এ এস এম জাফর উল্লাহঃ ভ্রমণ মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি। ভ্রমণ ভালবাসে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া কষ্টসাধ্য। এ কারণে এ নেশায় মানুষ পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছে। চলার যেন নাইকো শেষ। তাইতো প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গেয়েছেন-
”থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে,
দেখবো এবার জগৎটাকে
কেমন করে ঘুরছে মানুষ
যুগান্তরের ঘূর্নিপাকে”
ভ্রমণপিপাষু মানুষকে চিরকাল ধরে আকর্ষণ করে চলেছে স্রষ্টার সৃষ্টি অন্যন্য সুন্দর বৈচিত্রময় সবুজে ঘেরা বন-বনানী, সমূদ্র-নদী, পাহাড়-পর্বত, ঐত্যিহাসিক ব্যক্তিবগের্র রাজত্বকালের স্থাপত্যশৈলী, নির্দশন ও স্থান, মনীষীদের সমাধি স্মৃতিস্তম্ভ ইত্যকার চিত্তাকর্ষক বিষয়াবলি। ভ্রমণ এক নেশা। এ নেশা মানুষকে ঘর ছাড়া করেছে, বেরিয়ে পড়েছে গ্রাম থেকে সমূদ্র কুলে, উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরুতে, নায়েগ্রা জলপ্রপাত থেকে এভারেষ্ট-এর পর্বত শৃঙ্গ পর্যন্ত। এ আর্কষনের কারণে পৃথিবীতে পর্যটকদের সংখ্যা যেমন দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে পর্যটন শিল্পেরও।
প্রাকৃতিক সৈন্দর্য্যে ভরা আমাদের এ বাংলাদেশ। বৈচিত্রে ভরা বাংলাদেশে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য, বন আর শ্যামল শষ্য ক্ষেতে ঘেরা সমতল ও উঁচু নিচু পথ চলা পার্বত্য ভূমি, ঐতিহাসিক নিদর্শনের যেন নেই কোন কমতি। আর তাইতো এ সবের আকর্ষণে দেশি-বিদেশী পর্যটক যুগযুগ ধরে বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছেন। এসেছেন জগতখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা, ইবনে খালদুন, ভাষ্কো দা গামা, হিউয়েন সাং প্রমুখ।
“নিজেকে জান” সর্বজন স্বীকৃত দার্শনিক সক্রেটিস-এর একটি বাণী। যার তাৎপর্য হচ্ছে প্রথমে নিজেকে চেনো। এ সূত্র ধরে ভ্রমণের প্লানিং করলে প্রথমে নিজ দেশ বাংলাদেশকে বেছে নেয়া উচিৎ। বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেড়ানোর অনেক দর্শনীয় স্থান, যেগুলো আপনার চিন্তায় হয়তবা আগে আসেনি কখনো। নিজস্ব দ্বীপ, পাহাড়ের উঁচু-নিঁচু ঢালু ভংঙ্কর সব পথ, মেরিন ড্রাইভ, প্রাকৃতিক ঝরনা, সবুজ বন-বনানী আর প্রত্নতাত্নিক নিদর্শনসহ ইতিহাসখ্যাত স্থান সমূহতো রয়েছেই।
গত ০৩/০৭/২০১৬ তারিখে আমার কানাডা প্রবাসি বোন-ভগ্নিপতি, ০২ ভাগ্নেসহ বাংলাদেশে আসে ঈদুল ফেতর উদযাপনের উদ্দেশ্যে। বড় ভাগ্নে ঐতিহাসিক স্থানসমূহ পরিদর্শনের ইচ্ছা ব্যক্ত করলে আমরা ১৯/০৮/২০১৬ তারিখে ঐতিহাসিক ”সোনার গাঁও” ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। ভ্রমণ কথাটিতে যেমন ভাল লাগার আবেশ মিশে আছে, তেমনটি কষ্টসহ্যের বিষয়টিও ফেলনা নয়। এ দুয়ের সমন্বয়ে ভ্রমণ সর্তক হয়ে উঠবে, জ্ঞানের গভীরতাকে করবে শাণীত আর স্মৃতি রোমান্থনে খোরাক যোগাবে। অন্যকে ভ্রমণে উৎসাহিত করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
”নিরাপদ রেন্ট-এ-কার” থেকে ভাড়া করা মাইক্রোবাসটি যথারীথি সকাল ৭.০০টায় ঝিগাতলার বাসায় এসে হাজির। বোন জেসমিন (জোসিয়া) তার প্রভাষিকা ভাবী শাহানারাকে না নিয়ে বেড়াতে যাবে না। সে নাকি এ ভাবীর সুরে মায়ের কণ্ঠের ছোঁয়া পেয়ে এ বারের যাত্রায় কানাডা থেকে বাড়ীতে (বাংলাদেশে) আসার উচ্ছাস প্রবলতর হয়। অগ্যতা বেচারী ভাবী অধ্যক্ষের অনুমতিক্রমে কলেজ ডিউটি সংক্ষিপ্ত করে গাড়ীতে উঠে বসতে বেলা ১১.০০টা করে ফেলল। আর কিছুটা গেলে ১২টা বাজতো। ভাগ্যিস স্পটটি ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার অদুরে ছিল। উপরের তলার সেজ বৌকে নিতে ভুল করিনি, ভুলবো কেন – সে যে সুন্দর চা তৈরী ও পরিবেশনে সিদ্ধ হস্ত। এ কথা আমর মত চা-খোরের মুখে মানানসই।
মাইক্রোটি ঢাকা কলেজের কাছাকাছি গেলে বড় ভাগ্নে রায়াত তার নিজের শরীরের মধ্যে অস্বস্তিবোধের কথা ব্যক্ত করলে আমরা সকলে মুসড়ে পড়লাম, কেননা এ প্রোগ্রামের মধ্যমনি ছিল সে। স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করি নাই কেননা শেষ পর্যন্ত ঐ ভাগ্নে স্পট নির্ধারণ ও সফরে পরিতৃপ্ত হয়েছিল। আমাদের অন্যান্য বাচ্চাদের তুলনায় এই ভাগ্নেদ্বয় (রায়াত ও রাফাত)এর Mental Maturity অনেক হাই, আর সেজন্য তারাও বিভিন্ন পার্টিতে প্রসংসার দাবীদার হয়েছিল। ওদের মধ্যে ম্যানারস এন্ড এ্যটিকেটস এত প্রবল, তা না দেখলে বা না মিশলে বোঝান দায়।
সময় বাচানোর জন্য অভিজ্ঞ ও রাসভারী ড্রাইভার ”লাল মিয়া” ছোট বড় যাত্রীদের দিকে খেয়াল রেখে ঢাকা কলেজের সামনে দিয়ে পলাশী হয়ে চাঁনখারপোলের থেকে ”মেয়র হানিফ উড়াল সেতু” (ফ্লাইওভার) দিয়ে যাত্রা বাড়ীর দিকে গাড়ী ছুটাল। ইতোমধ্যে ছোটরা হাস্যরসে আর গল্পে মাতোয়ারা হয়ে পড়েছে। আমার ছোট ভাগ্নে রাফাত সংগত কারণে ভালভাবে বাংলা বলতে না পারার কথা, কেননা মাত্র ২ বছর বয়সে কানাডার প্রবাসী হয়ে যায় ও। ও কথা বলে ওদেশের ইংরেজী ভাষার স্টাইলে। তবে মজার বিষয় আধো আধো বাংলা বলায় চমৎকার লাগছিল তার আলাপ চারিতায়।
মাইক্রোবাসটি সোনারগাঁয়ে গিয়ে থামল নির্ধারিত পার্কিংয়ে। আমরা ঝটপট নেমে পড়লাম। প্রতিবন্ধী হওয়ায় আমার ও বোন মিস্টির টিকিটের প্রয়োজন হয়নি। বাকীদের টিকিট কেটে তাড়াতাড়ি সোনারগাঁয়ের স্মৃতি-বিস্মৃতির ধারাবাহিকতায় বর্তমানে ” বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন” নামীয় অঙ্গনে ঢুকে পড়লাম। এক এক করে এ অঞ্চলের রস-রুপ-গন্ধ নেয়ার চেষ্টায় থাকলাম যে যার মত করে।
শারীরিক অক্ষমতা থাকা সত্বেও অনুসন্ধিৎসু ভ্রমণ পিপাসু হওযায় তথ্য সংগ্রহ করা এক বাতিকে পরিণত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য ও নিজের মননশীলতা থেকে আমার আজকের এ লেখা। এ লেখা তখনই সার্থক হবে যদি সাধারণ মানুষ, সম্ভাবনাময় মানুষ, সৃজনশীল মানুষ, অনুসন্ধিৎসু মানুষ ভ্রমণে বা জানতে উদ্বুদ্ধ হয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বেষ্টিত সোনারগাঁও বাংলার প্রাচীনতম একটি রাজধানী। প্রাচীন রাজধানীর সুবাদে এখানে শুভাগমন করে ছিল যোগী-মুনী-ঋষি আর সূফী সাধক। তাদের পদচারণায় বহু কীর্তি সোনারগাঁকে করেছে চিরস্মরণীয়। বর্তমান রাজধানী ঢাকার খুব কাছেই অবস্থিত এই আকর্ষনীয় সোনারগাঁও উপজেলা। এখানে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের বিশাল চত্বরে বেশ কয়েকটি পিকনিক স্পট রয়েছে। এখানে রয়েছে গ্রাম বাংলার নানান সব স্মৃতি সম্ভার। সেগুলো হলো- লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন যাদুঘর, ঐতিহাসিক পানাম নগর, গোয়ালদী মসজিদ, গিয়াস উদ্দিন আযম সাহের মাজার ছাড়াও আরো অনেক ঐতিহাসিক ও চিত্তাকর্ষক স্থানসমূহ।
প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ করতে চাইলে ঢাকা থেকে যে কেউ পারেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেড়িয়ে আসতে। নদী-নালা, খাল বিল পরিবেষ্টিত এবং অসংখ্য গাছপালা বেষ্টিত সবুজের সমারোহ আপনাকে আকৃষ্ট করবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। ঈশা খাঁর বাড়ীটি অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী আর পানাম নগরী দর্শণে আপনাদেরকে কিছুক্ষনের জন্যে হলেও ভুলিয়ে দেবে আপনার শহুরে জীবনের ব্যস্ততা, দুঃখ আর গ্লানিকে। একঘেয়েমি দূর হওয়ার পাশাপাশি ইতিহাস, ঐতিহ্যের সান্নিধ্য পাবেন খুব কাছ থেকে। এতে করে আপনার মত বয়স্কদের রিফ্রেশমেন্টের সাথে পরিবারের ছোট বাচ্চাদের অনেক কিছ স্বচক্ষে দেখা এবং শেখা হয়ে যাবে; যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে অনেক কাজে সহায়ক হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
সোনারগাঁওঃ বিস্মৃত নগরদূর্গ ও নানামাত্রিক স্থাপত্যের নিদর্শন
অনুপম স্থাপত্যশৈলীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নান্দনিক ও নৈসর্গিক পরিবেশে ঘেরা বাংলাার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁও। প্রাচীন সুবর্ণ গ্রাম থেকে সোনারগাঁও অথবা বারভুঞা প্রধান ঈশা খাঁর স্ত্রী সোনা বিবির নাম অনুসারে এই নামকরণ করা হয়। এ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। পৌরানিক তথ্যমতে সোনারগাঁ তিন হাজার বছেরর প্রাচীন জনপদ। আনুমানিক ১২৮১ খ্রীষ্টাব্দে এই অঞ্চলে মুসলিম আধিপত্যের সূচনা হয়। মধ্যযুগে এটি মুসলিম সুলতানদের রাজধানী ছিল। বাংলার মুসলিম শাসকদের অধিনস্থ পূর্ববঙ্গের একটি প্রশাসনিক কেন্দ্রও ছিল এ টি। এই নগরীটির পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা, দক্ষিণে ধলেশ্বরী ও উত্তরে ব্রম্মপুত্র নদ দ্বারা বেষ্টিত থাকায় এলাকাটি খুব উন্নত ছিল। সেজন্য রাজা-বাদশাগণ সানন্দে সোনারগাঁয়ে বাংলার রাজধানী গড়ে তুলেছিলেন। ঈশা খাঁ ও তার বংশধরদের শাসনামলে সোনারগাঁও তাদের রাজধানী ছিল।
১৬০৮ খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ”ঢাকা” সুভে বাংলার রাজধানী হিসাবে ভুষিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সোনারগাঁও ছিল পূর্ব বঙ্গের রাজধানী। ”ঢাকা”-তে মোগল রাজধানী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সোনারগাঁও নগরীর দ্রুত অবক্ষয় ঘটতে থাকে। পরবর্তীতে এক ভূতুুড়ে জনপদের সৃষ্টি হয় সোনারগাঁও।
জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, বোখারার জ্ঞানতাপস মাওলানা শরফুদ্দিন আবু তোয়ামার নেতৃত্বে সোনারগাঁও ইসলামী শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়। সম্ভবত ১২৭০ খৃষ্টাব্দে এখানে স্বীয় খানকা ও একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
ইতিহাসখ্যাত সোনারগাঁও নগর এখন শুধুমাত্র নামসর্বশ্ব। তবে মহাসড়কের উত্তর পাশে পানাম ও গোয়ালদির দিকে এবং দক্ষিণ পাশে মোগরা পাড়ায় সম্প্রতি গড়ে উঠা আধুনিক বসতি পাল্টে দিচ্ছে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং এতে করে দিনে দিনে এলাকাটি রূপ নিচ্ছে একটি উপশহরে।
হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরা সোনারগাঁ-কে এ কালের মানুষের কাছে পরিচিত করার মানসে বাংলাদেশের সাবেক সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত হয় ”লোক ও কারু শিল্প যাদুঘর”।
এই কারুশিল্প গ্রামে বৈচিত্রময় লোকজ স্থাপত্য গঠনে বিভিন্ন ঘরে কারুশিল্প উৎপাদন, প্রদর্শনী ও বিক্রি হয়ে থাকে। দক্ষ কারুশিল্পীরা বাঁশ, বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি নকশিকাঁথা একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎশিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী ইত্যাদি উৎপাদন, প্রদর্শনী ও বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও যাদুঘরের অভ্যন্তরে রয়েছে বিনোদনের জন্য পিকনিক স্পট ও মনোরম লেক। যা সত্যই মনকে ছুঁয়ে যায়।
রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এক সময় মসলিনের জন্য জগৎ বিখ্যাত ছিল। মসলিনের বিকল্প জামদানি শাড়ী তাঁতীদের সরাসরি তৈরী করতে দেখা যাবে এখানে এলে। একমনে নিবিষ্ট চিত্তে কাজ করে চলেছে তারা, একটু বেখেয়ালী হলে সব ভন্ডুল হয়ে যাবে- বললেন এক তাথঁ শিল্পী ।
রাজধানী ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার পূর্বদিকে সবুজের সমারোহ আর বন-বনানীর শ্যামলিমায় মনোরম স্থাপত্যশৈলী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ছায়া-ডাকা, পাখি-ডাকা, হৃদয়-ছোঁয়া নৈসর্গিক পরিবেশ পর্যটকদের মন কেড়ে নেয় এ’গাঁও। এ’গাঁয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সোনালি অতীতের এক সুবর্ণ অধ্যায়ের উল্লেখযোগ্য স্মৃতি গাঁথামালা। বর্তমানে সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এটি নারায়ণগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সোনারগাঁয়ের ইতিহাস জানার জন্য পৌরাণিক উপাখ্যান, কিংবদন্তি বা জনশ্রুতির ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় বলে আমার মনে হয়েছে।।
আমরা ফাউন্ডেশন চত্বরে ঢুকেই বাম পার্শ্বে পুকুরের সামনেই দেখতে পেলাম ঈশা খাঁর বাড়ি। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ এক সরকারি প্রজ্ঞাপন বলে এই বাড়িটি ”লোক ও কারুশিল্প যাদুঘর” হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন এটি ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত। এই বাড়িটির নির্মাণ শৈলী অত্যন্ত চমৎকার কারুকার্যে গড়া। সময়ের আবর্তে এর নকশা গুলি দিন দিন মুছে যাচ্ছে। আমরা দেখলাম বর্র্তমান সরকার রেষ্টুরেন্ট-এর কাজে হাত দিয়েছে, যা সত্যি প্রশংসার দাবিদার। এর নির্মাণ শৈলী বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেয়। এর পাশ দিয়ে সোজা সামনে অবস্থিত হস্তশিল্প যাদুঘর। রাস্তার চারপাশে ফুলগাছসহ বিভিন্ন গাছের দৃশ্য প্রবেশের মুহুুর্তে আমাদের সকলের মনকে আবিষ্ট ও আন্দোলিত করে তুললো। ১৭০ বিঘা জুড়ে ফাউন্ডেশন এলাকা। পায়ে হেঁটে এতদুর ঘুরাঘুরি করা বিরক্তিকরের পরিবর্তে আনন্দের বন্যা বয়ে এনেছিল সবার তুন-মনে। প্রধান যাদুঘরের সামনে আছে গরুর গাড়ির ভাষ্কর্য। এতক্ষণে আমরা হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম লেকের পাশে। পুরো পার্কের বৃত্তের মধ্যে এই লেক অবস্থিত। লেকের পূর্ব পার্শ্বে সারি সারি গাছে বেষ্টিত এক মনোরম দৃশ্য দেখতেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। লেকের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যেতে পারবে যে কেউ নৌকা যোগে। ঘন্টা হিসেবে ভাড়া নিয়ে নৌকায় ঘোরার সুযোগ রয়েছে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও এ সুবিধা ভোগ করতে পারিনি, কেননা দলের অধিকাংশরই সাঁতার জানা নেই।
লেকের এ পাশ থেকে ঐ পাশে যাওয়ার জন্য আছে বাঁশের সাঁকো। আমার ছোট ছেলে যুবাইর আগে কখনো সাঁকো দেখেনি, তাই তাকে সাঁকোয় উঠায়ে পারপাার করালাম। একটু চেষ্টাতেই সফল, এবার সে ঐ খেলায় মেতে উঠল।
সারি সারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে যখন হুইলচেয়ারে করে চলছিলাম, তখন মনে হয়েছে এ যেন এক স্বপ্নীল জগতে চলে এলাম। আমাদের সাথে আরো অনেক নারী-পুরুষ দল বেঁধে হাটছে। এসব দৃশ্য দেখতে খুব চমৎকার লাগছিল। এক প্রশান্তি দেহ-মনে ভর করে চলছিল।
সোনালী জামদানী কুঠির মালিক ”তাহের” ভাইকে প্রথম থেকেই সাথে নিয়ে আমরা ঘুরছিলাম। তিনি গাইড হিসেবে আমাদেরকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন। প্রথমে শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীনের লোক ও কারুশিল্প যাদুঘরে প্রবেশ করলাম। যাদুঘরের ভেতরে ঢুকতেই হস্তের কারুকাজগুলো দেখে চোখ জুড়িয়ে গেল। প্রাচীন কালের মানুষ এত সৌখিন ছিল তা ভাবতেই অবাক লাগে। যাদুঘরের নিচ তলায় রয়েছে কাঠ খোঁদাই করা বিভিন্ন প্রাচীন ঐতিহ্যের আকর্ষণীয় দ্রব্যাদী। যা দেখে আমাদের মন জুড়ে যায়। নিচ তলা দেখার পর দ্বিতীয় তলায় ওরা চলে গেল। সেখানেও সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র দেখে তাদরে নাকি মন-প্রাণ ভরে গিয়েছিল। এখানে রয়েছে জামদানী ও নকশী কাথার গ্যালারী।
আমরা ক’জন গ্রন্থাগারে প্রবেশ করি। প্রতিবন্ধীদের জন্য এখানে র্যাম্প থাকার প্রয়োজন ছিল বোধ করি। এত সুন্দর পরিপাটি ও অসংখ্য বইয়ের গ্রন্থাগার দেখে ইচ্ছে ছিল এখানে বসে কিছুক্ষণ বই পড়ার। কিন্তু সময়ের জন্য না পেরে ব্যথিত হৃদয় নিয়ে বের হলাম । এখানে আছে প্রাচীন আমলের গোলপাতার ঘর। আছে বেতের তৈরী ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সৌখিন জিনিসপত্র। স্মৃতি হিসেবে ধরে রাখার জন্য আমরা এখান থেকে কয়েকটা হস্থের তৈরী খেলনা এবং দুটি জামদানী শাড়ী কিনলাম। যুবাইর ও রাফাত ক্রয়কৃত গুলতি দিয়ে খেলা শুরু করে দিল। ওরা দু’জন মনের উচ্ছাস নিয়ে ভোগ করছে বলে মনে হলো। অনেক ভ্রমণকারীকে হস্তশিল্পের পণ্যগুলো কিনতে দেখলাম।
এখানকার বাগানের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ঘন গাছ পালা বেষ্টিত স্থানে জনাব মোঃ রিপন-এর দোকানের অবস্থান। এখানে বসে চা, ফোসকা, কোল্ড ড্রিংক্স পানাহার এতটা আমাদরেকে আনন্দ দিয়েছিল যা আমাদেরকে চির স্মরণীয় করে রাখবে। এই বাগানেরই উৎপাদিত দেশি পেয়ারা কিনে খেলাম আর ভাবছিলাম-বাঙ্গালী ইতিহাসের হাজার বছরের পথ অতিক্রমকারী সোনারগাঁয়ের এক ধূসর সোনালী অধ্যায়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও কালচারাল হেরিটেজের কথা। কালের আবর্তে সেই রহস্যময় নগরী হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থান। প্রাচ্যের রহস্যময় সোনারগাঁয়ের মাটিতে সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন পরিব্রাজক ভ্রমণে এসেছিলেন যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিশ্বখ্যাত ইবনে বতুতা, চীনের মা-হুয়ান বা ফা-হিয়েন। জনৈক রাফল ফিচের বিবরনেও এখানকার নানান রকমের মসলিন বস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাইতো সোনারগাঁও প্রাচ্যের ড্যান্ডি নারায়নগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এখানে ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন হযরত শাহজালাল (রহঃ)সহ প্রমুখ।
এ যাদুঘর পরিদর্শন শেষে উত্তর দিকে গেলাম। সেখানে দেখতে পেলাম পানাম নগরী। এটি দেখভাল করা বা যত্ন নেয়ার তেমন কোন লক্ষণ আমার গোচরীভুত হয়নি। মনে মনে এক অব্যক্ত বেদনায় কষ্টই পেলাম। আমরা কেমন জাতি। আমাদের মধ্যে রেষ্টুরেন্ট-এর চেতনাই যেন নেই। বিদেশী নাগরিকদের দেখলাম এ সমস্ত দৃশ্যাবলি থেকে তারা কী যেন খুজছে? লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন থেকে একটু উত্তর দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে গোয়ালদী গ্রামে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক পানাম নগর।
পানাম নগরঃ প্রাচীন এক ঐতিহাসিক শহর
পানাম নগর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। পানাম-এর প্রাচীনত্ব আরো গভীর হতে পারে। ”পাইনাম” ফার্সি শব্দ। পাইনাম থেকে পানাম, এর অর্থ আশ্রয়। পানাম নগরে কয়েক শতাব্দীর পুরোনো অনেক ভবন রয়েছে যা বাংলার বারভুঁইয়াদের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। আমরা ঘুরেঘুরে অবাক বিষ্ময়ে দেখছিলাম। কানাডিয়ান বড় ভাগ্নে মনে হলো যেন গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে, যা সে একাকি খুঁজে ফিরছিল। আমার সহধর্মিনী প্রভাষিকা শাহানারা সকলকে ছাত্র ভেবে শুরু করে দিল ঐতিহাসিক ঘটনাবলি। আমরা ঐ’সময়কার জন্য ছাত্র-ছাত্রী হয়ে তা গিলছিলাম। মি. সাজ্জাদ(ভগ্নিপতি) আমাকে ইশারা দিয়ে বলল- শুরু হয়ে গ্যাছে পড়াশুনা। ছোটমনিরা চড়–ই পাখির ন্যায় বিভিন্ন কুঠরিতে ঢুকে পড়া, উঁকিঝুঁকি মারা শুরু করে দিল। থামল তখনি যখন ঐখানে এক পুরাতন বিল্ডিংয়ে নব স্থাপিত পুলিশ ফাঁড়ির এক কনেস্টবল ভূতের কাহিনি বলছিল। ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে এই পানাম নগরী গড়ে উঠেছে। নগরী চিরে চলে যাওয়া আনুমানিক ৫ মিটার প্রশস্থ ও ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দুই পাশে একতলা, দোতলা ও তিনতলা দালান রয়েছে পানামে। পানাম নগরীর মাঝে যে রাস্তা চলে গেছে এর উত্তর পাশে আছে ৩১টি ভবন এবং দক্ষিণ পাশে আছে ২১টি ভবন।
এটি “হারানো নগরী” নামেও পরিচিত। পানাম নগরীর নির্মাণশৈলী অপূর্ব। এই নগর পরিকল্পনা দুর্ভেদ্য ও সুরক্ষিত। এটি মুলত বঙ্গ অঞ্চলের তাঁত ব্যবসায়ীদের মূল কেন্দ্র ও আবাসস্থল ছিল। বাংলার মসলিনসহ অন্যান্য তাঁত শিল্পের প্রচার, প্রসার ও ব্যবসায়ের তীর্থস্থান এ পানাম নগরী। ধাপে ধাপে মোগল নির্মাণ শৈলীর সাথে বৃটিশ স্থাপত্য শৈলীর সংমিশ্রনে স্থাপন পুনঃস্থাপন প্রক্রিয়ায় পানাম নগরী বর্তমান রূপলাভ করে। পানাম নগরীতে মূলত ব্যবসায়ি ও জমিদাররা বসবাস করতেন। এখানে সরু রাস্তার দুই ধারে গড়ে উঠেছিল অট্টালিকা, সরাইখানা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুরঘর, গোসলখানা, কুপ, নাচঘর, খাজাঞ্চিখানা, টাকশাল, দরবার কক্ষ, গুপ্তপথ, প্রমোদালয় ইত্যাদি। পানামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল আমাদেরকে আনন্দে উদবেলিত করে ছিল। এ খাল পানামের গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো ছুঁয়ে পূর্বদিকে মেনিখালি নদ হয়ে মেঘনা নদীতে মিশেছে।
বারভুঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁ দীর্ঘদিন সোনারগাঁও শাসন করেছেন। সোনারগাঁওয়ের চারদিকে নদী দিয়ে ঘেরা ছিল বলে সহজে সোনারগাঁও-কে কোনো শুত্রু আক্রমন করতে পারতো না। প্রাচীন এ’নগরীর ধবংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান এখানে। মধ্যযুগে পানাম নগরীদর্শন আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্বপ্ন জগতে নিয়ে যাবে এবং সকল ব্যস্ততাকে ভুলিয়ে দেবে আর যন্ত্রনা, গ্লানিকে কাছে ঘেষতে দিবে না।
পানামের প্রাচীনত্ব বহন করে ট্রেজারার হাউজ, সেতু, কোম্পানির কুঠি, এবং প্রাচীন বনেদি ইমারতসমূহ। সোনারগাঁও-এর নান্দনিক চারু ও কারু শিল্পের জন্যে বিখ্যাত মসলিনের আড়ং ছিল পানাম নগর। পানাম নগরের সোভাশিত বর্ণাঢ্য ইমারতসমূহ স্বাক্ষ্য দেয় একমসয় সোনারগাঁয়ের অভিজাত নাগরিকদের বসবাসের কেন্দ্র ছিল। লোকজ শিল্প সমৃদ্ধ ফুল, লতাপাতা সম্বলিত দেয়াল, চিত্রিত চারুতায় ভরপুর মায়াবি নাচঘরকে কেন্দ্র করে লোকজ গানের আসর বসতো এখানে। পানাম নগর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর। পানাম নগরে কয়েক শতাব্দী পুরোনো অনেক ভবন রয়েছে যা বাংলার বারভুঁইয়াদের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে।
পানাম নগরের নির্মিত ভবনগুলো ছোট ছোট লাল ইট দ্বারা তৈরী। ইমারতগুলো কোথাও একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন, আবার কোথাও সন্নিহিত। অধিকাংশ ভবনই আয়তাকার এবং উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃত। দীর্ঘ একটি সড়কের উভয় পাশে দৃষ্টিনন্দন ভবন স্থাপত্যের মাধ্যমে পানামনগর গড়ে উঠেছিল। উভয় পাশে মোট ৫২টি পুরোনো বাড়ী এই ক্ষুদ্র নগরীর মূল আকর্ষণ।
লাল ইটের বাড়ি আর সর্ব উপরে চিলেকোটা। দু পাশে বাড়ি মধ্যখানে মসৃন পিচঢালা পথ। সে সব লাল রঙা বাড়ির ছোট্ট খোঁপে চড়ুই পাখির দৌড়, সেই দৌড়ের সঙ্গি হয়ে আমাদের চোখও দৌড়াচ্ছিল শিল্পের কারুকার্য দেখে। চুন-সুরকির ইমারতগুলো, এর গাথুনিগুলো কি নিপুন হাতে গড়া(!) বিষ্ময়ের শেষ ছিল না। এর সাথে মিলাতে পেরেছিলাম যশোরের দুই উপজেলা কেশবপুর ও মনিরমপুরে যথাক্রমে আমার বড় মামার আলতাপোলের বাড়ী (যা হিন্দু জমিদার থেকে নানার কেনা) ও কাশিমপুরে আমার দাদা শ্বশুর জনাব আব্দুর রহিম সরদারের বাড়ী, যেন অম্লান হয়ে দাড়িয়ে আছে আজও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন কালে একবার গিয়ে ছিলাম, তাও আশির দশকে। তেমনটি করে ভাবিনি তখন, যা এখন ভাবছি সোনারগাঁ-কে নিয়ে।
সোনারগাঁ-কে আরো আকর্ষনীয় পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সাথে প্রতিবন্ধীদের সহজ গমোনাগমের জন্য সর্বক্ষেত্রে র্যাম্পের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
বিদায়ের গোধুলি বেলায় মনে পড়ছিল দ্বিজেন্দ্রলাল রায়-এর গানের কলিগুলো –
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সত্যি আমাদের দেশটি, রয়েছে রাণীর বেশে। এর রক্ষনা-বেক্ষনে, উন্নতিতে স্ব স্ব অবস্থান থেকে বাংলাদেশের সকল নাগরিক, সরকারের সংম্লিষ্ট মন্ত্রনালয়কে এগিয়ে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করা ছাড়া এ’প্রতিবন্ধীর আর কিবা করার আছে(!)।
(অসাধারণ স্থাপত্যশৈলী- ঈশা খাঁর বাড়ীর পাশে) (বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনের সামনে)
(চিত্র ১ ও ২ এ লেখক স¯ত্রীক সহ অন্যান্য সাথীদের নিয়ে কারু শিল্প ফাউন্ডেশনের মধ্যে )
(পুকুরের সামনে ঈশা খাঁর প্রসাদের পার্শ্বে) (ঐসময়কার রক্ষিত নকশা করা দরজা ও জানালা)
(আনন্দঘন পরিবেশে সাঁকোয় উঠে পারপাার করে আনন্দভোগ করছে ছোটরা,যা তারা ইতোপূর্বে দেখেনি-চিত্র-১, আর আমরা মিনি ব্রিজে পার হচ্ছি-চিত্র-২ )
(তন্ময়ে হয়ে স্থানীয় বসতি এক হিন্দু দিদির কথাশুনছে ) (দর্শণার্থীরা সবাই যেন পানামে এসে আতœহারা)
(চিত্র ১ ও ২এ লেখকের বোন-ভগানীপতি ও ভাগ্নেরা অবহেলিত পানাম সিটি নিয়ে রহস্যের জাল বুনছে)
(লেখক ও তার প্রবাসী বোন পানাম সিটি অবলোকনে) (বড় ভাগ্নে তার মায়ের সাথে প্রাচীন সভ্যতা নিয়ে আলাপরত)
( সকল দর্শণার্থী এ’দৃশ্যাবলী অবলোকনে মুগ্ধ) (যুবাইর ও রাফাত যেন পিচঢালা এ’পথটাকে ভালবেসে ফেলেছে)