টাঙ্গুয়ার হাওড় বা টাঙ্গুয়া হাওড়: বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওড়। টাঙ্গুয়ার হাওর যেতে হলে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত হতে চলে আসুন সুনামগঞ্জ। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওড় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। চারিদিকে অথৈ জল আর পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্যে ঘেরা সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে সারি সারি হিজল-করচ বিন্যাস, পাখিদের লকাকলিতে মুখরিত হাওরটি। বিভিন্ন রকমের মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীদের এক বিশাল অভয়াশ্রম টাঙ্গুয়ার হাওর। নলখাগড়া বন, হিজল করচ বনসহ বর্ষাকালে সমগ্র হাওরটির আয়তন দাড়ায় প্রায় ২০,০০০ একর। তবে শীতকালে পানি শুকিয়ে যায়।বর্তমানে এ হাওরে রয়েছে প্রায় ছোট বড় ১৪১ প্রজাতির ২০৮ প্রজাতির পাখি, ১ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৩৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটি এবং ২১ প্রজাতির সাপ। তবে শীতকালে সব রেকর্ড ভেঙ্গে হাজার হাজার পাখির মেলা বসে এই বিশাল জলরাশির বুকে। বিলুপ্ত প্রায় প্যালাসেস ঈগল, বৃহদাকার গ্রে-কিংষ্টর্ক, শকুন এবং বিপুল সংখ্যক অতিথি পাখি টাঙ্গুয়ার হাওরের অবিস্মরণীয় দৃশ্য। ভ্রমনপিপাসুদের মনের তৃপ্তি বাড়াতে টাঙ্গুয়ার হাওর অতুলনীয়।
সুনামগঞ্জ এসে আপনি আরেকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা দেখতে পাবেন, আর সেটি হল হাসন রাজার বাড়ি । তবে এই বাড়ি দেখতে হলে আপনাকে রাতে সুনামগঞ্জ এক রাত কাটাতে হবে । আর এছাড়াও রাতের বেলা সুরমা নদীর অপরূপ দৃশ্যও দেখে নিতে পারেন। নদীর এই দৃশ্য দেখে পরদিন সকালে হাছন রাজার বাড়ী দর্শন করে চলে আসুন আব্দুজ জুহুর সেতুতে। সেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দমত বাহনে চেপে চলে যান তাহিরপুর, সময় লাগবে কম বেশি দুই ঘন্টা। যেতে পথে আপনি দেখতে পাবেন শাহ আরেফিনের মাজার , বারেকেরটিলা , যাদু কাটা নদী , লাউরের গর, ইন্ডিয়ার বর্ডার সংলগ্ন অপরূপ কিছু ঝর্না।
অবস্থান ও পরিচিতিঃ টাঙ্গুয়ার হাওড় সুনামগঞ্জ থেকে মাত্র ১ ঘন্টা দূরত্বে, যা সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরণা এসে মিশেছে এই হাওড়ে। প্রথমে লেগুনায় করে তাহিরপুর সদর উপজেলা। সেখান থেকে নৌকাযুগে টাংগুয়ার হাওর, নিলাদ্রি লেক, লাকমাছড়া, বারিকটিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুলবাগান প্রভৃতি দর্শনীয় জায়গাগুলো প্রদর্শন করে আবার নিলাদ্রিলেকের সন্ধ্যার অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পর টাংগুয়ার পথে রওনা হবো এবং এখানে রাতের নিঝুম পরিবেশে সারাদিনের যাপিত ক্লান্তি ভূলে আড্ডা আর গানে একাকার হতে পারেন।
বিঃদ্রঃ টাংগুয়ার হাওড়ে পর্যটকরা সাধারণত নৌকাতেই রাত্রিযাপন করতে পছন্দ করেন। তবে আপনি চাইলে হোটেলে থাকতে পারবেন, সেক্ষেত্রে ট্যুর অপারেটর কোম্পানির মাধ্যমে গেলে তারাই আপনাকে নিলাদ্রীর পাড়ে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে। তবে হোটেলের বাড়তি খরচটা আপনাকেই বহন করতে হবে।
বারিক টিলাঃ বারিক টিলা বা বারিক্কা টিলা সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার অন্তর্গত। একপাশে বাংলাদেশের সীমান্ত, ওপাশে ভারতের মেঘালয়, খাসিয়া পাহাড়। বারিক্কা টিলাতে রয়েছে ৪০ টির মত আদিবাসীদের পরিবার। ঘন সবুজে পূর্ণ টিলাটির মাঝখান দিয়ে নির্মিত হয়েছে একটি পাকা রাস্তা যেটি দিয়ে মোটর সাইকেল যোগে যাওয়া যায় টেকেরঘাট। বারিক্কা টিলার পাশে রয়েছে যাদুকাটা নদী যা ভারতের খাসিয়া পাহাড় হতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বারেক টিলার উপরে উঠলে দেখা যায় সুউচ্চ মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড়। টিলার উপরে ২ দেশের সীমানা পিলার। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডদের একটা টহল চৌকিও আছে। কড়ই গড়া ও রাজাই নামে দুটি আদিবাসী গ্রামও রয়েছে এ টিলাতে। বারেকটিলা থেকে বড়ছড়া চারাগাঁও শুল্ক স্থলবন্দর ৪০ মিনিটের হাঁটা পথ। বারিক্কা টিলার উপর থেকে দেখা যায়, যাদুকাটা নদীতে স্বচ্ছ পানি আর নীল আকাশের সঙ্গে সবুজ পাহাড় মিলে যেন তৈরি হয়েছে নীলাভ চিত্রকল্প। টাঙ্গুয়ার হাওরের আশপাশে সবচেয়ে সুন্দর ও মনোরম দৃশ্যপট।
ট্যুর অপারেটর কোম্পানিগুলো তাদের ফীর টাকায় সাধারণত যেসব সার্ভিস দিবে:
১) সুনামগঞ্জ থেকে বাকি রাস্তার সকল পরিবহন খরচ।
২) নৌকার সকল খরচ।
৩) প্রথম দিন দুপুরের খাবার থেকে পরের দিন দুপুরের খাবার (ভাত, হাওড়ের মাছ, মুরগী/ হাসের মাংস, ডাল)
বিশেষ সতর্কীকরণ: একা না গিয়ে কোন ট্যুর অপারেটর কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে গ্রুপ ভ্রমণ করলে যে বিষইয়গুলো মেনে চলতে হবে।
# ট্যুরের প্রায় পুরোটা সময় নৌকাতেই থাকতে হবে, তাই সমস্ত প্রাকৃতিক (বিশেষ করে টয়লেট) প্রয়োজন নৌকাতেই সারতে হবে।
# একসাথে সবাই গাদাগাদি করে (যেহেতু নৌকায় থাকতে হবে) থাকার মানসিকতা থাকতে হবে। বিছানা করার মত পাতলা কিছু সাথে নিয়ে যেতে পারেন, তবে মনে রাখবেন সেটা কিন্তু শেয়ার করে ব্যাবহার করতে হবে।
# ট্যুরে যারা থাকবে শুরুতেই সবাই নিজ দায়িত্বে পরিচিত হয়ে নিবেন।
# কেউ কারো ব্যাবহারে যেন কোন রকম কষ্ট না পায় সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
# আশেপাশে ঘুরে দেখার ব্যাপারে হোস্ট এর স্বীদ্ধান্তই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
# আপনার কোন কাজে পাশের কোন ভাই/বোন যেন বিরক্ত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকবেন।
# এলাকার কোন সম্পত্তি বিনষ্ট করা যাবেনা।
# ময়লা আবর্জনা যত্রতত্র ফেলে পরিবেশ নোংরা করা থেকে বিরত থাকবেন।
# যারা সাতার জানেন না, তারা নিজ দায়িত্বে পানিতে নামবেন।
# চাইলে সবাই নিজ দায়িত্বে “লাইফ জ্যাকেট” নিয়ে আসতে পারবেন। অথবা “লাইফ জ্যাকেট” ভাড়া করতে চাইলে জন প্রতি ১০০ টাকা করে দিলে ট্যুর অপারেটররাই লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা করে দিবে। (অসম্পাদিত)