রাফি রহমাতুল্লাহ: গত শতাব্দীর শুরুতে ১০৭ বছর পূর্বে টাইটানিক নামের জাহাজ দিয়ে মানুষ সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিল। ১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল রাতে মানুষের তৈরি বিশাল জাহাজটি আটলান্টিক মহাসমুদ্রের বুক চিড়ে যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু রাত ১১টা ৪০মিনিটে বরফের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সমুদ্র তরঙ্গের কাছে পরাজিত হয়েছিল বিশালাকার জাহাজটি। ১০৭ বছর আগে টাইটানিক সমুদ্রের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হার মানলেও নতুন করে সমুদ্রের বুকে যাত্রা করছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় জাহাজ ‘সিম্ফনি অফ সিজ’ বা ‘সমুদ্রের সিম্ফনি’। বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজটি টাইটানিকের চেয়ে চারগুণ বেশি যাত্রী বহন করতে সক্ষম। টাইটানিকের দৈর্ঘ্য যেখানে ছিল ৮৮৩ ফুট, সেখানে বৃহৎ এই জাহাজের দৈঘ্য হচ্ছে প্রায় ১১৯০ ফুট। জাহাজটি এতই বিশাল যে সমু্দ্রে বুকে ভেসে চলার সময় একে শহরের মতো দেখায়। জাহাজটি ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ প্রথম যাত্রী বহন করলেও সরকারিভাবে যাত্রা শুরু হয় একই বছরের ৭ এপ্রিল থেকে। এর নির্মাণ ব্যয় ১.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাহাজটিতে রয়েছে ২৭৫৯ টি বিলাসবহুল কেবিন। যাত্রীদের সেবাদানের জন্য জাহাজটিতে রয়েছে ২২টি বিভিন্ন ধরনের রেস্টুরেন্ট, রয়েছে ২২০০ জন ক্রু।
জাহাজটি ঘন্টায় ৪১ কিলোমিটার বেগে ছুটতে সক্ষম। এর উচ্চতা ৭২.৫ মিটার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার মধ্যে অবস্থিত ‘রয়েল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ লাইন কোম্পানি’ এর এই জাহাজে ৮ হাজার লোক আরামে সমুদ্র ভ্রমণ করতে সক্ষম।
ফ্রান্সের তৈরি ‘সিম্ফনি অফ সিজ জাহাজটি’ রয়েল ক্যারিবিয়ান জাহাজ কোম্পানির ২৫তম জাহাজ। জাহাজটিতে রয়েছে রাজকীয় কক্ষ। চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে এয়ার হকি টেবিল, পিং পং টেবিল, ৮৫ ইঞ্চি সিনেমার পর্দা, ভিডিও গেম, লাইব্রেরিসহ নানা আয়োজন। জাহাজের ভেতরে রয়েছে শপিংমল। আটটি ডেকযুক্ত জাহাজটিতে গলফ খেলার ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বাস্কেটবল খেলার কোট। ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্যও রয়েছে বিনোদনের নানা ব্যবস্থা।
জাহাজটি রয়েছে ২৪ টি সুইমিং পুল। শিশু ও নারী-পুরুষের চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে থিমপার্ক, আইস স্কেটিং এবং সুসজ্জিত জিমনেসিয়াম, ওয়াটারপার্ক এবং চিরহরিৎ উদ্ভিদের বাগান। বর্তমান সময়ের নানা সুবিধার কথা চিন্তা করে, সব মিলিয়ে জাহাজটিকে একটি আধুনিক শহর বলা যেতে পারে।
আধুনিক সময়ের বিশালাকার জাহাজ ‘সিম্ফনি অফ সিজ’ এ ভ্রমণকারীদের সুযোগ-সুবিধার হয়তো কমতি নেই। কিন্তু এই জাহাজটি তার প্রথম যাত্রার প্রাক্কালে সবাইকে হয়তো মনে করিয়ে দিচ্ছে বিশাল সমুদ্রের ক্ষমতার কথা। যে সমুদ্রে টাইটানিক জাহাজটি ডুবে মারা গিয়েছিল ১৫০০ যাত্রী। সেইদিন হয়তো সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গে মানুষের তৈরি একটি বিশালাকার জাহাজ নিমিষেই তলিয়ে গিয়েছিল। সাথে সাথে সমুদ্রের ক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়েছিল মনুষ্য শক্তি। জাহাজটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিদা থেকে ক্যারিবিয়ান পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত চলাফেরা করে। কেবিন ভেদে জাহাজটিতে ৭দিনের ভ্রমন করতে খরচ ৯৯০০০ থেকে ২ লক্ষ ১৮ হাজার বাংলাদেশী টাকা। জাহাজ কোম্পানি ‘রয়েল ক্যারিবিয়ান ক্রুজ লাইন কোম্পানি’আশা করছে, সমুদ্রের বুকে স্বাচ্ছন্দে ভেসে চলুক ভ্রমণপিপাসু মানুষ।