হাউটুয়া ওন, চীনের গ্রিন ভিলেজ Houtuo On, China’s Green Village
HimalayFeb 22, 2019পর্যটন, ফিচার
হিমালয় ডেস্কঃ হাউটুয়া ওন নামের এই গ্রামটি চীনের পূর্ব সাংহাইয়ের পাহাড়ে ঘেরা একটি পাথুরে দ্বীপে অবস্থিত। দ্বীপটির নাম সেংগসান। এই দ্বীপটি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে অধিবাসীরা অনেকেই দ্বীপ থেকে মূল ভুখন্ডে গিয়ে বসবাস শুরু করেছে। আর এই দ্বীপের সব চেয়ে বড় পরিত্যক্ত গ্রামটিই হচ্ছে গ্রিন ভিলেজ বা হাউটুয়া ওন। ধারণা করা যায় যে- এই গ্রামে বাস করতো দুই হাজারেরও বেশি মানুষ। কিন্তু প্রায় ৫০ বছর ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পরে আছে গ্রামটি। ফলে ধীরে ধীরে গ্রামটিকে গ্রাস করে নিয়েছে সবুজ প্রকৃতি। চারপাশে শুধু সবজ আর সবুজ। ছোট- বড় গাছপালায় ছেয়ে গেছে সব দিক। এমনকি রাস্তাঘাট, বাড়িঘর- সবই ঢেকে যাচ্ছে গাছের অন্তরালে।
কীভাবে পাওয়া গেল গ্রামের সন্ধান: মাত্র কয়েকবছর আগে এই গ্রামের সন্ধান পাওয়া যায়। কয়েকজন পর্যটক দ্বীপটিতে বেড়াতে গিয়ে পথ ভুলে এসে পরেন এই গ্রামে। তারাই আবিষ্কার করেন গ্রামটিকে। গ্রামের সব চেয়ে পুরনো বাসিন্দা সান অয়োর দেখা পান তারা। সেই তাদেরকে গ্রামটি ঘুরে দেখান। পর্যটকরা ঘুরে ঘুরে অনেক ছবি তোলেন গ্রিন ভিলেজ এর। তাদের তোলা সেসব ছবি ও গ্রামের বর্ণনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পরে দ্রুত। এরপর থেকেই এই গ্রামের সৌন্দর্যের সুধা পান করতে দলে দলে মানুষ এসে উপস্থিত হচ্ছে এই গ্রামে। পরিত্যক্ত এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেয়াল ঢেকে গেছে নানা লতাপাতায়। লতাপাতা জড়িয়ে এক নান্দনিক সবুজের সমারোহের সৃষ্টি করেছে চারপাশে। এর সৌন্দর্য যে কাউকেই সহজে কাছে টানে আনতে পারে। গ্রামে যেসব পর্যটক আসেন তাদেরকে গ্রাম ঘুরিয়ে দেখান এখানকার একমাত্র বাসিন্দা সান আয়ো। এ কাজে তিনি খুব মজা পান।
গ্রিন ভিলেজ এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য: এই গ্রামে গেলে আপনি মুগ্ধ যাবেন। চারপাশ দেখে মনে হবে প্রকৃতি যেন দুই হাত ছড়িয়ে নিজেকে মেলে ধরেছে এখানে। চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ। বাড়ি ঘর থেকে শুরু করে টয়লেট, রাস্তা বাড়ির দেয়াল সবকিছুই সবুজ। দেখলে মনে হয় যেন কেউ শখের বসে সুন্দর করে এসব সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিন যাবত পরিত্যাক্ত থাকায় প্রাকৃতিকভাবেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চারপাশে পাহাড় আবৃত সুন্দর এই গ্রামটি পাহাড় কেটেই তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারনা করা হয়। পাহাড় কেটে ছেটেই তৈরি করা হয়েছিল গ্রামের সব ঘরবাড়ি। এ ছাড়া পাহাড়ি এই গ্রামে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি যাতায়াতের জন্য সুন্দর করে পাহাড় কেটে রাস্তাও তৈরি করা হয়েছিলো। এখনো রয়েছে সেসব রাস্তা। গ্রামের ঢুকলে মনে হয় সময় যেনো সেখানে থেমে আছে। আর আছে প্রকৃতির দুহাত বাড়িয়ে থাকা হাতছানি। ছোটো ছোটো সবুজ লতায় আবৃত হয়ে থাকা সব ঘরবাড়ি। আঙ্গুরের লতার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখাগুলো পরিত্যক্ত বাড়িগুলোকে জড়িয়ে রেখে সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
কেন মানুষে চলে গেল এই গ্রাম ছেড়ে: গ্রামটি শহর থেকে অনেক দূরে। জলপথে সাংহাই থেকে গ্রামটিতে যেতে সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা। গ্রামটির আয়তন ৫০০ বর্গকিলোমিটার। ধারনা করা হয় এক সময় এখানে দুই হাজার জেলে পরিবারের বাস ছিলো। যারা সবাই একসময় এই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। তবে সবাই চলে যায়নি। মায়ার টানে মাত্র ১৮ জন গ্রামবাসি রয়ে যায় এখানে। এখনও তারা বাস করছে সেখানে। তাদেরই একজন জানান যে- হাউটুয়া ওন গ্রামটি শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় কারণে শহরের সকল সুবিধা থেকে তারা ছিল বঞ্চিত এখানকার মানুষেরা। এজন্য শহুরে জীবনের তাগিদে, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধার কারণে আস্তে আস্তে সবাই গ্রাম ছেড়ে শহড়ে পাড়ি জমায়। তবে শীতের সময় এখনো এই গ্রামের অনেকেই ফিরে আসে। প্রায় ১০ হাজার জেলে মাছ শিকার করতে চলে আসে এখানে। শীতে এখানে গড় তাপমাত্রা থাকে ১৫.৮ সেলসিয়াস। তবে জেলেরা মাছ ধরতে ফিরে আসলেও তারা আর এখানে বসবাস করতে চায় না। মাছ ধরা শেষে আবার একে একে সবাই চলে যায় শহরের টানে।