আবু আফজাল মোহা. সালেহ: পর্যটন শিল্প অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য ‘খরভব ইষড়ড়ফ’ হিসেবে কাজ করে। ওইসব দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে পর্যটন শিল্প। অধিকন্তু, পর্যটন মানুষের জন্য আনন্দের যোগান দেয়, দৈনন্দিন জীবনে কিছু সময়ের জন্য হলেও স্বস্তি আনয়ন করে এবং অবকাশ যাপনের সুযোগ সৃষ্টি করে। পর্যটনের মাধ্যমে মানুষ একে অপরকে জানতে পারে, দর্শনীয় স্থান স¤পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং অন্যান্য মানুষের সাথে বন্ধুত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক-সামাজিক সৌহার্দ্য ও সমপ্রীতি সৃষ্টি করতে পারে। ফলে প্রতিটি পর্যটন-গন্তব্যের সরকার এবং পর্যটন ব্যবসায়ীরা এ শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দান করে তার উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি। ধরা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬০ কোটি। পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের প্রায় ৭৩ শতাংশ ভ্রমণ করবেন এশিয়ার দেশগুলোতে। এছাড়াও বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তথ্যমতে, ২০১৮ সালের মধ্যে এ শিল্প হতে ২৯ কোটি ৭০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ১০.৫ ভাগ। বাংলাদেশ যদি এ বিশাল বাজার ধরতে পারে তাহলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। পর্যটন শিল্পে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
বর্তমানে বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ২ শতাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। ইতোমধ্যে পর্যটন বিশ্বের বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের এক-তৃতীয়াংশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস পর্যটন শিল্প। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রাক্কলন অনুযায়ী, সারাবিশ্বে প্রায় ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষ তাদের জীবন-জীবিকার জন্য এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সমগ্র বিশ্বে ২০২০ সাল নাগাদ পর্যটন থেকে প্রতিবছর দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হবে। এ দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে পর্যটন শিল্প বড় নিয়ামক হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বহুমাত্রিক পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে শুধু কক্সবাজারে। বহুমাত্রিক পর্যটনে সাংস্কৃতিক, ইকো, ¯েপার্টস, কমিউনিটি ও ভিলেজ টুরিজম ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বেসরকারি বিনিয়োগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। পর্যটকদের আবাসন সুবিধা বৃদ্ধির অভিপ্রায়ে কক্সবাজারে রাজধানী নগরী ঢাকা থেকেও বেশি হোটেল/মোটেল গড়ে উঠেছে। সকল পর্যটন কেন্দ্রেই বেসরকারি উদ্যোগের কারণে অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে।
কক্সবাজার বাদে অন্যান্য ট্যুরিস্ট ¯পটে তেমন আধুনিকায়ন হয়নি। তবে ধীরে ধীরে হচ্ছে অনেক ¯পটে। পাহাড়পুর, মহাস্তানগড়ে উন্নয়ন যথেষ্ট চোখে পড়ার মত। বিনোদনসহ অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাড়াতে হবে। পর্যটনখাতে বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে হবে। বিদেশিদের জন্য আলাদা আবাসিক ব্যবস্থা বা বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্বে চীনা পর্যটকেরা বেশি ব্যয় করে। চীনের নাগরিকের বেশিরভাগ বৌদ্ধধর্মালম্বী। তাই তাদের আকৃষ্ট করতে বৌদ্ধস্থাপনাগুলোতে যোগাযোগ ও অন্যান্য সুবিধা বাড়াতে হবে। চীনা পর্যটকদের আনতে পারলে অর্থনীতিতে গতিসঞ্চার হবে। থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় পর্যটনখাতে অনেক এগিয়ে। দেখা যায়, চীনা পর্যটকের হার অনেক বেশি এ দুদেশে। ভারতেও পর্যটন থেকে আয় অনেক হয়। কিন্তু শুধুমাত্র চীনা/জাপানীদের উল্লেখিত দুদেশের সমান হতে পারেনি। তাই, উল্লেখিত দুদেশ থেকে ভারত পিছিয়ে। বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে জাতীয় পরিকল্পনায় পর্যটন শিল্পকে আগ্রাধিকার প্রদান, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পর্যটন পুলিশ গড়ে তোলা, পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো, দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং পরিকল্পিত বিনিয়োগ প্রয়োজন। পর্যটন স্থানগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো আবশ্যক। নিরাপত্তার অভাব, চুরি বা ছিনতাই, রাস্তা বা ট্যুরিস্ট ¯পটের নোংরা পরিবেশ ইত্যাদি বিদেশিদের কাছে চিন্তার কারণ। অনেক ¯পটে যাগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। ট্রেন যোগাযোগ বিদেশিরা পছন্দ করে। এটি আরামদায়ক। তাই রেলব্যবস্থার উন্নয়ন ও লাইন স¤প্রসারণ করতে হবে। দক্ষগাইডের অভাব বাংলাদেশে। ইংরেজি বা বিদেশি ভাষায় দক্ষ গাইড বিদেশিদের সন্তুষ্ট করতে পারবে। এগুলো দূর করতে পারলে বিদেশিদের আকৃষ্ট করা যাবে। একটু নজর দিলে এ খাত থেকে প্রচুর আয় করা সম্ভব। এটিকে বলা হয় অদৃশ্য অর্থনৈতিক শক্তি।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক