অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা এনে মায়ের মুখে হাসি ফোটাবেন এমন স্বপ্ন নিয়ে মাস খানেক আগে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসেন বাবাহারা মো. হেলাল শিকদার। জীবনে প্রথমবার অচেনা এই ঢাকায় এসেই চকবাজারে কাজের সন্ধান পেয়ে যান। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও মায়ের মুখের হাসি দেখার স্বপ্নে বিভোর এই তরুণ প্লাস্টিক দানা বহনের সেই কাজে যোগ দেন বিনাদ্বিধায়। কিন্তু ভাগ্যের কী নিষ্ঠুর পরিহাস ঢাকায় এসে থিতু না হতেই আগুনে দগ্ধ হতে হলো হেলালকে। গত বুধবার পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এই তরুণকে দগ্ধ করার পাশাপাশি পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে তার স্বপ্নকেও।
শরীরের ১৬ শতাংশ পোড়া নিয়ে হেলালের এখন স্থান হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে। অবশ্য হেলাল দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন এমন আশার কথা শুনিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আগুনে দগ্ধ হেলালের হাতে ৫০ হাজার টাকা সহায়তাও তুলে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সহায়তার টাকা নিতে এসে হেলাল বলেন, আমরা দুই ভাই। আমাদের বাবা নেই। মা বরিশালের গ্রামের বাড়িতে থাকেন। অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে মায়ের মুখে হাসি ফোটাব এই আশাই দুই ভাই এক সঙ্গে ঢাকায় এসেছি এক মাসও হয়নি।
তিনি বলেন, আমি চকবাজারের একটি কারখানার প্লাস্টিকের দানা বহনের কাজ করতাম। ওই দিন ঠেলাগাড়িতে করে প্লাস্টিকের দানা নিয়ে কারখানায় যাচ্ছিলাম। এমন সময় বিকট শব্দ হয়ে আগুন ধরে যেতে দেখি। কোথা থেকে কী হচ্ছিল কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সবাই আতঙ্কে ছোটাছুটি করছিল।
‘ভাগ্যের জোরে আমি বেঁচে গেছি। চোখের সামনে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখেছি। নিজ চোখে না দেখে সেই দৃশ্য অনুমান করা যায় না। কী ভয়নক অবস্থা ছিল কাউকে বলেও বোঝানো যাবে না। আমার চোখের সামনে সবসময় সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য ভেসে আসছে। ঢাকার থাকার আর কোনো ইচ্ছা নেই’ বলেন হেলাল। তিনি বলেন, আমি যে কাজ নিয়ে ছিলাম তা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু অভাবের সংসারের কথা চিন্তা করে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে দ্বিধাবোধ করিনি। আমার পাশে একজন থাকতো সে আমাকে বলে তুই এই বয়সে এমন কাজ কেন নিলি। দেশের বাড়ি থেকেও মা বলতো দেখতে যেতে। ঠিকও করেছিলাম কিছুদিনের মধ্যে দেশের বাড়িতে যাব। এর মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে গেল।