মোঃ এমদাদ উল্যাহঃ বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক বালুময় সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত। দেশের সর্ববৃহৎ এই পর্যটন কেন্দ্রটির দৈর্ঘ্য ১২০ কিলোমিটার। রাজধানী ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কিলোমিটার এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ১৫২ কিলোমিটার। সড়ক ও বিমানপথে কক্সবাজারে যাতায়াত করা যায়।
ভোরের আকাশে পূর্ব পাহাড়ের পেছন থেকে কাঁসার থালার মতো বেরিয়ে আসা সূর্য, সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মায়াবী রূপ, দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, সারি সারি ঝাউবন, সৈকতের বুকে আছড়ে পড়া একেকটি ঢেউ, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে জেলেদের কর্মচাঞ্চল্য কক্সবাজার সৈকতের সৌন্দর্য্য। সৈকতের মেরিন ড্রাইভ সড়কটি খুবই সুন্দর। এ সড়কে যতদূরে যাবেন পুরোটাই মুগ্ধ করবে ভ্রমণপিপাসুদের। একপাশে পাহাড় ও অপর পাশে সমুদ্র ভ্রমণপিপাসুদের হৃদয় জুড়ে যায়।
এই সকল সৌন্দর্যের আয়োজন নিয়েই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকুলে রয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। দেশের ভিতরে কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে দেখা যায় প্রথমে অবশ্যই কক্সবাজারের নাম এসে যায়। কেবল মাত্র দেশীয় পর্যটকই নয়, বিদেশ থেকেও প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসে। সম্প্রতি সাংবাদিক এমরান হোসেন বাপ্পি, বেলাল হোসেন, রেজাউল করিম রাসেল, ব্যবসায়ী আজিুল্লাহ চৌধুরী এবং আমি মোঃ এমদাদ উল্যাহ, কক্সবাজার’ ভ্রমণে যাই। কুমিল্লা থেকে প্রিন্স সৌদিয়া বাসযোগে রাত সাড়ে নয়টায় আমরা রওয়ানা করি। ভোর চারটায় কক্সবাজার পৌঁছে একটি হোটেলে অবস্থান করি। এরপর শুক্রবার সকালে মহেশখালি ও সোনাদিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্পিডবোট ঘাটে পৌঁছি। সেখান থেকে স্পিডবোট রিজার্ভ নিয়ে প্রথমে নিরিবিলি সমুদ্র সৈকত সোনাদিয়া দ্বীপ শুটকি পল্লীতে যাই। জানলাম জেলেদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে। এরপর স্পিডবোট যোগে পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালির পর্যটন ঘাটে পৌঁছাই। কক্সবাজার থেকে নৌপথে মহেশখালীর দূরত্ব ১২ কিমি। স্পিডবোটে যেতে সময় লাগে ৪০-৪৫ মিনিট। মহেশখালিতে আছে জলাভূমি আর প্যারাবন। শীতের মৌসুমে এখানে প্রচুর অতিথি পাখির সমাগম ঘটে। এখানে পাহাড় চূড়ায় রয়েছে আদিনাথ মন্দির। কিছু দুরে রয়েছে স্বর্ণ মন্দির। অপরূপ সৌন্দর্যের আধার এই দ্বীপের আয়তন ৩৬২.১৮ বর্গ কিলোমিটার। সাগর ঘেরা দ্বীপে রয়েছে কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, ছোট বড় খাল বিশিষ্ট প্যারাবন। আরো আছে বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি। এই দ্বিপের সৈকত জুড়ে রয়েছে অজস্র লাল কাঁকড়া। আমরা মহেশখালির পাহাড়ের চুড়ায় থাকা আদিনাথ মন্দির ও কিছু দুরে স্বর্ণ মন্দির পরিদর্শন করি। স্থানীয় মসজিদের জুমার নামাজ শেষে পূণরায় স্পিডবোটযোগে কক্সবাজার ফিরে আসি। বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ ও সন্ধ্যায় শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত ‘রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড’ পরিদর্শন করি। সেখানে রয়েছে সামুদ্রিক প্রাণিদের জীবন্ত প্রদর্শনী। এটি দেখে সকলেই মুগ্ধ হন। রাতে হোটেলে অবস্থান শেষে শনিবার সকালে আবারও কলাতলী ও লাবনী সৈকতে গিয়ে গোসল, ফুটবল খেলা, ফটোসেশন, হৈ হুল্লোড় নিয়ে ব্যবস্ত থাকি। বেলা সাড়ে দশটার দিকে হোটেলে ফিরে গোসল শেষে অটোরিকশা যোগে মেরিন ড্রাইভ সড়ক পরিদর্শনে বের হই। এই সড়কের পাশে রয়েছে হিমছড়ি ও ইনানী সৈকত। ইনানী সৈকতে বিকেল বেলায় পাথর দেখতে অনেক সুন্দর। এরপর রাতে কুমিল্লার উদ্দেশ্য রওয়ানা করে ভ্রমণ শেষ হয়। সরকারি চাকুরীজীবিদের জন্য এভাবে ভ্রমণ বেশ আনন্দদায়ক মনে হবে।
কক্সবাজারে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে-কলাতলী সৈকত, লাবনী সৈকত, সেন্টমার্টিন, মহেশখালি, সোনাদিয়া, বার্মিজ বাজার, শুটকি বাজার, লাইট হাউস, মাহাসিংদোগী বৌদ্ধ খ্যাং, মাথিনের কুপ, বদর মোকাম মসজিদ, চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, কানা রাজার সুড়ং, কুতুবদিয়া দ্বীপের বাতিঘর, শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ শাপলা সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি ভ্রমণ শেষে আবার ঢাকায় ফিরে আসি।
[email protected]
মুঠোফোন : ০১৮১২ ৫৯ ৬১ ৮৩