মোঃ এমদাদ উল্যাহ: ‘মাদক’ ভয়াবহ এক মরণ নেশার নাম। এর কারণে ধ্বংস হচ্ছে দেশের মেধাবী তরুন-তরুণী। সমাজের নিম্নস্তর থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সর্বত্রই এখন মাদকের ছড়াছড়ি। বেশির ভাগ অপরাধের সঙ্গে রয়েছে মাদকের সংশ্লিষ্টতা। মাদকে জড়িতদের কারণে চারদিকে বাড়ছে সামাজিক অবক্ষয়। ফলে তছনছ হচ্ছে সাজানো পরিবার, বাড়ছে পারিবারিক বিচ্ছেদ। আর সন্তানের হাতে পিতামাতা এবং পিতামাতার হাতে সন্তান, প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা আবার প্রেমিকার হাতে প্রেমিক, ভাইয়ের হাতে ভাই, ছাত্রের হাতে শিক্ষক খুনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সমাজের ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোনো শ্রেণির মানুষই রক্ষা পাচ্ছে না মাদকের ছোবল থেকে। বিশেষ করে ইয়াবা এখন তরুণ-তরুণীদের মাঝে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে উঠে গেছে দেশপ্রেম, আদর্শ ও নৈতিকতা। মাদকাসক্তরা শুধু নিজেদের মেধা এবং জীবনীশক্তিই ধ্বংস করছে না, তারা নানাভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলাও নষ্ট করছে।
মাদক হলো এক প্রকার অবৈধ বস্তু। যা গ্রহণ বা সেবন করলে আসক্ত ব্যক্তির এক বা একাধিক কার্যকলাপের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটতে পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। ফলে যেকোনো ধরনের পাপাচার ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বিবেক বাধা দেয় না। মিথ্যা কথা বলা তাদের স্বাভাবিক বিষয়। কোনো ধরনের অপরাধবোধ তাদের স্পর্শ করে না। ধর্মের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে। ভালোবাসা কিংবা স্নেহ-মমতাও তাদের স্পর্শ করতে পারে না। মাদক সেবনকারীর দেহমন, চেতনা, মনন, প্রেষণা, আবেগ, বিচারবুদ্ধি সবই মাদকের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। জীবনের ঠিকানা হয় ধ্বংসের সীমানায়।
সহজলভ্যতার কারণে হাত বাড়ালেই মাদকদব্র্য পাওয়া যাচ্ছে। ভারত ও মায়ানমার সীমান্ত পথে প্রতিদিনই বাংলাদেশে ঢুকছে হাজার হাজার কোটি টাকার ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। এসবের অধিকাংশই সেবন করে তরুণ-তরুণীরা। এরমধ্যে সমাজের বেকার যুবক, হতাশাগ্রস্ত মানুষ ও সঙ্গদোষে কিছু ব্যক্তি মাদকে জড়িত রয়েছে। আবার এক শ্রেণির মানুষ টাকার লোভে যুব সমাজকে মাদকের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। স্বার্থান্বেষী মহলের থাবা থেকে বাদ যাচ্ছে না স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় পড়–য়া ছাত্র-ছাত্রীরা। ফলে অনেক অভিভাবক অতিষ্ঠ হয়ে তাদের সন্তানকে বেশি পড়ালেখা করাতে চান না। কোনো রকম জেএসসি বা জেডিসি পাশ করলেই চলে, যাতে ছেলে মাদকাসক্ত হয়ে না পড়ে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাদকের সহজলভ্যতা, বন্ধুদের চাপে পড়ে অনেকে মাদক নিয়ে থাকে, বাবা-মায়ের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে অনেকে মাদক গ্রহণ করে থাকে, অনেকের মাঝে মাদক নিয়ে স্মার্ট হওয়ার প্রবণতা, হতাশা, একাকীত্ববোধ, বিষণ্নতা, শৈশবে বিকাশে সমস্যা থাকলেও অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে মাদক গ্রহণ করে এবং পারিবারিক কারণেও অনেকে মাদকে জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া আর্থিক লোভ অন্যতম। এসব কারণে নারী-শিশু থেকে শুরু করে সব শ্রেণির মানুষ মাদকে জড়িয়ে পড়েছে। মাদক পাচার ও ব্যবসা অপরাধ হওয়ায় কৌশলে পাল্টিয়ে চলছে মাদক ব্যবসা। কৌশলগুলো হলো- মুদি, চা, ভাঙ্গারী ব্যবসা, পুরুষ ও মহিলাদের বডি ফিটিং, মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাস, সিএনজি, ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভ/গাড়ী, এ্যাম্বুলেন্স, ব্রিফকেস, সাধারণ মানুষকে ব্যবহার, মাইট্টা আলু ভিতর, মানুষের পেটের ভিতর, পায়ের জুতার ভিতর, পুলিশ ও বিজিবিকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও রাজনৈতিক পরিচয় দেওয়া।
মাদকের টাকা জোগাড় করতে গিয়ে শিক্ষিত বেকার যুবকের ন্যায় শিক্ষিত তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অধরাধে। অপরাধগুলো হচ্ছে-মাদক বহন, অস্ত্র ব্যবসা, খুন-খারাবি, ধর্ষণ ও অপহরণ অন্যতম। পুলিশ কর্মকর্তার আদরের মাদকাসক্ত মেয়ে ঐশীর হাতে পিতা-মাতা খুনের ঘটনাই বলে দেয়; মাদকের ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানায়- এই মরণ নেশা মাদক ব্যবসায় সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন দফতরে কর্মরত অসাধু কিছু সদস্য। ফলে মাদক ব্যবসা ও সেবন কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না।
খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ সরাসরি মাদকে সম্পৃক্ত উল্লেখ করে সম্প্রতি জাতিসংঘের একটি জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৫ লাখ মানুষের মধ্যে ৮৭ ভাগ পুরুষ, ১৩ ভাগ নারী। এক লাখেরও বেশি মানুষ নানাভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে নারী এবং শিশু-কিশোররাও জড়িত মাদক ব্যবসার সঙ্গে।
মাদক নিয়ে ২০১৮ সালের শেষ দিকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। সমীক্ষায় বলা হয়-দেশে মাদকাসক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩৬ লাখ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক, অর্থাৎ ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৫ হাজার ৩০০। আর ৭ বছরের বেশি কিন্তু ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৫৬ হাজারের কিছু বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৮ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সমীক্ষা চালানো হয়। দেশের সাতটি বিভাগের সাত বছরের ঊর্ধ্বে ১৯ হাজার ৬৬২ জনের ওপর বাংলাদেশে মাদক ব্যবহারের প্রকোপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের ওপর সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোঃ ফারুক আলমের নেতৃত্বে মোট পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বছরব্যাপী পরিচালিত এই সমীক্ষার তত্ত্বাবধান করেন।
সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, ১২ থেকে বছর ১৮ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, ৭ থেকে ১২ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছরের মধ্যে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে মাদক ব্যবহারের প্রকোপে রয়েছে। এরমধ্যে মাদক ব্যবহারকারী সবচেয়ে বেশি রয়েছে ঢাকা বিভাগে ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। এ ছাড়া রংপুর বিভাগে ১৩ দশমিক ৯০, রাজশাহী বিভাগে ৭ দশমিক ১০, সিলেট বিভাগে ৬ দশমিক ৯০, খুলনা বিভাগে ৬ দশমিক ২০ এবং সবচেয়ে কম ছিল বরিশাল বিভাগে ৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, প্রতিদিন দেশে যে পরিমাণে মাদক ঢুকছে তার ১০ শতাংশও উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও প্রতি বছরের ২৬ জুন পালিত হয় বিশ্ব মাদকমুক্ত দিবস। মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসটি সারাবিশ্ব জুড়েই পালিত হয়ে আসছে। ২০১৮ সালের মাদকমুক্ত দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘যুব সমাজ ও স্বাস্থ্য’ আর স্লোগান হচ্ছে ‘স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবুন মাদক পরিহার করুন’।
চারদিকে মাদকের ভয়াবহতা বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত বছর থেকে দেশে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। প্রতিদিনই মাদক বিরোধী অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী, পাচারকারী আটক ও গোলাগুলিতে গডফাদাররা নিহত হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মাদক নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনা ঘটছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার মাদকের আখড়াখ্যাত কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির চার ভাইসহ শতাধিক ইয়াবা কারবারি আত্মসমর্পন করেছেন। বদির চার ভাই হলেন; আবদুশ শুকুর, আমিনুর রহমান, মোঃ ফয়সাল রহমান ও শফিকুল ইসলাম। এছাড়া রয়েছেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের ছেলে দিদার মিয়া ও পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর প্রকাশ নুরশাদ, পশ্চিম লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, ইউপি মেম্বার জামাল হোসেন, শামসুল আলম, কক্সবাজারের আলোচিত ইয়াবা ডন শাহজাহান আনসারি। মাদক বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন-গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় থাকা সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি নিজেও।
মাদকের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণার’ কথা জানিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে আইজিপি ব্যাজ, কুচকাওয়াজ ও শিল্ড প্যারেড বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ‘মাদক ও অবৈধ অস্ত্র সমাজের বিষফোঁড়া, এগুলো দূর করতে না পারলে নিরাপদ সমাজ তৈরি সম্ভব হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। ২০১৮ সালের মাদক সংক্রান্ত ১ লাখ ১২ হাজার মামলায় প্রায় দেড় লাখ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার ও এক হাজার ৬৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার মাদক উদ্ধার করা হয়েছে’। এসময় তিনি পুলিশ বাহিনীর কোন সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ার করেন।
মাদক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ। ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ হতে স্নাতক(সন্মান) এবং ১৯৮২ সালে লোকপ্রশাসন বিভাগ হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী মোঃ জামাল উদ্দীন আহমেদ ১৯৮৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে প্রায় তিন দশকের দীর্ঘ কর্মজীবনে বিভিন্ন দায়িত্বে আসীন হয়ে তিনি বিভিন্ন সরকারী দায়িত্ব পালন করেছেন। জেলা প্রশাসক হিসেবে মেহেরপুর ও দিনাজপুর জেলায় দায়িত্ব পালন শেষে বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে তিনি সিলেট বিভাগে এবং যুগ্ম সচিব হিসেবে সড়ক বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ আগে গত ২৯ জুন ২০১৭ তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি অতিরিক্ত সচিব হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। দাপ্তরিক ও প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত প্রয়োজনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, মালেশিয়া, লাইল্যান্ড, ভারত, চিন, সিঙ্গাপুর ও মায়ানমার ভ্রমণ করেছেন। এ সময়ে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কাজের অভিজ্ঞতা থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন তিনি। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন দফতরে কর্মরত ব্যক্তিদের মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখার কর্তাব্যক্তিরা।
পবিত্র কোরআনে সূরা আল মায়িদার ৯০নং আয়াতে মাদক সেবনের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞা প্রকাশ করে ইরশাদ হয়েছে, ‘ওহে মুমিনগণ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ণায়ক তির হচ্ছে ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কারসাজি। সুতরাং তোমরা এসব বর্জন করো-যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’
নেশা ও মাদকাসক্তির ভয়াবহতা থেকে মানুষকে মুক্ত রাখার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘নেশাজাতীয় যেকোনো দ্রব্যই মাদক, আর যাবতীয় মাদকই হারাম।’ (মুসলিম)।
মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য আশু করণীয় কিছু পদক্ষেপ:
*সন্তানের ব্যাপারে খোঁজ রাখতে হবে অভিভাবকদের
*নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেকের সচেতনতা জরুরী
*ধর্মীয় নির্দেশ মেনে চলা প্রয়োজন
*সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে
*মাদকাসক্তের কারণ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
হিউম্যন রাইটস রিভিউ সোসাইটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হোমিও বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষন কেন্দ্রের কো-চেয়ারম্যান ডাঃ মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ বলেন, মাদক সেবনের কারণে যৌন সমস্যাসহ শরীরে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়া শিশু-কিশোরদের মধ্যে হঠাৎ করে উত্তেজিত হওয়া ও রাতের বেলা বিছানায় প্র¯্রাব করার মতো বিভিন্ন মানসিক রোগের প্রকোপ থাকে।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ সাইয়েদ রাশীদুল হাসান জাহাঙ্গীর বলেছেন-ভয়াল মাদক তারুণ্য, মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্বÑসবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ-মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধন পর্যন্ত। নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়ের কারণে তরুণ-তরুণী বা ছাত্র-ছাত্রীরা মাদকাসক্ত হচ্ছে। আগে ছেলে-মেয়েদের যেভাবে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হতো এখন তা দেয়া হচ্ছে না। ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে নীতি নৈতিকতা কিংবা মূল্যবোধের শিক্ষা পাচ্ছে না আমাদের ছেলে মেয়েরা। এছাড়া বাবা-মা তাদের সন্তাদের সময় দিচ্ছে না। তারা কোথায় কি করছে তা সঠিকভাবে তদারকি করছে না পিতা-মাতা।
সচেতন মহল দাবি করেছেন, দেশের ভিতরে মাদক তৈরি হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পথে ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক আসছে। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সারা দেশে মাদক বিরোধী অভিযানে তৎপর রয়েছে। তবে কিছু অসৎ সদস্য মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করে এমন অভিযোগও রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া থেকে বের করে আনতে হবে এবং আলটিমেটাম দিতে হবে, হয় তারা মাদক ব্যবসা ছাড়বে, নতুবা দেশ ছাড়বে। পুলিশ বাহিনীকে আরো সক্রিয় ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি কমিয়ে মানুষের অবৈধ আয় সংকুচিত করে আনতে হবে। উচ্চশিক্ষা বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আরো সহজলভ্য করতে হবে। পাশাপাশি ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। মফস্বল এলাকাগুলোতে পাঠাগার স্থাপন, খেলার মাঠের সংস্কার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বৃদ্ধি করতে হবে। কঠোর হাতে আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কেউ ধরা পড়লে জামিনের সুযোগ না রেখে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দিতে হবে। এছাড়া ছাত্র-যুবসমাজই পারে সমাজ ও দেশকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে। প্রতিটি এলাকায় ছাত্র ও যুবকদের নিয়ে মাদকবিরোধী সংঘ গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রসংগঠনগুলো যদি প্রতিজ্ঞা করে যে নিজেরা মাদক নেবে না এবং অন্যকে মাদকাসক্ত হতে দেবে না, তবেই অতি সহজে সফলতা আসবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচিত হবে ছাত্র ও যুব সমাজকে মাদক নির্মূল অভিযানে শামিল ও উদ্বুদ্ধ করা। মাদকদ্রব্যের মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তুলতে নিয়মিত সভা-সমিতি, সেমিনার, কর্মশালার আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় বিধিবিধান-সম্পর্কিত শিক্ষামূলক ক্লাস নিতে হবে। মাদকদ্রব্য উৎপাদন, চোরাচালান, ব্যবহার, বিক্রয় প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত আইনের বাস্তব প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের সামাজিক আন্দোলন, গণসচেতনতা ও সক্রিয় প্রতিরোধের মাধ্যমে মাদকাসক্তির মতো জঘন্য সামাজিক ব্যাধির প্রতিকার করা সম্ভব।
মোবাইল : ০১৮১২ ৫৯ ৬১ ৮৩