মো. ইকরামঃ ফেসবুকে আমরা সবাই আসক্ত হয়ে পড়ছি। অনেকে বলছেন কিংবা বিশ্বাস করছেন, ফেসবুক মানেই সময় নষ্টের জায়গা, ফেসবুক মানেই বর্তমান যুগে সব কুকর্মের স্থান। ফেসবুক মানেই হলো তরুণ ছেলেমেয়েদের বিপথে যাওয়ার জায়গা। কথাগুলো কিন্তু মিথ্যা নয়। আসলে এ ঘটনাগুলো এখন ফেসবুকের মাধ্যমেই ঘটছে।
পড়ালেখা বাদ দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম বয়সী ছেলেমেয়েরা ফেসবুকে সময় নষ্ট করছে। কিন্তু এ ফেসবুকের মাধ্যমে ভালো ভালো ঘটনাও ঘটছে, অনেক অপরাধীকে পাকড়াও করা, রক্ত জোগাড় করা, বিভিন্ন জনের বিপদে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে টাকা উঠিয়ে তার চিকিৎসা করানোসহ আরও অনেক ভালো কাজের উদাহরণ রয়েছে, যা ফেসবুক থাকার কারণেই হয়েছে।
সব কিছুর ভালো এবং খারাপ দুটো দিকই রয়েছে। সচেতনতার অভাবে আমরা হয়তো খারাপ কাজেই বেশির ভাগ সময় ফেসবুককে ব্যবহার করছি, কিন্তু যারা অনলাইন প্রফেশনাল, তারা ফেসবুককে বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ মনে করছে।
বিশ্বের সব জায়গার এত মানুষ এখন ফেসবুকে রয়েছে, এত মানুষকে খুব সহজেই ফেসবুকের মাধ্যমে টাচ করা যায়। পৃথিবী এখন সত্যিকারের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে ফেসবুকের কল্যাণে। ফেসবুকের কল্যাণে এখন বাংলাদেশে বসে আমেরিকার একজনের বন্ধুত্ব হচ্ছে, আমেরিকার প্রতিটা মুহূর্তের আপডেট জেনে যাচ্ছি।
ফেসবুকের মাধ্যমে যেহেতু আমেরিকার একজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হচ্ছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ফেসবুক কত ছোট করে ফেলেছে দুনিয়াটাকে। এই সুবিধাটা কাজে লাগিয়ে কেউ বিষয়টিকে কাজে লাগাচ্ছে। আর কেউ হয়তো আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করছে।
আপনি কীভাবে কাজে লাগাবেন, সেটি আপনার সিদ্ধান্ত। এ বইটা মূলত তৈরি করেছি, যারা ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে এই নেশাটাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে প্রফেশনালি কাজে লাগাতে পারে। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার বিশাল সুযোগ এনে দিয়েছে ফেসবুক, সেটি যাতে কাজে লাগিয়ে নিজেও স্বাবলম্বী হতে পারে, সেই ব্যাপারেই গাইডলাইন দেয়ার চেষ্টা করছি পুরো বইটাতে।
আমরা সবাই ফেসবুক ব্যবহারটা জানি। এখানে আর কিছু বিষয় জেনে নিলে ফেসবুক থেকে মাসে ভালো একটা ইনকাম করা সম্ভব। আগে জেনে নেই, ফেসবুক ব্যবহার জেনেই কীভাবে ইনকাম করতে পারবেন?
১) এফ-কমার্স:
ফেসবুকে পেজ খুলেই বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করা যায়। যেটা ইদানীং সবাই ফেসবুকে দেখছেন। যারা এভাবে কাজ করছেন, যারা এভাবে কাজ করছেন, তাদের মাসিক আয় হচ্ছে ১০,০০০ টাকা – ৩০,০০০ টাকা। কারও কারও ভালো ইনভেস্ট থাকার কারণে আরও বেশি ইনকাম হচ্ছে। সেটা ১ লাখ থেকে ২ লাখও হতে পারে।
প্রোডাক্ট: শাড়ি, মেয়েদের ড্রেস, গিফট আইটেম ইত্যাদি।
চ্যালেঞ্জ: ছোট ইনভেস্ট, প্রোডাক্ট সিলেক্ট, প্রোডাক্ট ডেলিভারি, মার্কেটিং
২) টি-শার্ট অ্যাফিলিয়েশন:
বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয় ইনকাম সোর্স হচ্ছে টি-শার্ট অ্যাফিলিয়েশন। এ অ্যাফিলিয়েশনের জন্য শুধুমাত্র ফেসবুককেই ব্যবহার করা হয়। এভাবে মাসে ১০,০০০ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা ইনকাম করা সম্ভব।
প্রোডাক্ট: টি-শার্ট, মগ, হুডি ইত্যাদি
চ্যালেঞ্জ: নিশ সিলেক্ট, অডিয়েন্স টার্গেট, মার্কেটিং
৩) হোস্টিং অ্যাফিলিয়েশন:
হোস্টিং অ্যাফিলিয়েশনের জন্য শুধুমাত্র ফেসবুক মার্কেটিং করে ইনকাম করা যায়। ইনকাম কয়টা সেল করেছেন, সেই অনুযায়ী বাড়তে থাকে। ইনকাম মাসে ৫০০০ টাকা – ৮০,০০০ টাকা হতে পারে। তবে হোস্টিং অ্যাফিলিয়েশনকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া সম্ভব না। কারণ নিয়মিত ইনকাম সম্ভব হবে না।
প্রোডাক্ট: বিভিন্ন কোম্পানির হোস্টিং
চ্যালেঞ্জ: কনটেন্ট ডেভেলপ, সম্ভাব্য কাস্টমার খুঁজে বের করা, মার্কেটিং
৪) লোকাল ব্যবসা:
লোকাল যে কোন ব্যবসার প্রফিট বৃদ্ধির জন্য এখন ফেসবুক মার্কেটিংকে সবাই ব্যবহার করছে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, ফ্যাশন হাউস থেকে শুরু করে আরও অন্যান্য ব্যবসাতেও ফেসবুকে মার্কেটিং করেই ইনকাম বৃদ্ধি করতে হয়।
প্রোডাক্ট: সার্ভিস, ট্রেনিং, প্রোডাক্ট ইত্যাদি
চ্যালেঞ্জ: ইনভেস্ট, প্রোডাক্ট বাছাই, দক্ষ ব্যক্তি, মার্কেটিং
৫) লোকাল চাকরি:
যে কোনো ব্যবসাতে যেহেতু ফেসবুক মার্কেটিং এখন বড় একটি ফ্যাক্ট। সুতরাং, প্রতিটা প্রতিষ্ঠানে এ কাজটি করার জন্য ফেসবুক মার্কেটিংয়ের এক্সপার্ট লোকজনের চাকরির সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা বেতনে এ সেক্টরে চাকরিতে নিচ্ছে।
প্রোডাক্ট: সার্ভিস, ট্রেনিং, প্রোডাক্ট ইত্যাদি
চ্যালেঞ্জ: রিয়েল কাজের অভিজ্ঞতা, ব্যবসাতে প্রফিট বৃদ্ধি করা
৬) সাইটে ট্রাফিক আর সেখান থেকে অ্যাডসেন্স:
একটা সাইটে যত বেশি ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারবেন, তত সাইটের অ্যাডভার্টাইজ থেকে ইনকাম বৃদ্ধি পাবে। ইনকাম ৫ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ হতে পারে।
প্রোডাক্ট: একটা ব্লগ সাইট
চ্যালেঞ্জ: নিশ সিলেকশন, সাইট প্রস্তুত, কনটেন্ট ডেভেলপ, মার্কেটিং
৭) নিজের দক্ষতাকে ব্রান্ডিং:
আপনি যদি নিজেকে দক্ষ মনে করেন, কিন্তু কোথাও তারপরও চাকরি হচ্ছে না, তাহলে সেক্ষেত্রে বলব, আপনি আপনার দক্ষতাকে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রমোশন চালান। তাহলে ফেসবুকের মাধ্যমেই অনেকে দক্ষতার ব্যাপারে জানতে পারলে আপনার কাজের অভাব হবে না। কাজ আপনাকে খুঁজে বের করবে। তখন কাজ করে শেষ করতে পারবেন না।
প্রোডাক্ট: নিজের দক্ষতা
চ্যালেঞ্জ: কনটেন্ট ডেভেলপ, দক্ষতা সম্পর্কিত গ্রুপগুলোতে অ্যাক্টিভ থাকা, মার্কেটিং
৮) ফাইভারের গিগ সেল বৃদ্ধি:
ফাইভারে গিগের যত বেশি প্রমোশন চালাবেন, ততই গিগ সেল বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু ফেসবুক প্রমোশন চালাতেও সঠিক জ্ঞান থাকতে হবে। সঠিক জ্ঞান ছাড়া গিগ প্রমোশন চালালে ফাইভারে ইনকাম বাড়বে, উল্টো ফাইভার অ্যাকাউন্টটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
প্রোডাক্ট: ফাইভার গিগ
চ্যালেঞ্জ: অডিয়েন্স টার্গেট করতে পারা, কনটেন্ট ডেভেলপ করতে পারা, মার্কেটিং
৯) মার্কেটপ্লেসে কাজ:
ফেসবুক যেহেতু মার্কেটিংয়ের অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম, সেহেতু মার্কেটপ্লেসে এখন প্রচুর কাজ পাওয়া যাচ্ছে এ সম্পর্কিত। মাসে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারেন।
প্রোডাক্ট: বায়ার রিকোয়েরমেন্ট অনুযায়ী সার্ভিস
চ্যালেঞ্জ: কাজের পূর্বঅভিজ্ঞতার প্রমাণ, বায়ার কনভেন্স করতে পারা এবং রিপোর্টিং।
লেখক:পরিচালক, নেক্সাস আইটি।