শাহ আবদুল হান্নান: শিল্প ও সাহিত্য সম্পর্কে বর্তমান সময়ে আমরা যেটুকু পড়াশোনা করা দরকার অন্যান্য নানা ব্যস্ততার কারণে আমি এ মুহূর্তে সে রকম পড়াশোনা করতে পারছি না। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে আমি জড়িত আছি। আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোর প্রতি নজর রাখতে হয়। ইন্টারনেটে অনেক কাজ করতে হয়। এসব কারণেই শিল্প-সাহিত্য সম্পর্কে যতটুকু পড়া দরকার তা হচ্ছে না। তবে মোটামুটিভাবে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সাহিত্য পাতাগুলো আমার দেখা হয়। সাহিত্য পত্রিকার মধ্যে হাতের কাছে যেগুলো পাই সেগুলো দেখার চেষ্টা করি। এসব দেখে আমার ধারণা হলো যে,বর্তমান সাহিত্যে কোনো বড় ধরনের গুণণত পরিবর্তন হয়নি। একই মানে চলছে। সাহিত্য ও সংস্কৃতি মিলে শুধু এতটুকু লক্ষ্য করছি যে,এসব ক্ষেত্রে আগে যে একতরফা একটা ব্যাপার ছিল অর্থাৎ বামধারার প্রাধান্য সেটা কমেছে। সেই তুলনায় সাহিত্যের ক্ষেত্রে যারা ইসলামীমনা বা কিছুটা হলেও ইসলামীমনা,কিছুটা হলেও নৈতিকতায় বিশ্বাসী আদর্শে বিশ্বাসী তারা বিগত কয়েক বছরে বেশ এগিয়ে এসেছেন। আমি দেখতে পাচ্ছি,গানের ক্ষেত্রে বর্তমানে এদের মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপ সংগঠিত হয়েছে।
আমার মনে হচ্ছে যে,পাশ্চাত্যের শত প্রচারণা সত্ত্বেও আমাদের কালচার আগের সেই পরিস্থিতি থেকে ক্রমান্বয়ে বেরিয়ে আসছে,কিছু সেক্টও ছাড়া। সাধারণভাবে জনগণ পাশ্চাত্য কালচারকে বেশি গ্রহণ করছে বলা যাবে না;বরং সেখান থেকে সরে আসছে। বামপন্থী কালচার অনেকটা ইসলামবিদ্বেষপ্রসূত বিষয় হিসেবে কালচারের ক্ষেত্রে নাটক-সিনেমা প্রভৃতিতে ধর্মের বিষয়গুলোকে তাদের মতো বানিয়ে নিয়েছে।
ইসলামকে পরাজিত করতেই তারা এরূপ করছে। এভাবে তারা যেটা করতে চায় সেটা মুসলিম গণমানুষের মধ্যে তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে বলে আমার মনে হয় না। যদি জনগণের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টিও আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি তাহলে বলবো,এখানে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বেড়েছে। মুসলিমদের মধ্যে অমুসলিমদের প্রতি যে উন্নাসিকতার ব্যাপার ছিল তা দূর হচ্ছে।
আমাদের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি লক্ষ্যণীয় দিক হলো,একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে ইচ্ছে করে কিছু মানুষ কর্তৃক উসকে দেয়া। গত দু বছরের মধ্যে দেখা গেছে,একটি গোষ্ঠী দ্বারা বিড়ালকে মোহাম্মদ বানিয়ে উসকে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে,যেটা অপ্রয়োজনীয় ছিল। একটি নির্বোধ গল্প বানিয়ে এ কাহিনী সাজানো হয়েছে। গল্প নির্বোধ হলেও আসলে কাহিনীকারই দুষ্ট। সে এমনভাবে কাহিনী বানিয়েছে যে,মনে হয় কাহিনীটা নির্দোষ;কিন্তু আসলে একটি দোষের কাজকে নির্দোষ প্রমাণের এটি একটি অপচেষ্টা ছিল। এর ফলে জনগণের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তবে যাই হোক সেটি মিটমাট হয়েছে। সেটিও একটি ভালো দিক। আমাদের সমাজে উসকানি দেয়ার যেমন লোক আছে,আবার মীমাংসা করারও লোক আছে। এ ব্যাপারে মরহুম খতিব উবায়দুল হক সাহেব প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছিলেন। আমি এটির প্রশংসা করি যে,শেষ পর্যন্ত উক্ত পত্রিকার দুই সম্পাদক এসে মাফ চেয়েছেন। পত্রিকায় তাদের হাত জোড় করে মাফ চাওয়ার ছবি প্রকাশ হয়েছে। তবে তারা এটা মনে রেখেছেন কিনা তা বলতে পারবো না। কেননা,তাদের পত্রিকার ভূমিকায় খুব একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তেমনিভাবে ভাস্কর্যের নামে উসকানি ছড়ানো হয়েছে। ভাস্কর্য ও মূর্তিকে এক করে ফেলা হচ্ছে। ইসলামে যে মূর্তি নিষিদ্ধ এবং ইসলামে যে মূর্তি নেই,মুসলিম সমাজ যে কখনোই মূর্তিকে গ্রহণ করে না,সেটিকে তারা ভুলে গিয়ে মূর্তিকে ভাস্কর্য বলে চালিয়ে দিচ্ছে। ভাস্কর্য যদি তারা করতেই চান তবে ঐতিহাসিক কোনো বিষয় বা স্থানকে করা যেতে পারে। যেমন- আহসান মঞ্জিল,লালবাগের কেল্লা কিংবা মীর জুমলার কামানকে করা যেতে পারে। এ রকম নানা জিনিসকে করা যেতে পারে। এখানে নানা কিছু করার অবকাশ থাকলেও সেদিকে না গিয়ে ঐ গোষ্ঠী দ্বারা সমাজে উসকানি সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সেকুলার বাব াম একটি অংশ,যারা মূলত সমাজের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ- এরকম উসকানি বা উত্তেজনা সৃষ্টি করাটা একটা স্টাইল হয়ে গেছে। তবু বলতে হয় আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে এরকম একটি অগ্রগতি হয়েছে বলে মনি করি। এ প্রসঙ্গে আমি হিজাবের কথাই আবার বলি,আমাদের সমাজে হিজাবের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সার্বিকভাবেই এর ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উত্তরোত্তর আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেয়েরা এটিকে অনেক বেশি শালীন এবং তাদের জন্য সম্মানজনক বলে মনে করছে। তারা এর মাধ্যমে প্রদর্শনকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা এ পোশাককে সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবেই গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী তাকালে দেখা যায়,শত বাধা সত্ত্বেও ইসলামপন্থীদের ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ¦ল। তারা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। সার্বিকভাবে সারা বিশ্বে ইসলামী স্কলারদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা মানসম্পন্ন সাহিত্য সৃষ্টি করছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। তাদের শক্তি বাড়ছে। বর্তমান ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিসে এটি প্রমাণ হয়েছে,এসব প্রতিষ্ঠান অনেক বেশি সুষ্ঠু ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এবং এ ধরনের ক্রাইসিস তারা বেশি মোকাবেলা করতে পারে। কারণ এখানে সুদ ও ফটকাবাজি নেই। ফটকাবাজির জন্য সুদটা সুবিধা। এখানে ঋণ বিক্রিও নেই।
যাই হোক আমি বলতে চাই তা হলো,ইসলামের শক্তি সবদিক দিয়েই বাড়ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। মিসরে বাড়ছে,ইন্দোনেশিয়াতে বাড়ছে,তুরস্কে বাড়ছে,তিউনিসিয়ায় বাড়ছে। ইন্দোনেশিয়ার সোসাইটির সাথে নানা কারণে আমার অনেক যোগাযোগ হয়েছে। সেখানে ইসলামের শক্তি আগের তুলনায় অনেকে বেড়েছে তা আমি যোগাযোগের মাধ্যেমে জানতে পেরেছি। সবখানেই মানবতার বিস্তার ঘটাতে হবে। সারা বিশ্বকেই মানবতাবাদে ও নৈতিকতাবাদে ফিরে আসতে হবে।
শাহ আবদুল হান্নান: সাবেক সচিব বাংলাদেশ সরকার