হিমালয় ডেস্কঃ নুরুল হক নুরু, কোটা আন্দোলনের নেতা থেকে নির্বাচিত হলেন ডাকসুর ভিপি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনের পরদিনটি নাটকীয়তায় ভরা ছিল। আগের দিন সোমবার গভীর রাতে যখন সহসভাপতি (ভিপি) পদে বিজয়ী হিসেবে নুরুল হকের নাম ঘোষণা করা হয়, তখন ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। নুরুলকে তাঁরা ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিও তোলেন। দুপুরে ক্যাম্পাসে এলে নুরুলকে ধাওয়াও দেওয়া হয়। এরপর হঠাৎ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী এসে নুরুল হককে বুকে জড়িয়ে ধরলে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। নবনির্বাচিত ভিপি নুরুল হক তখন বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, তা থেকে আমরা সরে এসেছি।’ কিন্তু ভোট বর্জনকারী অন্যান্য সংগঠন তাঁর এ ঘোষণা মেনে নেয়নি। তোপের মুখে পড়েন নুরুল হক। রাতে প্রথম আলোকে নুরুল হক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। ভিপি হিসেবে আপনি কি দায়িত্ব নেবেন—এর জবাবে নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবশ্যই আমি আমার দায়িত্ব নেব।’ তাহলে পুনর্নিবাচনের দাবির বিষয়ে অবস্থান কি? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি ডাকসুর পক্ষ থেকে ছাত্র–ছাত্রীদের দাবি দাওয়া আদায় করার জন্য আমার যে লড়াই সংগ্রাম করা দরকার সেটা আমি করব। আমি আমার পদ থেকে তাদের সঙ্গে মাঠে থাকব। আমি আমার পদের জায়গা তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করব। প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে রাজপথে থাকব। কারণ তারা যে দাবিটা করছে তা আমি যৌক্তিক মনে করি।’ পুনর্নিবাচনের দাবি জানালে পুরো নির্বাচনটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয় সেক্ষেত্রে ভিপি পদও প্রশ্নবিদ্ধ। এমন প্রশ্নবিদ্ধ একটা পদে গিয়ে আবার একটা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা করবেন কীভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক বলেন, ‘এরা রাতে ব্যালট বাক্সে ব্যালটে ভরে রেখেছে। বিভিন্ন ওয়েতে কারচুপি করেছে। কিন্তু ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক এই দুটি পদে এতটা ভোট পড়েছে যে তারা কারচুপি করেও ব্যালেন্স করতে পারে নাই। সে জায়গা থেকে আমরা মনে করি ছাত্রদের ম্যান্ডেটে নৈতিক জায়গা থেকে আমরা বিজয়ী হয়েছি । কিন্তু অন্য পদগুলোতে যারা বিজয়ী হয়েছে তারা জোর করে ব্যালট বাক্সে ব্যালট ঢুকিয়ে বা কারচুপি করে হয়েছে। সে জায়গা থেকে আমরা বলেছি অন্তত এ দুটি পদের বাইরে বাকি ২৩ টি পদে পুনর্নিবাচনের দরকার। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেহেতু বলছে পুরো নির্বাচনটাই আবার হওয়া দরকার সেক্ষেত্রে আমি বলেছি হ্যা সেক্ষেত্রে আমার পদেও আবার পুনর্নিবাচন হওয়া দরকার। সেটায় আমি একমত। আমি সেই আন্দোলনেও তাদের সাথে থাকবো। আমি যেহেতু ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছি এবং এটা একটা গ্রেটার দাবি সেক্ষেত্রে আমিও তাদের সাথে থাকবো।’ বিষয়টা কনট্রাডিক্টরি হয়ে যায় না—‘কিছুটা কনট্রাডিক্টরি মনে হতে পারে আপনাদের কাছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এটা ছাড়া আর কিছু করার নেই।’ পদ নিতে কোনো ধরণের চাপ আছে কি না? সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, না কোনো চাপ নাই। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে কথা বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নবনির্বাচন ভিপি নুরুল হক বলেন, ‘ওদের সাথে ডিসকাস করেছি। ওরা সেটাই পরামর্শ দিয়েছে। যেহেতু নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে, প্রশ্নবিদ্ধ প্রক্রিয়ার নির্বাচন হিউক আর যাই হউক ছাত্রদের জন্য বেশি কথা বলা যাবে। সেখান থেকে আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করা যাবে। কিন্তু আমি যদি দায়িত্বই না নেই। তাহলে তো আমি প্রতিনিধিই না। সেটা খুব বেশি রিজনেবল হবে না।’ যাদের সঙ্গে এক হয়ে ভোট বর্জন করেছিলেন তারা কি চায় ভিপি হিসেবে যোগ দেন? উত্তরে নুরুল হক বলেন, ‘কৌশলগত কারণে অনেক কিছু হিডেন থাকে। অনেক কিছু ওপেন বলা যায় না। আমি বরাবরই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গি ছিলাম, আছি, থাকবো। আর ডাকসুর পুনর্নিবচানের যারা দাবি করছে আমি মনে করি তাদের দাবি একশ পারসেন্ট যৌক্তিক। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষন করে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’ কারচুপির অভিযোগে প্রথম দিন আপনার অবস্থান ছিল ভোট বর্জন, দাবি আদায়ের জন্য আজ সকালে ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচিও দিলেন, এরপর ছাত্রলীগ সভাপতির সঙ্গে আপনার কোলাকুলি হলো, আপনি কর্মসূচি স্থগিত করে দিলেন, তারপর আবার সন্ধ্যায় বললেন আন্দোলনে অংশ নেবেন, আপনার অবস্থানটা তাহলে কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভিপি পদে দায়িত্ব নিয়েই আমি সবকিছু করবো।’ ভোট বর্জনকারী অন্যান্য সংগঠনও কি চায় আপনি দায়িত্ব নেন এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক বলেন, ‘তাদের অবস্থান ছিলো আমি দায়িত্ব না নেই।’ সেক্ষেত্রে কি ভাঙন হলো, ‘না ভঙন হবে না আশা করি।’ দাবি আদায়ে তারা বুধবার উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেবে সেখানে আমিও থাকব।’
ভিপি পদে জয়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। ডাকসু নির্বাচনে নুর পেয়েছেন ১১ হাজার ৬২ ভোট। শোভন পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট। নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে জয়লাভ করেছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এছাড়া সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) নির্বাচিত হয়েছেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।
ডাকসু নির্বাচনের ২৫টি পদের দুটি বাদে অন্যগুলোতে ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের অপর জয়ী প্রার্থী হলেন সমাজসেবা সম্পাদক পদে আখতার হোসেন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক সাদ বিন কাদের, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, কমনরুম ও ক্যাফেটরিয়া সম্পাদক বিএম লিপি আক্তার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরিমা তানজিনা অর্নি, সাহিত্য মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহামদ তানভীর, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস ই নোমান বিজয়ী হয়েছেন। সদস্যদের মধ্যে যারা জয়ী হয়েছেন তারা হলেন- চিবল সাংমা, নজরুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, ফরিদা পারভীন, নিপু ইসলাম তন্বী, হাইদার মোহাম্মদ জিতু, তিলোত্তমা শিকদার, জুলফিকার আলম রাসেল এবং মাহমুদুল হাসান।