেন, যা সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, সরকারি বা অন্যান্য পেশার চেয়ে ভিন্নতর ও বিশেষায়িত একটি পেশা হলো সাংবাদিকতা। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সাংবাদিকরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় এবং সমাজের অসঙ্গতি ও সমস্যা-সঙ্কট নিরসনে জাগ্রত প্রহরী। বিনিময়ে তাদের প্রাপ্তি নিতান্তই কম। সরকারি কর্মচারীসহ অন্যান্য পেশায় কর্মরতরা চাকরি শেষে পেনশনসহ জীবনভর নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু সাংবাদিকরা তা পান না। সে কারণে সংবাদপত্রে কর্মরতদের জন্য দুটি গ্র্যাচুইটির বিধান রাখা হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে তা কমিয়ে আনায় সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের আয়কর প্রদানের বিষয়টিতে বলা হয়েছে, মালিকপক্ষ নয়, সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা নিজ নিজ আয়কর প্রদান করবেন। সংবাদপত্র মালিকদের করা মামলায় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মরত সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের আয়কর মালিকদের বহন করার কথা। নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশেও তা বহাল রাখা হয়। সেটিকে আমলে না নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটি এ সুপারিশ কেন করল তা সাংবাদিক সমাজের কাছে স্পষ্ট নয়। এটি কি মালিকদের ভুল নির্দেশনার জন্য, না কি সরকারের সাথে বিচার বিভাগের দূরত্ব সৃষ্টির অপপ্রয়াস তা বিবেচনার দাবি রাখে।
বিবৃতিতে ডিইউজে নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সংবাদপত্র শিল্পে নতুন সঙ্কট তৈরি করছে নোয়াব। তারা সরকারি মহলকে বিভ্রান্ত করে সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার সর্বোচ্চ ষড়যন্ত্র করছেন। নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের পর থেকে নোয়াব কমিটির বিভিন্ন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে। সরকার মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করলেও নোয়াব নেতারা সেটি প্রত্যাখ্যান করে আইন অমান্যের পাশাপাশি সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য পাওনা হরণের মতো অপরাধ করেছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন সময়ে অযৌক্তিক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারীদের হেয় করার অপচেষ্টা যেমন করছেন, তেমনি সরকারি মহলসহ সংশ্লিষ্টদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই নোয়াবের মতো একটি সংগঠনের কাছ থেকে আশা করা যায় না। বিজ্ঞপ্তি।