‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এ গ্রন্থে কোথাও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ছবি ছাপা হয়নি। অথচ এতে পাকিস্তানের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের তিনটি ছবি ছাপা হয়েছে। এ বিষয়টি গত কয়েকদিন ‘টক অব দ্য ব্যাংক’। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিতরে ও বাইরে নানা সমালোচনা হচ্ছে। তবে এমন ঘটনা কিভাবে ঘটলো সে বিষয়ে দায় নিতে চাচ্ছে না কেউ। বর্তমানে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা দোষারোপ করছেন প্রাক্তনদের। আর প্রাক্তনরা বলছেন, এখন যারা ছাপিয়েছে দোষ তাদের। এমন অবস্থায় বিষয়টির সমাধানে গঠন করা হয়েছে রিভিউ কমিটি। আর গ্রন্থটি পুনর্মুদ্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ড. আতিউর রহমান গভর্নর থাকাকালীন এ গ্রন্থটি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এটির প্রকাশকাল উল্লেখ রয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর। আনুষ্ঠানিকভাবে গত ২৫ মার্চ এর মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকর বর্তমান গভর্নর ফজলে কবির। গ্রন্থ প্রকাশের আগে কয়েক দফা সম্পাদক পরিবর্তনের পর সর্বশেষ সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্কালীন নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা। তার আগে সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন আরেক নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, যে কাজটি করা হয়েছে তা চূড়ান্ত করার আগে আমাকে দেখানো হয়নি। দেখালে হয়ত এমনটি হতো না। তবে ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করে সুন্দর করে এটি আবার প্রকাশ করা যায় বলে তিনি মনে করেন। গ্রন্থ পর্যালোচনা কমিটির সভাপতি ও ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, গ্রন্থে যেসব অসঙ্গতি রয়েছে, তা দূর করে নতুন করে মুদ্রণের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, আমার সম্পাদনায় যে প্রাণ্ডুলিপি করা হয়েছিল সেটি এমন ছিল না। অন্যদিকে শুভঙ্কর সাহা’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, গ্রন্থটি সংশোধন করে শিগগিরই পুনর্মুদ্রণ করা হবে।
জানা গেছে, গ্রন্থটি প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলের সমালোচনার পর এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে এর বিতরণ। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার মুখে গত শনিবার সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রন্থটি প্রকাশের পরপরই এতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হওয়ায় গভর্নর এর বিতরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে গ্রন্থটি পর্যালোচনার জন্য একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি রিভিউ কমিটি গঠন করেন।