বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব দিগন্তে অবস্থিত ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা। বিপুল সম্ভাবনা আর প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের ডালা সাজিয়ে প্রকৃতি যেন কারো জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে।
তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীটি যেন রূপ, সম্পদ ও সমৃদ্ধির নদী। সৌন্দর্যের ষোলকলায় পরিপূর্ণ এক লীলাভূমি যাদুকাটা নদী। দেশের এ প্রান্তিক জনপদটিতে বিধাতা যেন প্রকৃতি-অকৃপণ হাতে বিলিয়ে দিয়েছে অফুরন্ত সম্পদ, সম্ভাবনা আর অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য। নীল আকাশে সাদা মেঘের খেলা। কখনো জমাট আবার কখনো হালকা বাতাশে দলছুট হয়ে পাগলা ঘোড়ার মত উত্তরে দাঁড়ানো আকাশে ছোঁয়া বিশাল মেঘালয়ের খাসিয়া পাহাড়ে গিয়ে আছড়ে পড়ছে।
এ দৃশ্য যখন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত বারেকটিলা সংলগ্ন যাদুকাটা নদীর প্রান্তে ফুটে উঠে তখন যে কেউ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য। সীমান্ত নদী যাদুকাটার রূপের কোনো শেষ নেই। এ রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার দর্শনাথী ও পর্যটক সেখানে উপস্থিত হচ্ছেন। প্রায় সারা বছরেই পর্যটকদের মিলন মেলায় পরিণত হয় যাদুকাটা নদীর তীর। দিন যতই যাচ্ছে বাড়ছে যাদুকাটা নদীর প্রতি সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকের সংখ্যা।
যাদুকাটা নদী যেমন সৌন্দর্য্যরে আধার, তেমনি এ থেকে জীবিকার ব্যবস্থা করে নিচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। নদী থেকে বালি, পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছে তারা। নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি শ্রমিকদের এই বালি-পাথর উত্তোলনের এই দৃশ্যও বিমোহিত করে দর্শকদের।
ভারতীয় মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে আসা ১৮টি পাহাড়ী ছড়ার সেখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্য আরো বেড়ে গেছে। বর্ষায় এসব পাহাড়ী ঝর্নায় চোখ জুড়িয়ে যায় অতিথিদের। সেখানে পাহাড়ী নদীর সাথে যুক্ত আছে শাহ আরেফিন আউলিয়ার আস্তানা, হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান ও সাতশত ফুট উচ্চতাসম্পন্ন বারেকটিলার নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
পাশেই আছে দেশের বৃহত্তর শিমুল বাগান। এক সাথে একাধিক সৌন্দর্য দেখার মত এমন স্থানের সন্ধান পাওয়াটাও সত্যিই কঠিন। তাই এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিড় করছে শত শত সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটক।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়ের বুক চিড়ে পাহাড়ী ঝর্নার পানি মিলিত হয়েছে সীমান্ত নদী যাদুকাটায়। ২৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ নদীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বালু, পাথর ও নুড়ি পাথর উত্তোলন।
বছরের ১২ মাসেই ২০ হাজারের বেশি পাথর শ্রমিক পরিবার জীবিকার তাগিদে এ কাজ করে চলছে। এই নদীর আরোহিত বালু, পাথর ও নুড়ি পাথর দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগায়।
বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে জলের স্রোতধারা শুকিয়ে যায় হেমন্তে। তখন যাদুকাটার বুকে দেখা যায় ধু ধুু বালুচর। এ যেন আরবের কোনো মরুভূমি। ভারতের সারি সারি উঁচু নিচু মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ও বারেক টিলার বুকে ঘন সবুজের সমারোহ যাদুকাটায় বেড়াতে আসা পযটকদের আরো আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়।
যাদুকাটা নদীতে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী স ম খোকন, মেহেদী হাসান ভূঁইয়াসহ অন্যরা জানান, এই অপরূপ সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না। এত সুন্দর পাহাড়- নদীর সম্মিলন খুব একটা দেখা যায় না। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, থাকা-খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা না থাকায় বেড়াতে আসা লোকজনের কষ্ট হচ্ছে।
অন্য দিকে সীমান্তের চিহ্নিত চোরাচালানীরা বারেকটিলা, যাদুকাটা নদীকে অবলম্বান করে মাদকের চোরাচালান করছে। এগুলোর কারণে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান, টাঙ্গুয়ার হাওর, টেকেরঘাট, বারেকটিলা ও যাদুকাটা নদীতে দেশ-বিদেশের পর্যটক সারা বছরেই বেড়াতে আসেন। এখানে সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে ইকোট্যুরিজম স্থাপন করা হলে সরকারের যেমন রাজস্ব আয় হবে তেমনি এই এলাকার স্থানীয় বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।