হিমালয় ডেস্কঃ জাপানের বিখ্যাত একটি প্রবাদ হলো- ‘বাঁশের নল দিয়ে পুরো আকাশ দেখা যায় না’। কথাটির ভাবার্থ আর কেউ না বুঝলেও ভ্রমণপিপাসুরা ঠিকই বুঝতে পারেন। মানব জীবনের আহরিত সব রকম জ্ঞানের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান সম্ভবত সেটিই, যেটি অর্জিত হয় ভ্রমণের মাধ্যমে। তবে মানুষের ঘুরে বেড়ানোর মুখ্য উদ্দেশ্য কিন্তু স্রেফ আনন্দ লাভ, জ্ঞানার্জনটি তার উপরি পাওনা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শহরে, গ্রামে, জলে, হাওয়ায় কিংবা ডাঙ্গায় যারা বেড়াতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য চলতি বছরের আকর্ষণীয় দশটি ভ্রমণ গন্তব্য নিয়ে আজকের আয়োজন। চলুন, দেখে আসা যাক বছরজুড়ে কোন কোন জায়গা অপেক্ষা করছে আপনার পদচারণার জন্য!
নেপাল: কল্পনা করুন, আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘুম-ঘুম চোখে বারান্দায় গেলেন। হাত বাড়িয়ে দিতেই হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো নরম তুলোট মেঘ এসে স্পর্শ করল আপনার শরীর। কেমন লাগবে তখন? ঠিক এই স্বর্গীয় অনুভূতিটা পেতে চাইলে আপনাকে চলে যেতে হবে হিমালয়কন্যা নেপালে। কাঠমান্ডু, পোখারা আর নাগরকোটে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি এখানে উপভোগ করতে পারবেন পাহাড়ের অনুপম সৌন্দর্য। নেপালের মানুষ খুবই অতিথিপরায়ণ, খাবার আর জিনিসপত্র যেমন ভালো তেমনই সস্তা। পোখারা নামের চমৎকার শহরে রয়েছে অপরূপ ফেউয়া লেক। এখান থেকেই দেখা যাবে অপরূপ হিমালয়ের কিছু অংশ। প্যারাগ্লাইডিংসহ অনেক এক্টিভিটির সুযোগ রয়েছে এই শহরে। সারাংকোট গেলে আপনি দেখতে পাবেন পৃথিবীর সুন্দরতম সূর্যোদয়! পাহাড়ের চূড়ায় আছে অপূর্ব পিচ প্যাগোডা। পাহাড়ে ঘেরা নাগরকোট আর থামেলের আশেপাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে বেড়ানো যায় দিনভর। পাহাড়প্রিয় মানবের জন্য সত্যিই কিন্তু তুলনা নেই নেপালের! দারুণ এক নেপাল ট্যুরের জন্য দেখে আসুন ট্রাভেল বুকিং বাংলাদেশ এর আয়োজনগুলো, নিরাশ হবেন না মোটেও!
বালি: সাগর আর পাহাড়- এই দুইয়ের প্রেমে যারা একইসাথে মত্ত, তাদের জন্য বালি’র বিকল্প কোনো জায়গা নেই। ভিসা করার ঝামেলা ছাড়াই ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বেশ কয়েকদিন কাটিয়ে দিয়ে আসতে পারেন অনায়াসে। এখানে রয়েছে অপরূপ নুসা দুয়া সমুদ্র সৈকত, যেখানে সি-ওয়াকিং, প্যারাসেইলিং, স্কুবা ডাইভিং, স্নোরকেলিংসহ মজার মজার সব ওয়াটার এক্টিভিটিজ করা যায়। সমুদ্রের গভীরে রঙিন মাছের খেলা দেখে মন ভরে যাবে যে কারোরই। এছাড়া রয়েছে উলুয়াটু মন্দির, কেচাক নৃত্য, জিম্বারান ও পান্তাই পান্ডোয়া সমুদ্র সৈকত। নৌকা ভাড়া করে দ্বীপের চারদিকে ঘোরার ব্যবস্থাও আছে। খাবার আর জিনিসপত্রের দাম তুলনামূলক বেশি হলেও সৌন্দর্যের দিক থেকে তা পুষিয়ে দেবে জায়গাটি। সেইসাথে ঘুরে আসতে পারেন মায়াময় এক দ্বীপপুঞ্জ গিলি থেকেও। গিলি ত্রাওয়ানগান, গিলি মেনো আর গিলি এয়ার- এই তিনে মিলে গড়ে ওঠা দ্বীপপুঞ্জের প্রতিটিতেই আছে পর্যটকদের জন্য দারুণ সব আয়োজন।
ব্যাংকক: সত্যিকারের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের জন্য থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক রীতিমতো একটি স্বর্গরাজ্য! প্রকৃতি যেমন এখানে অসম্ভব বৈচিত্র্যময়, আধুনিকতায় তেমন এক তিল কমতি নেই। স্বপ্নের এই গন্তব্যস্থানে আপনি ঘুরে বেড়াতে পারবেন ওয়াট অরুণ, ওয়াট ফো এর মতো চোখ ধাঁধানো বৌদ্ধ মন্দির কমপ্লেক্সে। মিছেই একে দেবদূতের শহর বলে না। এখানে উপভোগ করা যাবে ভাসমান বাজার, লুম্ফিনি পার্ক আর চায়না টাউনের মতো সুন্দর কিছু জায়গা। ওদিকে গ্র্যান্ড প্যালেস আর জাতীয় জাদুঘরের কথা ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না! আমোদপ্রিয় মানুষের এই শহরের খাবারের রুচিও খুব চমকপ্রদ। আর যারা কেনাকাটা পছন্দ করেন, তাদের জন্য ব্যাংকক নিঃসন্দেহে অতুলনীয় এক জায়গা! ব্যাংকক ভ্রমণের দারুণ সব অফার দিচ্ছে ট্রাভেল বুকিং বাংলাদেশ, ছুটিটা কাটিয়ে আসুন আনন্দময় সব মুহূর্তের মাঝে।
সিঙ্গাপুর: একই সাথে পরিচ্ছন্ন আর নিরাপদ, এমন জায়গা ঘুরতে কে না ভালোবাসেন? জীবনযাত্রার মানের দিক দিয়ে এশিয়ার চতুর্থ স্থানে থাকা সিঙ্গাপুরের রাস্তা এতই নিরাপদ যে, রাতের যেকোনো মুহূর্তে যে কেউ রাস্তায় অবাধে চলাচল করতে পারেন। সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত এই দেশটি পর্যটকদের জন্য এক দারুণ আকর্ষণ। এখানে দেখার মতো অনেক অনেক জায়গা আছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানা, মারলায়ন পার্ক আর হিস্টোরি মিউজিয়াম বা ইতিহাস যাদুঘর খুবই বিখ্যাত। তাছাড়াও আছে সিঙ্গাপুর ফ্লাইয়ার, বৃহত্তম এই নাগরদোলায় চড়ে উপভোগ করা যায় সমস্ত শহরের সৌন্দর্য। তবে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো গার্ডেনস বাই দ্য বে নামক পার্কটি। বিশাল এই পার্কটি আপনার মনকে সতেজ করে দেবে এক নিমিষে। সব মিলিয়ে ঘোরাঘুরির জন্য অসাধারণ একটি জায়গা সিঙ্গাপুর।
কুয়ালালামপুর: এশিয়ার মাঝে এক টুকরো ইউরোপ কোথায় পাওয়া যেতে পারে? সেটি আর কোথাও নয়, মালয়েশিয়ায়! এই দেশের রাজধানী কুয়ালালামপুর প্রতিনিয়ত যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণ পাগল মানুষদের। পাহাড়, সাগর, সুউচ্চ স্থাপনা, কেনাকাটার স্থান- কী নেই এখানে? এই শহরেই আছে মালয়েশিয়ার গর্ব টুইন টাওয়ার, যা বিখ্যাত দুনিয়াজুড়ে। আরও রয়েছে ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি, পুত্রজায়া ব্রিজ, রয়্যাল প্যালেস, এগ্রিকালচারাল পার্ক, ন্যাশনাল বোটানিক্যাল গার্ডেন, অর্কিড পার্ক, বার্ড পার্কসহ মন জুড়ানো সব জায়গা। রয়েছে বাটু কেভ নামে একটি বিখ্যাত গুহা, যা দেখতে হলে পার হতে হবে ২৭০টি সিঁড়ি। সেইসাথে মনোমুগ্ধকর থিম পার্ক তো আছেই! এছাড়া লাঙ্কাউইতে উপভোগ করতে পারেন ক্যাবল কার, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, ঝর্ণা আর সাগরের তলদেশ দিয়ে রাস্তার মতো দারুণ আকর্ষণীয় সব জায়গা।
ভূটান: থান্ডার ড্রাগনের দেশ ভূটানে প্রকৃতি যেন একটি তীর্থভূমির রূপে সাজিয়ে নিয়েছে নিজেকে। এদেশের মানুষ এখানকার প্রকৃতির মতো সুন্দর আর স্বচ্ছ। ঘন সবুজে ঢাকা নিরিবিলি এই দেশটি তাই ভ্রমণপ্রিয় মানুষের নজর এড়াতে পারে না। ছোট্ট এই দেশটিতে দেখার মতো রয়েছে অনেককিছুই। আছে পারো শহরের উত্তরে খাড়া পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত টাইগার’স নেস্ট বৌদ্ধবিহার, যা দেখতে হলে উঠে যেতে হয় পাহাড় বেয়ে। আছে ভুটানের সর্ববৃহৎ সংরক্ষিত বনাঞ্চল জিগমে দর্জি ন্যাশনাল পার্ক, যেখানে দেখা মিলবে প্রাচীনতম সব গাছ আর দুর্লভ অর্কিডের। পারো শহর থেকে খানিক দূরেই আছে মোহময় চ্যালেলা পাস। এতই সুন্দর এই জায়গা যে, চোখ ফেরানো যায় না। সেইসাথে যাওয়া যায় ভুটানের উর্বরতম ভ্যালি পুনাখায়, নৈসর্গিক সৌন্দর্য ডালি মেলে আছে যেখানে। এছাড়া রাজধানী থিম্পুতেও ঘুরে বেড়ানো যাবে মনের মতো করে, আর কেনাকাটাও করা যাবে খুব কম খরচে। আর আকর্ষণীয় সব প্যাকেজে ভূটান ভ্রমণ করতে এক ঝলকে ঘুরে আসুন ট্রাভেল বুকিং বাংলাদেশ থেকে!
দুবাই: দুবাই! শুনলেই অনেকের চোখ স্বপ্নালু হয়ে ওঠে। সুখের জায়গা দুবাই, বাতাসে ভেসে বেড়ানো রেণুতেও যেন সুখের আবেশ। স্কাই স্ক্র্যাপারের শহর দুবাই, যেখানেই চোখ যায় দেখা মেলে আকাশচুম্বী ভবনের। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি প্রদেশের মাঝে প্রধান প্রদেশটিকে আমরা সবাই চিনি দুবাই নামে। বিচিত্র সংস্কৃতির সব মানুষ একই ভূমিতে বাস করে বলে এটি এক বহুজাতিক জায়গা। এখানে রয়েছে খাওয়া-দাওয়ার বিচিত্রতা, সুস্বাদু রসনাবিলাসের সমারোহ। বর্ণিল সংস্কৃতির ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলা যায় সহজেই। জুমেইরাহ সৈকত, মেরিনা সৈকত, আল মামজার সৈকত, আজুর সৈকতসহ অপরূপ কিছু বেলাভূমি রয়েছে এখানে। আছে বিশ্ববিখ্যাত পাম আইল্যান্ড, যা এক নজর দেখতে সারা পৃথিবীর লোক ভীড় করে এখানে। আর বুর্জ খলিফার কথা তো না বললেই নয়! ৭ তারকাবিশিষ্ট এই হোটেলে রয়েছে বিলাসবহুল সব আনন্দের ব্যবস্থা, জৌলুসের ছড়াছড়ি। সত্যিই, দুবাই যাত্রাকে বলা চলে এক স্বপ্নের ভ্রমণই!
ফিজি: প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ধনী কিন্তু ছোট্ট একটি রাষ্ট্র হলো ফিজি। আমুদে এই দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই উন্নত। আগে থেকে ভিসা করানোর ঝামেলা নেই এখানে, তাই চাইলে ঘুরে আসা যায় সহজেই। অত্যন্ত সুন্দর এই দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্র সৈকতও খুব চমৎকার। প্রবাল, নুড়ি, শুভ্র বালি আর পাম গাছে সাজানো এর বেলাভূমি। এখানে আছে নয়নকাড়া সৌন্দর্যের অধিকারী তাভোরো জলপ্রপাত। তাভোরোতে রয়েছে তিনটি প্রাকৃতিক সুইমিং পুল, যেখানে করা যাবে বিভিন্ন ধরনের ওয়াটার এক্টিভিটি। সার্ফিং-এর জন্য চমৎকার ঢেউয়ের দেখা পাওয়া যাবে এখানে। সব মিলিয়ে ছোট্ট সুন্দর ফিজিকে এবছরে ঘুরে আসার তালিকার একটি দেশ হিসেবে রাখাই যায়। আর যদি সেক্ষেত্রে সহায়তা নেন ট্রাভেল বুকিং বাংলাদেশ এর কাছ থেকে, থাকা-খাওয়া কিংবা যাতায়াতের ব্যবস্থা- সবকিছু নিয়ে পুরো ভ্রমণজুড়েই থাকতে পারেন নিশ্চিন্ত আর নির্ভার।
মালদ্বীপ: প্রবাল দ্বীপের সান্নিধ্যে অসীম জলরাশির বুকে সময় কাটাতে পছন্দ করেন কম-বেশি সবাই-ই। এই প্রবাল রাজ্যেরই একটি বৃহৎ সংস্করণ রয়েছে এশিয়ার বুকেই, যাকে বলা হয় প্যারাডাইজ অন আর্থ- অর্থাৎ পৃথিবীর বুকে স্বর্গ! ভারত মহাসাগরের নীলবর্ণের জলের বুক চিরে জেগে ওঠা প্রবালরাশি থেকে গড়ে উঠেছে এই দ্বীপসাম্রাজ্য। প্রিয়জনের সাথে একান্তে নীরবে কিছুদিন কাটাতে চাইলে মালদ্বীপ সেই তালিকায় সবার প্রথমেই চলে আসে। প্রকৃতি এখানে এখনও নিজের মতো সুন্দর, মানুষের কৃত্রিম ছোঁয়া কমই লেগেছে। এখানে আছে সাগরের স্ফটিক পানিতে সাঁতরে বেড়ানো কিংবা লেগুনের নীল জলে রঙিন মাছের খেলা দেখার অবারিত সুযোগ। রাজধানী মালে শহরে রয়েছে দর্শনীয় কিছু স্থান। সব মিলিয়ে এক নির্মল সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই প্রবালরাজ্যটি। বরাবরের মতো ট্রাভেল বুকিং বাংলাদেশ থাকছে মালদ্বীপ ভ্রমণের সঙ্গী হতে, দারুণ সব অফার আর আকর্ষণীয় প্যাকেজ নিয়ে!
দার্জিলিং: কথায় বলে, শরীর বা মন খারাপ হলে দরকার হাওয়া বদল। আর হাওয়া বদলের জায়গার জন্য আমাদের পরিচিত সব জায়গার মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ভারতের দার্জিলিং শহর। ছবির মতো সুন্দর এই শহরটিকে বলা হয় শৈল শহরের রাণী। মনোরম আবহাওয়া যাদের পছন্দ, তারা খুবই কম খরচে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন দার্জিলিং থেকে। চমৎকার ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, টয় ট্রেন আর মন মাতানো চায়ের সমন্বয় দার্জিলিংকে করে তুলেছে অসম্ভব জনপ্রিয়। এখানে আছে ভারতের সবচেয়ে উঁচু রেলওয়ে স্টেশন ঘুম। দার্জিলিং চিড়িয়াখানা, জাদুঘর আর আর্ট গ্যালারিও দেখার মতো। এখান থেকে দেখা মেলে পৃথিবীতে স্রষ্টার সুন্দরতম উপহার কাঞ্চনজঙ্ঘার, যেখান থেকে দু’ চোখ ভরে উপভোগ করতে পারেন প্রকৃতিকে। বিশুদ্ধ পানির অবিরাম নহর ভিক্টোরিয়া ফলসও আছে এই দার্জিলিং-এ। মেঘের এই দেশটির মানুষগুলোর মনও মেঘের মতোই কোমল।
Previous Postসর্বাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন বাংলাদেশের পাঁচ তারকা হোটেল
Next Postস্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের তাৎপর্য
Related articles
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।
HimalaySep 20, 2023