উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

সৌদি আরবে ভ্রমণ

পুন্যভুমি সৌদি আরবের গুরুত্বের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। বিশেষ করে পৃথিবীর ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌদি আরব সব সময়েই একটি কাঙ্খিত গন্তব্য। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র জন্মভুমি, ইসলাম ধর্মের উৎপত্তিস্থল, পবিত্র কুরান শরিফ নাজিল সহ এরকম আরও অনেক কারন রয়েছে যেজন্য মুসলমানদের কাছে সৌদি আরব একটি প্রিয় নাম। এছাড়া পবিত্র মক্কা শরিফ, মদিনা শরিফ এবং পবিত্রও হজ ও উমরাহের মত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলি তো আছেই। শুধু ধর্মীয় দিক থেকেই নয়, বরং অর্থনৈতিক ভাবেও সৌদি আরব অনেক প্রভাবশালী একটি দেশ। কাজের জন্য হিন্দু, খ্রিস্টান ও মুসলিম সহ নানা ধর্ম ও বর্ণের লোক পাড়ি জমায় এখানে। ভাল পরিবেশ, কর মুক্ত বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা থাকার কারণে উপমহাদেশ সহ এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা এবং অন্যান্য অঞ্চলের কর্মজীবী মানুষের কাছে সৌদি আরব একটি কাঙ্খিত গন্তব্য।

এতদিন মুসলমানদের হজ, উমরাহ্‌ আর কর্মজীবীদের কাজের প্রয়োজনই ছিল সৌদি আরব যাবার মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থা অনেকটাই বদলে গেছে। বর্তমান সরকার সৌদি আরবকে পৃথিবীর বুকে একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন অনেক আগেই। তার পদক্ষেপ হিসেবে পর্যটকদের ভিসা ব্যাবস্থায় আনা হয়েছে শিথিলতা। এ বছর থেকেই সৌদি সরকার পর্যটকদের জন্য বিশেষ টুরিস্ট ভিসা চালু করার চিন্তা করেছে যা এখন প্রক্রিয়াধিন আছে। এছাড়া নারী পর্যটকদের জন্য দেয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। এখন থেকে ২৫ বছর বা তাঁর চাইতে বেশী বয়সী নারী কোন রকম পুরুষ সঙ্গি ছাড়াই সৌদি আরব ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে ২৫ এর কম বয়স হলে একজন পুরুষ সঙ্গি লাগবে। সৌদি আরব অনেক সমৃদ্ধ একটি দেশ। ২,১৫০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল দেশটির বেশিরভাগ জায়গা মরুভুমি হলেও অনেকগুলো জাঁকজমকপূর্ণ শহর রয়েছে। এসমস্ত শহরগুলো সাজাতে সৌদিরা মোটেও কার্পণ্য করেননি। ইসলামের শুরু এখানেই, তাই স্বাভাবিকভাবেই ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কিত অনেক জায়গা ও স্থাপনা আছে সৌদি আরবে।

কিভাবে যাবেন সৌদি আরব: এর আগে শুধুমাত্র শ্রমিক ভিসা, হজ এবং উমরাহের জন্যও সৌদি আরব ভিসা দিত। এবছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল থেকে সৌদি আরব সরকার টুরিস্ট ভিসা চালু করতে যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের পর্যটকের আকর্ষণ করাই এই ভিসা চালু করার মুল লক্ষ্য। এপ্রিল মাস থেকে এই ভিসা চালু হবার কথা থাকলেও কিছু জটিলতার কারণে এখন ভিসা ব্যাবস্থা চালু করা হয়নি। তবে সমস্ত আয়োজন সম্পন্নও হয়েছে এবং এখন প্রক্রিয়াটি রাজ্যতন্ত্রের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে। এই ভিসা চালু হলে কাজ বা ধর্মীয় কারন ছাড়াও শুধু মাত্র ভ্রমণের জন্য সৌদি আরব যাওয়া যাবে। প্রাথমিক ভাবে এই ভিসা পেতে হলে অনুমদিত ট্যুর অপারেটরের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব যেতে চাইলে বিমান পথে যেতে হবে। ঢাকা থেকে অনেক গুলো বিমান সংস্থার বিমানে সৌদি আরব যেতে পারেন। সৌদি আরবের অনেক গুলো এয়ারপোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে সবচাইতে বড় আর প্রসিদ্ধ হল কিং খালেদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এটি রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত। জেট এয়ারওয়েজ, বাংলাদেশ বিমান, কুয়েত এয়ারওয়েজ, শ্রীলংকান এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, ইতিহাদ এয়ার ওয়েজ, সৌদি আরাবিয়ান এয়ারলাইন্স, টার্কিশ এয়ারলাইন্স সহ বিভিন্ন বিমান সংস্থার বিমানে সৌদি আরব যাওয়া যাবে। এর মধ্যে জেট এয়ারলাইন্সের খরচ সব চাইতে কম হবে, প্রায় ২৩০০০ টাকা। অন্যান্য গুলোর খরচ ২৭,০০০ টাকা থেকে ৩৮,০০০ টাকার মত পরবে। ভ্রমণের বেশ আগে থেকে যদি সৌদি আরবের এয়ার টিকেট কেটে রাখেন তাহলে খরচ কম পরবে। তবে এজন্যে আপনাকে বিমান সংস্থার অফিসে বা ট্রাভেল এজেন্সি গুলোতে দৌড়ানোর প্রয়োজন হবে না। তাহলে আসুন প্রথমে জেনে নেয়া যাক সৌদি আরবের কিছু বিখ্যাত জায়গা সম্পর্কে যেসব জায়গা ভ্রমণ না করলেই না। এর মধ্যে কিছু জায়গা আছে ধর্মীয় গুরুত্ব সম্পন্নও, আর কিছু জায়গা আছে সৌন্দর্যমণ্ডিত। তবে এর সবই যে মনমুগ্ধকর, তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।

মসজিদ আল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব: বিখ্যাত এই মসজিদের নাম মুসলমান মাত্রই শুনে থাকবেন। এই মসজিদকে আল্লাহর পবিত্র ঘর হিসেবেও সম্বোধন করা হয়। পৃথিবীর সবচাইতে বড় মসজিদ হিসেবে খ্যাত মসজিদ আল হারামেই আছে মহাপবিত্র কাবা শরিফ। প্রায় ৮৮.২ একর এলাকা নিয়ে এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে। এখানে প্রায় ৪ মিলিয়ন (৪০ লক্ষ) মানুষ সমবেত হতে পারে। প্রতিবছর লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান এই কাবা ঘর তওয়াফ করতে আসেন, যা আমাদের কাছে হজ এবং উমরাহ্‌ হিসেবে পরিচিত। এর বিশেষ ভাবে তৈরি করা স্থাপত্যশৈলী মানুষের মনে ধর্মীয় ভাবানুরাগের জন্ম দেয়। কাবার অতি নিকটেই অবস্থিত আছে বিখ্যাত জমজম কুপ। খ্রিস্টের জন্মের ২১৫০ বছর পূর্বে এই কুপটি মহান আল্লাহর নির্দেশে সৃষ্টি হয় এবং আজ অবধি এখান থেকে পানি উত্তলন করা যায়। এই পানিকে মুসলমানরা অনেক পবিত্রও এবং উপকারী বলে গন্য করে থাকেন।

মসজিদ আল নববি, মদিনা: সৌদি আরবের আরেকটি বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল মসজিদ আল নববি। মুসলমানদের মহানবী হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় এই মসজিদের তৈরি করা হয়। মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর তিনি তাঁর বাসস্থানের পাশে এই মসজিদটি তৈরি করেন। তিনি নিজেও এই কাজে অংশ নেন। গুরুত্বের দিক থেকে মসজিদ আল হারামের পরেই এর অবস্থান। এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ আর সুন্দর মসজিদ। মসজিদ সংলগ্নই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর রউজা মুবারাক অবস্থিত।

দিন রাত সব সময়ের জন্য এই মসজিদ উম্মুক্ত থাকে। হজ্জের সময় আগত হাজীগন হজ্জের পূর্বে অথবা পরে মদিনায় মসজিদে নববির আশে পাশে অবস্থান করে থাকেন। এই মসজিদটি সৌদি আরব সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং তারাই এর যাবতীয় সংরক্ষন ও সংস্কারের ব্যাবস্থা করেন।

কিংস ফাউন্টেন: জেদ্দার অনেক আকর্ষণের মধ্যে কিংস ফাউন্টেন অন্যতম। কারন এটিই পৃথিবীর সরবচ্চ ঝর্না। জেট প্রপেলারের সাহায্যে পরিচালিত এই ঝর্না সমুদ্রও পৃষ্ঠ থেকে ৮৫৩ ফুট উচ্চতায় পানি নিক্ষেপ করতে পারে। লোহিত সাগরে অবস্থিত এই চমৎকার ঝর্না পর্যটকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। সাগরের নোনা পানি ব্যাবহার করে চলা এই ঝর্নাটিকে জেদ্দা শহরের প্রায় সব জায়গা থেকেই দেখা যায়। বিশেষ করে রাতের বেলা এই ঝর্নার সৌন্দর্য অনেকগুন বেড়ে যায় যখন এর সাথে বিভিন্নও রঙের আলো সংযুক্ত করা হয়।

মেদান সালেহ: আপনার যদি পুরনো সভ্যতা ও ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ থাকে, সেক্ষেত্রে মেদান সালেহ আপনার জন্যে একটি চমৎকার গন্তব্যও হতে পারে। এখানে আপনি প্রাচীন যুগের সৌদি আরবকে আবিস্কার করতে পারবেন।

পবিত্রও কোরআন শরিফে বর্ণিত সামুদ জাতি এখানে বসবাস করত। তখন সেখানকার পরিবেশ ছিল চমৎকার। মিষ্টি পানিরও কোন অভাব ছিল না। কিন্তু তারা মিথ্যাচার, ব্যাভিচার, মূর্তিপূজা সহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিল।

মেদান সালেহ সৌদি আরব
পাথর কেটে তৈরি করা রহস্যময় স্থাপনা

এর পর আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ হযরত সালেহ (আঃ) তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন। তখন সামুদরা হযরত সালেহ (আঃ) এর কথা শুনতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা মহান আল্লাহ পাকের ক্ষমতার প্রমান স্বরূপ একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যযুক্ত মাদী উট আনতে বলে। সালেহ (আঃ) তাদের কথা মত তাদের একটি উট এনে দেন। তিনি এটাও বলেন যে তারা (সামুদ) যেন উটের যত্ন নেয় এবং ক্ষতি না করে, কারন এটা আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে উপহার সরূপ ছিল। কিন্তু নাফরমান সামুদ জাতি আল্লাহর উপর বিশ্বাস তো আনলই না, বরং সেই উটকে হত্যা করল। এরপুর আল্লাহ তাদের উপর গজব নাযিল করেন। তিন দিনের গজব আসে। প্রথম দিনে সমস্ত সামুদ জাতির মুখ হলুদ হয়ে যায়। এর পরদিন সবার মুখ রক্তের মত লাল হয়ে যায়। শেষ দিনে সবার মুখের রঙ গভীর কাল বর্ণ ধারন করে। এর পর প্রচণ্ড ঝড়, বজ্র ও ভুমিকম্প আসে এবং তাতে সমগ্র সামুদ জাতি  সমূলে ধ্বংস হয়ে যায়।

এই সামুদ জাতি ছিল তাদের পূর্ববর্তি আদ জাতির বংশধর। সেই আদ জাতিও মহান আল্লাহর বিরোধিতা করে এবং যথারীতি গজবে ধ্বংস হয়ে যায়। তারাও মেদান সালেহ এ বসবাস করত।  এজন্য মেদান সালেহ জায়গাটি একটি অভিশপ্ত জায়গার পরিচিতি পেয়েছে আরব বিশ্ব তথা সমগ্র পৃথিবীর কাছে।

দুমাত উল জান্দাল

দুমাত উল জান্দাল সৌদি আরব

দুমাত উল জান্দাল

দুমাত-উল-জান্দাল সৌদি আরব এর আরেকটি প্রাচীন জায়গা। এটি আল জাওাফ প্রদেশে অবস্থিত। এখানকার পরিবেশ এখন অনেক রুক্ষ এবং প্রাণহীন। কিন্তু এর ইতিহাস অন্যরকম সাক্ষ্য দেয়। এক সময় এই পুরো এলাকাটিতে মনুষ্য বসতি ছিল। উর্বর মাটি, মিষ্টি পানি সবই ছিল এখানে। কিন্তু কালক্রমে এই পরিবেশ পরিবর্তিত হয়ে যায়। এখানকার পরিত্যাক্ত প্রাসাদ্গুলতে তখনকার সভ্যতার ছাপ দেখা যায়। এখানে পাবেন অতি প্রাচীন একটি মসজিদ যার নাম ওমর বিন আল খাত্তাব মসজিদ। এটি তৈরি হয় ৬০০-৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। মসজিদটি একটি বড় রাস্তার পাশে অবস্থিত ছিল। সে রাস্তায় দিয়ে বিভিন্ন দেশের বনিক ও পর্যটকরা যাতায়াত করতেন। রাস্তার পাশে হবার কারণে বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এখানে নামায আদায় করতে পারতেন।

হযরত হাওয়া (আঃ) এর কবর

হযরত হাওয়া (আঃ) এর কবর, জেদ্দা সৌদি আরব

হযরত হাওয়া (আঃ) এর কবর, জেদ্দা

জেদ্দা শহরের আল বালাদ এলাকায় বেশ কিছু প্রাচীন কবরস্থান আছে। এর মধ্যে একটি প্রাচীন কবরস্থানের একটি বিশেষ কবরের পাশে লেখা আছে ‘আমাদের সকলের মা হাওয়া’। তাঁর ভিতরে একটি কবর আছে এবং বিশ্বাস করা হয় যে এটি আমাদের আদি মাতা হযরত হাওয়া (আঃ) এর কবর। একসময় এই কবরটি ১২০ মিটার লম্বা, ৩ মিটার  চওড়া ও ৬ মিটার উঁচু ছিল। এ থেকেই তখনকার যুগের মানুষের দৈহিক আকৃতির বিশালত্তের প্রমান পাওয়া যায়। কবরটি ক্ষতিগ্রস্ত হবার আগে এর আকার এরকমই ছিল। কিন্তু অনেক যুগ আগেই কবরতির অবস্থার অবনতি হতে থাকে, বিশেষ করে ওয়াহাবিয় আমলে। ওহাবিয়রা মনে করত যে কবরের মত বিষয়কে যত্ন সহকারে সংরক্ষন করার কিছু নাই। তাই অবহলায় ও অযত্নে কবরটি কালের গহ্বরে হারিয়ে যায়।

আল তায়েবাত ইন্টারন্যাশনাল সিটি

আল তায়েবাত ইন্টারন্যাশনাল সিটি সৌদি আরব

আল তায়েবাত ইন্টারন্যাশনাল সিটি: আল তায়েবাত ইন্টারন্যাশনাল সিটি সৌদি আরবের অন্যতম প্রসিদ্ধ শহর জেদ্দাতে অবস্থিত। এটি একটি বৃহৎ যাদুঘর। এখানে সৌদি আরবের প্রাচীন ঐতিহ্যের অনেক চিহ্নই সংরক্ষিত অবস্থায় দেখতে পাবেন। বিদেশী পর্যটকদের জন্যও এই জায়গাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এখানকার আরবিয় ধাঁচের স্থাপত্যশৈলী সত্যিই দেখার মত। এই সিটি একসময় ছিল সৌদির রাজা শেখ আব্দুল রউফ খলিল এর বাসভবন। তিনি ছিলেন খুবই ধনি একজন ব্যাবসায়ি। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর প্রাসাদকে সরকারী আওতায় এনে যাদুঘর বানিয়ে দেয়া হয়। প্রায় ৩০০ কক্ষ এবং ১২ টি আলাদা প্রাসাদ মিলে ছিল এই বিশাল বাসভবন। এখানে প্রচুর চিত্রকর্ম, পুরনো দলিল, আসবাবপত্র সহ আরও নানা রকম নিদর্শন রয়েছে।

কিংডম সেন্টার

কিংডম সেন্টার সৌদি আরব

কিংডম সেন্টার, সৌদি আরব: সৌদি আরবের অন্যতম উঁচু স্থাপনাগুলোর একটি এই কিংডম সেন্টার। এর চাইতে উঁচু অট্টালিকাও আছে সৌদি আরবে, কিন্তু তারপরও কিংডম সেন্টারের গুরুত্ব যেন অন্য গুলোর চাইতে বেশী। এর প্রধান কারন হল এর অসাধারণ স্থাপত্যও শৈলী। এত চমৎকার অট্টালিকা গোটা সৌদি আরবে আর দ্বিতীয়টি নেই। ৯৯ তলা বিশিষ্ট ৯৯২ ফুট উচ্চতার এই চমপ্রদ অট্টালিকা যেন বানিজ্যিক সৌদি আরবের প্রতিক হয়ে উঠতেছে। অত্যাধুনিক শপিং মলের পাশাপাশি এখানে বিখ্যাত ফোর সিজনস হোটেল এবং আধুনিক এপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ও শপিং মল আছে। ভেতরে বাহিরে সবখানেই এই টাওয়ার নান্দনিকতার এক অপূর্ব নিদর্শন। কিংডম সেন্টার শপিং মল দেশের অন্যতম বৃহৎ, অত্যাধুনিক এবং নান্দনিক শপিং মল।

সৌদি আরবের  শপিং মল: সৌদি আরবের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এর বিশালাকৃতির এবং জাঁকজমকপূর্ণ সব শপিং মল। সৌদি আরবের আবহাওয়া এমনিতে খুব রুক্ষ। বাইরে ঘোরা ফেরা করাটা সেখানে অতটা আরামদায়কও নয়। তাই সে দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের এবং বিদেশী পর্যটকদের কথা ভেবে অনেক আরামদায়ক এবং উন্নত পরিবেশ বিশিষ্ট সব শপিং সেন্টার তৈরি করে রেখেছে। কেনাকাটা, বেড়ানো বা সময় কাটানোর জন্য এই শপিং মলগুলো বেশ চমৎকার। এগুলো সাধারণত বেশ বড় আকৃতির হয়ে থাকে এবং এর ভিতরে সব ধরনের সুযোগ সুবিধাই আছে। আমরা এখন এরকম কিছু বিখ্যাত মলের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব।

সেন্ট্রিয়া মল, রিয়াদ

রাজধানী রিয়াদের অন্যতম বৃহৎ এবং জনপ্রিয় এই সেন্ট্রিয়া মল। এখানে প্রায় সব বিখ্যাত ব্রান্ডের শোরুমই পাওয়া যাবে। খাবার থেকে শুরু করে পোশাক, প্রসাধন সামগ্রি সহ যাবতীয় পন্য পাওয়া যায় এখানে। এখানকার ফুড কোর্ট টা বেশ জনপ্রিয়। ২ তলা বিশিষ্ট কোর্টে পশ্চিমা সকল বিখ্যাত ফাস্টফুড চেইনকে দেখতে পাবেন। রিয়াদ ভ্রমনে গেলে পর্যটকদের ভ্রমণ তালিকায় সাধারণত সেন্ট্রিয়া মলের নাম থাকবেই।

আল রাশিদ শপিং মল, খোবার

আল রাশিদ শপিং মল, সৌদি আরব

আল রাশিদ শপিং মল

খোবারের সবচাইতে বড় এবং জাঁকজমকপূর্ণ শপিং সেন্টারের কথা বললে আল রশিদ এর নাম চলে আসবে সবার আগে। ৫ তলা এবং ১৫০,০০০ বর্গমিটার আভ্যান্তরিন জায়গা বিশিষ্ট মলটি ১৯৯৫ সালে চালু হয়। পরে ২০০৬ সালে মলটি আরও পরিবর্ধন করা হয়। মলটির ভিতরে প্রায় ১০০০ টি দোকান আছে এবং পারকিংয়ে  ৮,০০০ গাড়ি রাখার সুব্যাবস্থা আছে। নামকরা সব বিদেশী ব্র্যান্ডের শোরুমই পাবেন এখানে। খোবার গেলে মলটিতে ঢু মারতে অবশ্যই ভুলবেন না।

রেড সি মল, জেদ্দা

রেড সি মল, সৌদি আরব

রেড সি মল

জেদ্দা শহরের সবচাইতে বড় শপিং মল এটি। ২৪২,০০০ বর্গমিটার আয়তনের এই বিশাল মলটি তিন তলা কমপ্লেক্স এবং আন্ডারগ্রাউন্ড পারকিং বিশিষ্ট। মলটির প্রধান আকর্ষণ হল দানিউব সুপার মার্কেট, স্পার্কি গেম সিটি ও ভারজিন মেগাস্টোর। ২০০৮ সালে যখন এই মলটি উম্মুক্ত করা হয়, তখন এর আভ্যান্তরিন ঝর্নাটি ছিল সৌদি আরবের সর্ব বৃহৎ। এখানেও আপনি সব ধরনের আন্তর্জাতিক ব্রান্ডের শোরুম পাবেন। ফুড কোর্টেও দেখবেন সব বিখ্যাত ফুড চেইনের মেলা। এর মধ্যে পাবেন, অ্যাপল বি, ম্যাকডোনাল্ডস,  কে এফসি, বার্গার কিং ইত্যাদি।

নতুন এবং ঝকঝকে শপিং মল, হোটেল, ইত্যাদির পাশাপাশি এরকম আরও অসংখ্য পুরাতন ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান ছড়িয়ে আছে সারা সৌদি আরব এর বুক জুড়ে। যেমন আলা উলা এর পরিত্যাক্ত শহর, হোরেব পরবতমালা, ধিয়াইন / আকাবাত আল বাহা এর মার্বেল পাথরের গ্রাম, মেরিবাহ এর দ্বিখণ্ডিত পাথর ইত্যাদি। সৌদি আরব আপনাকে  নতুন এবং পুরাতন দুই ধরনের অভিজ্ঞতাই আস্বাদন করার সুযোগ দিবে এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। রুক্ষ মরিভুমির মাঝে থেকেও জীবন যে নতুন নতুন রঙে রাঙানো হতে পারে, সেটা সৌদি আরব ভ্রমণ না করলে পুরোপুরি ভাবে বুঝতে পারবেন না। পরিশেষে আপনার নিরাপদ ও আনন্দময় সৌদি আরব ভ্রমণ কামনা করছি।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *