এমএম রহমাতুল্লাহ: পর্তুগালের দক্ষিণ উপকূল দুর্দান্ত সব সৈকত আর গুহায় ভরা, যাদের মধ্যে স্কাইলাইট সহ বেনাগিলের সাগর-গুহা অন্যতম। পর্তুগালের আলগার্ভে অবস্থিত এ গুহার আলো-আঁধারির ভেতর কী যেন একটা নেশা আছে! কী একটা গোপনীয়তা যেন ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকে। আর সেই গুহা যদি হয় সাগরপাড়ে, তার ভেতরে সাগরের পানি আসে-যায়, আর গুহার দেয়ালে ছলাত ছলাত করে বাড়ি খায়, তাহলে তো কথাই নেই!
একটি-দুটি নয়, রীতিমতো এমন গুহার একটা রাজ্যই আছে পর্তুগালের আলগার্ভে। আলগার্ভের সাগরপাড়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে আছে এমন হাজার হাজার গুহা। সেগুলোর কোনো কোনোটি আবার ঠিক গুহা নয়। ওগুলোকে বলা যেতে পারে গহ্বর। এপাশ থেকে ওপাশে সাগর বেরিয়ে গেছে, মাঝে একটি গুহার মতো জায়গা। সব মিলিয়ে রীতিমতো রোমাঞ্চকর একটি সমুদ্র উপকূল। এই গুহাগুলোর কোনোটি ছোট, কোনোটি বেশ বড়। যদিও দূর থেকে প্রায় সবগুলোকেই মনে হয় ছোট্ট। কিন্তু কোনো কোনোটির ভেতর ঢুকলে রীতিমতো চমকে যেতে হয়, এত বড়। আর সেসব গুহার ভেতরের দেয়ালগুলোতে পুরু হয়ে জমে আছে লবণ। ভেতরটা লবণের গন্ধে ভরে থাকে। আর পানির ছলাত ছলাত শব্দ। লবণ জমে থাকা গুহার দেয়ালগুলোতে সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে অবিরাম। গুহা মোটামুটি আকারের হলে, সে শব্দের আবার গুরুগম্ভীর প্রতিধ্বনিও ওঠে। সবচেয়ে অদ্ভুত যে গুহাটি, সেটি বেনাগিল গ্রামের কাছে। আলগার্ভের এই গ্রামের মানুষদের পেশা ছিল মূলত মাছ ধরা। তবে ইদানীং তারা পর্যটনের দিকেও ঝুঁকছে। কারণ গ্রামটির কাছেই যে সৈকতটি আছে, বেনাগিল সৈকত, সেটি এরই মধ্যে নাম করতে শুরু করেছে। আর এর অন্যতম কারণ ওই গুহা। অবশ্য আলগার্ভের কোনো গুহারই আলাদা করে নাম নেই। নাম নেই এই গুহারও। তবে বেনাগিলের সমুদ্রপাড়ের গুহা বললে মোটামুটি সবাই ওটিই বুঝে নেয়।
বেনাগিলের গুহার খ্যাতির অনেক কারণ থাকলেও মূল কারণ দুটি। প্রথমতঃ গুহাটা এত বড় যে গ্রীষ্ম ও শীতে ভেতরে একটি পুঁচকে মাঠের মতোই হয়ে যায়।অন্যদিকে বর্ষায়ও গুহার বালুময় মেঝের অনেকটাই পানির ওপর থাকে। আর দ্বিতীয় কারণ, ছাদের গর্তটা। ওই ফুটো গলে গুহার ভেতর বেশ রোদ চলে আসে। সেই রোদের জন্য গুহার ভেতরটা দেখতে যে কতটা চমৎকার আর বিস্ময়কর লাগে, যে একবার দেখেছে সেই কেবল বুঝতে পারে এর মাহাত্ম! বাস্তবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার সৃষ্টিতে যে কত রহস্য লুকিয়ে রেখেছেন, তা কেবল তিনিই জানেন। আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে মহান করুণাময়ের সৃষ্টি রহস্য বোঝা সত্যিই অসম্ভব।