উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) পরিচিতি

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পেশাদার সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের সংগঠন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন,ডিইউজে। ঢাকার বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নায্য অধিকার আদায়ের পাশাপাশি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও এই পেশাজীবীদের সংগঠনটি সক্রিয় রয়েছে। ডিইউজে’র বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন কাদের গনি চৌধুরি, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকতার অধিকার আদায়, বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণমূলক কালো আইন বাতিলের দাবীতে অবিরাম আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী সংগঠন।

মুক্তিযুদ্ধের আগে পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নই স্বাধীনতা অর্জনের পর ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নামে গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের মজুরি-ভাতা, পেশার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন চালিয়ে আসছে।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর থেকেই তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়ন (ইপিইউজে) প্রতিটি অধিকার আদায়ের আন্দোলন, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হবার পর এই আমব্রেলা অর্গানাইজেশন এর আওতায় থেকেও ইপিইউজে সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিতদের ঐক্যবদ্ধ করার পাশাপাশি পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার, পেশার মর্যাদা, পেশাগত কল্যাণ,বাংলা ভাষার উৎকর্ষতা, দেশ-জাতি-রাষ্ট্র সর্বোপরি জনগণের অধিকার রক্ষার আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় এবং গণতান্ত্রিক স্বদেশ নির্মানে ডিইউজে একটি অবিচ্ছেদ সংগঠন ও আন্দোলনের নাম। সাংবাদিকতার পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, গণমাধ্যম কর্মীদের নায্য মুজুরি-ভাতা অর্জনে ওয়েজ বোর্ড গঠন এবং গণতন্ত্র রক্ষা ও পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ডিইউজে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আসছে।
১৯৭১ সালের শুরুর দিকে ইপিইউজে’র সভাপতি ছিলেন দৈনিক পাকিস্তান’র চিফ রিপোর্টার আলী আশরাফ আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার চীফ সাব-এডিটর কামাল লোহানী।

স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুর দিকে দেশজুড়ে যখন অসহযোগ আন্দোলন চলছিলো তখন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সাংবাদিকরা যুক্ত হয়ে পড়েন। ইপিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক কামাল লোহানী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনিই বাংলাদেশ বেতারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইপিইউজে’র সভাপতি আলী আশরাফ এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে সাবেক দৈনিক বাংলা’র দায়িত্ব নেন। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ডিইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন বাংলাদেশ অবজারভার এর গিয়াসউদ্দিন আর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হলেন গিয়াস কামাল চৌধুরি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরের রক্তস্রোত আর মায়ের অশ্রুধারায় ভিজে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১৬ জুলাই নবতর প্রত্যয়ে পথচলা শুরু করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ডিইউজে। এবছরই ডিইউজে’র নির্বাচন হয়। নির্বাচনে নির্মল সেন সভাপতি ও গিয়াস কামাল চৌধুরি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সদ্য স্বাধীন দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা, পেশার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের আঘাত আসে শাসকদলের তরফ থেকে। ভিন্নমত দলনের জন্যই দৈনিক গণকন্ঠ বন্ধ করে দেয় সরকার। গ্রেফতার হন গণকন্ঠ সম্পাদক আল মাহমুদ। তাৎক্ষনিক ধর্মঘট করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। স্বাধীন স্বদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য পেশাগত আন্দোলন শুরু করে ডিইউজে। সংবাদ মাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রণমূলক “প্রিন্টিং প্রেসেস এন্ড পাবলিকেশন্স এ্যাক্ট” জারি করা হয়। এই কালা কানুনের বিরুদ্ধে ফের আন্দোলনে নামে ডিইউজে।

১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে বিশেষ ক্ষমতা আইন জারি করে সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করা হলো। ৭৫ এর জানুয়ারিতে দৈনিক গণকন্ঠ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়। একই বছর জুন মাসে সাপ্তাহিক হলিডে’ বন্ধ করে দেয়া হয়।হলিডে’র উপদেষ্টা সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি এনায়েতউল্লাহ খানকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা বৈরী এসব প্রতিটি আঘাতের প্রতিবাদে সংঘবদ্ধ প্রতিবাদে সোচ্চার হয় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন। এরই মধ্যে সংবাদপত্রের উপর সবচেয়ে নির্মম আঘাতটি আসে ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন। এদিন সরকারী ব্যবস্থপনায় মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে বাকি সব পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল করে। শত শত সাংবাদিক ও সহস্রাধিক সংবাদপত্রকর্মী আকস্মিক বেকার হয়ে যায়। সাংবাদিকতার পেশায় নেমে আসে ঘোর অমানিশা।

গণমাধ্যমকে মুক্ত করতে এবং সাংবাদিকতার পেশাদারিত্বের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ছিলো সংগ্রামমুখর। আন্দোলনে ফাটল ধরাতে বলা হলো যারা “বাকশাল” এ যোগ দিবে তারা সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকায় চাকরি পাবে। এভাবে সাংবাদিকদের উপর দলীয় রাজনীতি চাপিয়ে দেয় তৎকালীন সরকার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট মর্মন্তুদ নৃশংস হামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। খন্দকার মোশতাক দায়িত্ব গ্রহনের পরই বন্ধ করে দেয়া সংবাদপত্রগুলো পূনঃ প্রকাশিত হতে শুরু করে। ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন জিয়াউর রহমান। সংবাদপত্রের উপর সকল নিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণমূলক কর্তৃত্ব উঠে যাওয়ায় সাংবাদিকতা পেশার মর্যাদা ও স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় তৎপর হয় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যরা। স্বাধীন ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার নবতর উন্মেষ ঘটায় সাংবাদিক ও সংবাদপত্রসেবিদের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সাংবাদিকদের পেশাগত স্বস্তির সময় সুস্থির হতে পারেনি।

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে ঘাতকদের বুলেটে শহীদ হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ক্ষমতা দখল করেন সামরিকজান্তা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের পেশাগত জীবনে নেমে আসে ফের অনিশ্চয়তা। অবৈধভাবে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করা হয়। সংবাদপত্রে কি প্রকাশ হবে আর কি হবেনা তার নির্দেশনা আসতে থাকে তথ্য মন্ত্রনালয় ও বিভিন্ন এজেন্সি থেকে। সরকারের রোষানলে পরে ১৯৮২ সালের এপ্রিলে বন্ধ হয় সাপ্তাহিক খবর ও সোনারবাংলা। এরপর বিভিন্ন সময়ে বন্ধ হয় দৈনিক দেশ, বাংলার বাণী ও ইনকিলাব। ইত্তেফাক গ্রুপের সাপ্তাহিক প্রকাশনা “রোববার” নিষিদ্ধ করা হয়। বন্ধ করে দেয়া হয় কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র “একতা”। এসব বন্ধ পত্রিকা খুলে দেয়ার দাবীতে নিরন্তর আন্দোলন করতে হয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নকে। ১৯৮৬ সালে বন্ধ করে দেয়া হয় শফিক রেহমান সম্পাদিত সাপ্তাহিক “যায় যায় দিন”। আরেকটি আলোচিত সাপ্তাহিক “বিচিন্তা” বন্ধ করে দিয়ে গ্রেফতার করা হয় এর সম্পাদককে। এভাবে একের পর এক বন্ধ সংবাদপত্র খুলে দেয়া ও সাংবাদিকদের পেশার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নিরবিচ্ছন্ন আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নকে।

সংবাদপত্র ও সাংবাদিক দলনের প্রতিবাদে ডিইউজে’র ধারাবাহিক সংগ্রাম নব্বুইয়ের দশকে এসে পরিণত হয় স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গণঅভ্যুত্থানে। গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে এরশাদ সরকার যখন জরুরী অবস্থা জারি করে কারফিউ ঘোষণার মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেন ঠিক এমনই শ্বাসরুদ্ধ পরিস্থিতিতে ডিইউজে’র সভাপতি জহিরুল হক, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন গাজী, বিএফইউজে’র সভাপতি রিয়াজউদ্দিন আহমদ, মহাসচিব আমানুল্লাহ কবীর, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি গিয়াসকামাল চৌধুরি ও সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে শুরু হয় সর্বাত্মক গণআন্দোলন। জরুরী অবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি নিষিদ্ধ হওয়ায় জাতীয় প্রেসক্লাব ঘিরে গড়ে ওঠে শৃঙ্খল মুক্তির লড়াই। স্বৈরাচারের পতন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত সংবাদপত্র বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণায় এরশাদ সরকারের ভিত কেঁপে ওঠে। চুড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে চলে সর্বাত্মক গণবিক্ষোভ। ১৯৯০ সালের ২৮ নভেম্বর থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৮দিন সংবাদপত্র বন্ধ থাকে। অবশেষে ৫ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করলে রাতে সাংবাদিকরা কাজে যোগদান করেন। ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারমুক্ত স্বদেশে আবার সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে থাকে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাংবাদিকদের এই গৌরবময় ভূমিকা ইতিহাসে মুক্তির নতুন অভ্যূদয় হিসেবেই ভাস্বর হয়ে আছে।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকায় দেশে সংবাদপত্র শিল্পের উত্তরোত্তর বিকাশ ঘটতে থাকে। কিন্তু ১৯৯৩ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের কাউন্সিল অধিবেশনের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ঠেকাতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তাদের দলের কতিপয় সাংবাদিক কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করে নিজেদেরকে ঐক্যবদ্ধ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন থেকে আলাদা সংগঠন করে। সকল ভেদনীতির বাইরে থেকে সরকারের শ্রম অধিদফতরের রেজিস্টার্ড পেশাজীবী সংগঠন হিসেবে সাংবাদিকদের অধিকার ও পেশার মর্যাদা রক্ষায় আপোষহীন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ডিইউজে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জোট সরকার গঠন করলে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের উপর ফের দুর্যোগ নেমে আসে। ট্রাস্টের চারটি পত্রিকা দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, বিচিত্রা ও আনন্দ বিচিত্রা বন্ধ করে দেয় হাসিনা সরকার। এতে শত শত সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জ, লক্ষীপুর, ফেণী, গফরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারী দলের গডফাদাররা সাংবাদিক নিপীড়ন শুরু করে। সরকারী মদদে জাতীয় পর্যায়েও সাংবাদিক নিপীড়ন হতে থাকে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েকজন সাংবাদিক খুন হন। এসব দলন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ডিইউজে।
২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার গঠনের পর সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। প্রিন্ট মিডিয়ার পাশিপাশি নতুন নতুন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিকাশ ঘটে। সাংবাদিকদের পেশার প্রসার ঘটে। সাংবাদিকতা হয়ে যায় বুদ্ধিদীপ্ত নতুন প্রজন্মের জন্য এক আকর্ষণীয় পেশা। কথায় বলে “সুখের দিন দ্রুতই ফুরায় “।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ফখরউদ্দিন-মইনউদ্দিনের জরুরী সরকারের সময় গণমাধ্যমের উপর নতুন করে খড়গ নেমে আসে। কারফিউ জারি করে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। মাইনাস টু ফর্মুলার নামে বিরাজনীতিকরণ ও গণতান্ত্রিক অধিকার সঙ্কুচিত করা হয়। বিশেষ এজেন্সি দিয়ে গণমাধ্যম থেকে জনপ্রশাসন সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। যে কারনে জনমনে প্রচন্ড ভীতি থেকে ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে থাকে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শাসকগোষ্ঠী এক্সিট রুট খুঁজে পেতে নির্বাচনের মোড়কে পর্দার অন্তরালের সমঝোতায় ক্ষমতায় বসে আওয়ামী জোট। সকল স্বৈরশাসকদের মতই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ সঙ্কুচিত করে। ভিন্নমতের পত্রিকা, টেলিভিশন বন্ধ, সম্পাদক গ্রেফতার, পত্রিকা অফিসে আগুন, সাংবাদিক হত্যার মাধ্যমে দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী করে আজ্ঞাবহ সাংবাদিকতার আবহ তৈরী করে। গুম-খুন- লুন্ঠন বিষয়ে সংবাদ প্রকাশে বাধা দিতেই গণমাধ্যমের উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ করা হয়।

বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীনতায় রয়েছে নানা হুমকি।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ জোট সরকার গঠনের পর থেকেই গণমাধ্যমের উপর শাসকদলের কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রন বাড়তে থাকে। গণমাধ্যমকে সরকারের নিয়ন্ত্রনে আনতে তথ্য প্রযুক্তি আইনসহ বেশ কয়েকটি আইন তৈরী করা হয়।

সাতক্ষীরা অভিযান সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো বাংলা দৈনিক ইনকিলাব ১৬ই জানুয়ারি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। ইনকিলাব কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনটির প্রধান প্রতিবেদক আহমেদ আতিক, ডিইউজে’র সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক মুহাম্মদসহ চার সাংবাদিক গ্রেপ্তার হন। “আমার দেশ” পত্রিকাটির ছাপাখানা ২০১৩’র এপ্রিলে সিলগালা করে দেয়া হয়। এর আগে গ্রেপ্তার করা হয় সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে।

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা সিলগালা হওয়ার পর দৈনিক সংগ্রামের ছাপাখানায় আমার দেশ মুদ্রণের অভিযোগে ১৫ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে আবুল আসাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। এ মামলায় ছাপাখানার ১৯ কর্মচারী গ্রেফতার হয়। এছাড়াও আবুল আসাদকে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে দৈনিক সংগ্রাম কার্যালয় থেকে আটক করে র‌্যাব। গ্রেফতারের পর তাকে রিমান্ডে নির্যাতন করা হয়। রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায়। সাংবাদিক আটক ও নির্যাতনের প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ করে ডিইউজে ও বিএফইউজে। সাংবাদিকদের আন্দোলনের মুখে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন আবুল আসাদ।

২০১৩’র ৬ই মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে “অপারেশন ফ্লাশ আউট’র মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ গুড়িয়ে দেয়ার আগে কোন কারণ দর্শানো ছাড়াই দিগন্ত টেলিভিশন ও ইসলামিক টিভি’র সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় সরকার। এতে আকস্মিক চাকুরি হারান সহস্রাধিক সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী। বন্ধ হওয়া গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবীতে নিয়মিত আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে আসছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ডিইউজে।

জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার প্রস্তাবিত খসড়ায় সম্প্রচার লাইসেন্স, বিজ্ঞাপন এবং অনুষ্ঠানের ধরনসংক্রান্ত দিকনির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৪০টি নিয়মকানুন বিধিমালার আওতায় রয়েছে অনুমোদনপ্রাপ্ত ৪৬টি সরকারি ও বেসরকারি চ্যানেল। নতুন এ নীতিমালায় সম্প্ররচারযোগ্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমারেখা চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তথ্য মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার বাড়ানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সম্প্রচার লাইসেন্স অনুমোদন প্রদানের সিদ্ধান্ত। স্পষ্টত, বাংলাদেশী গণমাধ্যমে চলমান চ্যালেঞ্জগুলো অব্যাহত থাকছে। বেসরকারি টেলিভিশনগুলোকে সরকারি টেলিভিশনের (বিটিভি’র) খবর প্রচারে বাধ্য করা হয়।

এসব গণমাধ্যম বিরোধী কালো আইন বাতিল এবং বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়ার দাবিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন,ডিইউজে আলোচনা, মানববন্ধন, গোলটেবিল বৈঠক, বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন কর্পোরেট গোষ্ঠীর মালিকানায় থাকা মিডিয়া হাউজে সাংবাদিক ছাটাইয়ের প্রতিবাদ এবং চাকুরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবীতেও ডিইউজে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রখ্যাত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহেরুন রুনি তাদের পেশাগত দৃঢ় কর্মকাণ্ডের কারণে ঢাকায় নিজ বাসভবনে অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত কর্তৃক উভয়েই ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

প্রায় ৮ বছরেও এই হত্যার বিচার হয়নি। গত একদশকে সাগর-রুনী’সহ বিভিন্ন সময়ে হামলায় নিহত প্রায় অর্ধশতাধিক সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবীতে সোচ্চার ডিইউজেসহ সকল সাংবাদিক সংগঠন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *