কাজী রিয়াজ মাহমুদ, চরফ্যাসন (ভোলা) : দ্বীপের রাণী ভোলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সবুজ দ্বীপের অনন্য লীলাভূমি চর কুকরী-মুকরী। চোখের সামনেই ভেসে উঠবে দিগন্ত সবুজের সমারোহ টুকরো টুকরো বনভূমি। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ, বৈরী বাতাস, ও বিশাল জলরাশির জলোচ্ছবাসের হাত থেকে রক্ষার জন্য যেন জন্ম হয়েছে এ নৈসর্গিক ম্যানগ্রোভ বনভূমির। প্রকৃতির সাথে সংগ্রামের অসামান্য আয়োজন প্রতিনিয়তই যোগাচ্ছে ঐ অঞ্চলের সাহসী মানুষদের। পর্যটক কিংবা ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের মুগ্ধ করার জন্য যেন এ দ্বীপটি বহু আগে থেকেই রয়েছে। তাই প্রকৃতির অপরূপ সবুজের মিতালী চর কুকরী-মুকরী পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃতির দাবিদার। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, এ দ্বীপের জন্ম হয় ১৯১২ সালে। মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলেই এ চরটি জেগে ওঠে। আবার কেউ কেউ দাবি করছেন ভোলার মূল ভূখন্ড সৃষ্টির পূর্বেই এর জন্ম হয়েছে। সকল চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৯৫২ সালে দ্বীপটি পরিপূর্ণভাবে জেগে ওঠে। তৎকালীন সময়ে জার্মানের যুবরাজ প্রিন্স ব্রাউন শিকারের উদ্দেশ্যে জাহাজ নিয়ে এ দ্বীপে এসে হতবাক হয়ে যান চোখে পড়ে নিবিড় লালচে সবুজের সমারোহ। কিছু কুকুর ও বিড়ালের চারিদিকে ছুটোছুটি তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় নির্জন এ দ্বীপের নামকরণ। নাম রাখা হয় চর কুকরী-মুকরী। পরবর্তীতে কয়েক বছর এখানে পর্তুগীজ ও ওলন্দাজরা ঘাঁটি তৈরি করে দস্যু হামলা চালায়। এর পর ১৯৭৪ সালে বনায়ন প্রক্রিয়া পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। পরে এটি ‘‘উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী প্রকল্প’’ হিসেবে রূপ লাভ করে যা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বহু কর্মকর্তা নিয়োজিত আছে। ভোলা সদর থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে চরফ্যাসন উপজেলার অভ্যন্তরে চর কুকরী-মুকরীর অবস্থান। সেখানে ভ্রমণ পিপাসুদের যেতে হলে উপজেলার চর কচ্ছপিয়া ও চর পাতিলা থেকে অাঁকা-বাঁকা নৌ পথে যাত্রা করে কিছু পথ এগুলেই দর্শনীয় স্থান চর কুকরী মুকরীর বিস্তীর্ণ বনভূমির ছায়া চোখে এসে পড়বে। এখানে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে বাহারী হরিণ ছাড়াও রয়েছে সর্পিল লেক, বালুকাময় তীর, সি বিচ, সামুদ্রিক নির্মল হাওয়া এবং মনমুগ্ধকর বালুরধুম। একটু সামনে এগুলেই ঢালচর, তার পরেই বঙ্গোপসাগর। এ দ্বীপে দাঁড়ালে সাগরের শোঁ শোঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাবে না। সেখানে সাগর পাড়ে উত্তাল ঢেউয়ের ছন্দ দেখলেই মনে পড়ে যায় কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতের কথা। স্থানীয়দের মতে, দেশের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যা রয়েছে তার সিংহ ভাগই এখানে বর্তমান। চর কুকরী-মুকরীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য ও নয়নাভিরাম দৃশ্য এবং প্রকৃতির লীলাভূমির বৈচিত্র্যকে ধরে রাখতে সরকারের সু-দৃষ্টি দেয়ার মাধ্যমেই গড়ে উঠতে পারে অপার সম্ভাবনাময়ী পর্যটন কেন্দ্র।
ভয়াল সৌন্দরযের চর, চর কুকরী- মুকরীতে যারা একবার গিয়েছেন তারা বার বার ছুটে যেতে চান সেখানে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি এই চর কুকরী-মুকরীকে দ্বীপকন্যাও বলা হয়ে থাকে। ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, বন্যপ্রাণী আর সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে সৌন্দর্যের এক বর্ণিল উপস্থিতি যা প্রকৃতি প্রেমিক পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ বছর পুরনো এ চরে আজও সভ্যতার ছোঁয়া লাগেনি। কথিত আছে এর পত্তনের পর প্রথমদিকে এ চরে কুকুর আর ইঁদুরের প্রভাব ছিল খুব বেশি। ইঁদুরের আর এক নাম মেকুর, আর তা থেকে এ চরের নামকরণ করা হয় ‘চর কুকরী-মুকরী’।
যেভাবে যাবেনঃ ভোলা সদর থেকে গাড়ি যোগে ১০০ কি.মি. পাড়ি দিয়ে কচ্ছপিয়া পৌঁছে সেখান থেকে পুনরায় ৩০ কি.মি. নৌকা-ট্রলার বা স্পিডবোটে মেঘনা নদী অতিক্রম করে এ দ্বীপে পৌঁছাতে হয়।