ময়মনসিংহে এক টেলিকম ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় গৌরীপুর থানার চারজন সহকারী উপ-পরির্দশককে (এএসআই) সোমবার রাতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এর আগে সোমবার তাদেরকে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়।
বরখাস্তকৃত চার পুলিশ কর্মকর্তা হলেন এএসআই আব্দুল আউয়াল, রুহুল আমিন, আনোয়ার হোসেন, কামরুল ইসলাম ও কনস্টেবল আল আমিন। মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন গৌরীপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জানা যায়, গত সোমবার রাত ১০ টার দিকে গৌরীপুর উপজেলার রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ডের বর্ষা টেলিকম নামে একটি দোকানে সাদা পোশাকে প্রবেশ করে পাঁচ পুলিশ সদস্য। পরে দোকানের মালিক মোঃ খোকনের দেহ তল্লাশি করে কিছু না পেয়ে দোকানের বাইরে রাখা বৈদ্যুতিক তারের কয়েলের ভেতরে ১০ পিস ইয়াবা বড়ি পাওয়া গেছে বলে চিৎকার শুরু করে এক পুলিশ সদস্য।
এই অবস্থায় অন্য পুলিশ সদস্যরা দোকানের মালিক খোকনকে চর-থাপ্পড় এবং কিলঘুষি দিতে দিতে হাতকড়া পরিয়ে ফেলেন। এ সময় দোকানে থাকা সিসি টিভিতে ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিলেন অন্য একজন। তিনি ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা মিথ্যা দাবি করে এই ঘটনার প্রতিবাদ করে খোকনকে ছেড়ে দিতে বলেন।
কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাকেও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখালে উপস্থিত লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের ঘেরাও করে ফেলে। এ সময় দুই পুলিশ সদস্য দৌড়ে পালিয়ে গেলেও অন্য তিনজনকে স্থানীয় একটি শ্রমিক সমিতির ঘরে আটক করে উত্তম মধ্যম দেয়া শুরু করে জনতা।
এ অবস্থায় এ খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই শতশত লোকজন ছুটে এসে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধসহ পুলিশ সদস্যদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে রাত দুইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) সাখের হোসেন সিদ্দিকী ও আন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে সঠিক বিচারের আশ্বাস দিলে উত্তেজিত জনতা মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন। পরে স্থানীয়রা আটক ওই তিন এএসআই আব্দুল আউয়াল, আনোয়ার হোসেন, কামরুল ইসলামকে তাদের হাতে তুলে দেন।
বর্ষা টেলিকমের মালিক খোকন মিয়া বলেন, ওইদিন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে পাঁচজন সাদা পোশাকদারী পুলিশ আসেন তার দোকানে মোবাইলে টাকা লোড করতে। এসময় একজন তাকে বলেন, ‘সাইড দাও আমরা তোমার দোকান তল্লাশি করব’। একপর্যায়ে তারা তল্লাশির নামে দোকানের সিসি ক্যামেরার চার্জার খুলে ফেলেন। তিনি তখন সিসি ক্যামেরা ওপেন করে তল্লাশির জন্য পুলিশদের অনুরোধ করেন। তার অনুরোধ না রেখেই পুলিশ দোকানে তল্লাশি শুরু করেন।
তল্লাশিকালে এক পুলিশ দোকানের সামনে কাউন্টারে রাখা ইলেকট্রনিক তারের কয়েলের ভেতর থেকে প্লাস্টিকে মোড়ানো এক প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট বের করে এনে খোকনকে হাতকড়া পড়ান। তাৎক্ষণিক খোকন এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় পুলিশ তাকে মারধর করেন। এতে সে আহত হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়।
বরখাস্ত হওয়ার আগে পুলিশের অভিযুক্ত এএসআই আওয়াল জানান, স্থানীয় এক সোর্সের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে তারা খোকনের দোকানে এ অভিযান চালান। তল্লাশিকালে তার দোকানে একটি প্যাকেটের মধ্যে ১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। কিন্তু স্থানীয়রা খোকনকে ভালো লোক দাবি করে তাদের অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে রামগোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আমিন জনি ঘটনাস্থলে গিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।