উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

জুমার নামাজে চীনাদের উপচেপড়া ভিড় ও ইসলামী সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব

ড. মো: নূরুল আমীন: সিএনএন, রয়টারসহ কয়েকটি বিদেশী সংবাদমাধ্যম কর্তৃক চীনা মুসলমানদের উপর পরিবেশিত একটি সচিত্র প্রতিবেদন অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গত শুক্রবার প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে যে, চীন সরকার মুসলমানদের উপর থেকে মসজিদে যাবার ব্যাপারে বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের পর গত জুমার দিন সে দেশের মসজিগুলোতে উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। অনেক মসজিদের অভ্যন্তরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লীদের রাস্তার উপর জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়তে দেখা গেছে। এর আগে খবর বেরিয়েছিল যে মুসলমানদের হালাল খাবারের দোকানে বিশাল বিশাল লাইনের কারণে রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তারও আগে চীনা প্রেসিডেন্টকে কয়েকটি মসজিদে গিয়ে ইমাম, মুয়াজ্জিন এবং মুসল্লীদের সাথে আলোচনা এবং করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তিদানের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করার অনুরোধ করতেও দেখানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মের প্রতি কঠোর চীনা কম্যুনিষ্ট সরকারের এই নমনীয় ব্যবহারে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। আবার অনেকেই এটা বিশ্বাস করতে পারেছেন না। করোনা ভাইরাসের আবির্ভাবের আগে চীনে কুরআনসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থসমূহ কম্যুনিষ্ট ভাবধারার আলোকে সংশোধন এবং মসজিদ গীর্জায় প্রার্থনার উপর বিধিনিষেধ আরোপের কথাও শোনা গেছে। এরমধ্যে দেশটিকে করোনা ভাইরাস কাবু করে ফেলেছে। রোগাক্রান্ত মানুষ ও ডাক্তারের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। আমদানী রফতানী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, পর্যটন, সবক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অনেকে বলছেন ধর্মবিশ্বাসের উপর আঘাত এবং অনাচার এবং হারাম বস্তু খবার কারণেই এই ভাইরাস এবং এ থেকেই পরিবর্তনের সূচনা। এই পরিবর্তনের মূলে ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শের শ্রেষ্ঠত্বকেই প্রধান বলে অনেকে মনে করেন। কথাটা সত্য। তবে আমাদের আত্মসমালোচনার প্রয়োজন অনেক বেশী বলে আমি মনে করি। আজকে মসলিম সমাজে ইসলামী মূল্যবোধের অনেক কিছুই আমরা হারিয়ে ফেলছি এটা যেমনি সত্য তেমনি এটাও সত্য যে এই সমাজেই এমন অনেক কিছু আছে যা অন্য কোন সমাজে কষ্মিনকালে ছিলনা, আজও নেই। অন্তত: দেশ বিদেশে সকল মুসলমান জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর ঐক্যের জন্য ইসলামের সাফল্যের দিকগুলো জনসম্মুখে প্রচার করার প্রয়োজন সর্বাধিক। এতে সাধারণ সমানুষ ও যুব সমাজ ইসলামের প্রতি হতাশ হবে না বরং অনুপ্রাণিত হবে।
সম্প্রতি নিষিদ্ধ দেশ তিব্বতের উপর একখানা ভ্রমণ কাহিনী পাঠ করে আমার এই ধারনা আরো বদ্ধমূল হয়েছে। বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত তিব্বত দেশটি বহু বছর বৌদ্ধ ধর্মযাজক লামার শাসনাধীনে ছিল। সে সময় ভারতীয়রা তিব্বতে প্রবেশ করতে পারত না। বৃটিশ শাসকদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে কয়েকজন ভারতীয়কে গ্রেফতার করার পর লামা এই কঠোরতা অবলম্বন করেছিলেন। বলা বাহুল ভারতীয় শাসক ও পন্ডিতরা তিব্বতকে ভারতের দিকে আকৃষ্ট করা এবং তিব্বতীদের হিন্দুত্ববাদে দীক্ষিত করার জন্য আপ্রান চেষ্টায় রয়েছে; কিন্তু দেশটি চীনা কম্যুনিষ্টদের দখলেই রয়েছে। ১৯৬২ সালে তিব্বত নিয়ে চীনের সাথে ভারতের একটি যুদ্ধও হয়েছে এবং এসময় থেকে লামা সদলবলে ভারতের আশ্রয়েই রয়েছেন। বলা বাহুল্য তিব্বতের ন্যায় চীনও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। মঙ্গোলিয়াও তাই। তবে এসব দেশে অনেক মুসলমানও রয়েছেন। রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন নামে ভারতে একজন খ্যাতনামা বৌদ্ধ পন্ডিত ছিলেন। হিন্দি সাহিত্যের একজন দিকপাল হিসেবেও তিনি পরিচিত। হিন্দি ভাষায় তিনি প্রচুর বই লিখেছেন এবং তার অনেক বই বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। ভারতের উত্তরাঞ্চলের বহু মুসলমান কৃষক শ্রমিক হিন্দুদের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে হিন্দু ধর্ম দীক্ষা নেয়ার কথা তারই একটি গ্রন্থে পড়েছিলাম। তিনি ১৯২৯ সালে নেপাল হয়ে ভিক্ষুর বেশে তিব্বত গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল বৌদ্ধ ধর্মের যে সব ডকুমেন্ট ভারত থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল তিব্বতে সেগুলো অনুসন্ধান করা, কারণ ভারতীয় পন্ডিতরাই তিব্বতে গিয়ে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেছিলেন। তারা সে সময় তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্মীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পণ্ডিতজীর এই সফর সফল হয়েছিল। তিনি বুদ্ধের বহু হারানো এবং দুষ্প্রাপ্য দ্রব্যাদি এবং গ্রন্থ উদ্ধার করে শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিলেন। পণ্ডিত রাহুল ১৫ মাস তিব্বতে ছিলেন এবং অত্যন্ত কাছে থেকেই তিনি তিব্বতি বোদ্ধদের জীবনযাত্রা প্রণালী প্রত্যক্ষ করেছেন। সে সময়ে তিনি নেপালী ও তিব্বতি বৌদ্ধ ব্যতীত লাদাখ ও মঙ্গোলিয়া থেকে আগত কিছু মুসলমান পরিবারকেও সেখানে বসবাস করতে দেখছেন। তিব্বতে যে মুসলমান আছে সে ধারণা তার ছিল না। তিনি তিব্বতের রাজধানী লাসা যাবার পথে ব্রহ্মপুত্রের তীরে লর্সেজোং নামক স্থানে নৌকার জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করার সময় ভোর রাতে আজানের ধ্বনি শুনে বিস্মিত হয়ে পড়েন। পরে স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন যে এখানে মুসলমানদের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। সেখানকার মুসলমানদের আচার আচরণ, সামাজিক লেনদেন, নৈতিক চরিত্র প্রভৃতি সম্পর্কে তিনি উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা করেছেন। বৌদ্ধদের সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত খারাপ ধারণা পেয়েছিলেন। তিনি তার ভ্রমণ বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন যে তাদের লজ্জা শরমের কোনও বালাই নেই। প্রকাশ্যে নারী পুরুষ দৈহিক সংসর্গে দ্বিধাহীনভাবে লিপ্ত হয়। বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা রক্ষিতা পোষণ করেন।
পণ্ডিত রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন তিব্বতী সমাজব্যবস্থার যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা অত্যন্ত নোংরা। ভারতীয় সমাজে কয়েক সহোদর ভাই মিলে এক স্ত্রী গ্রহণের কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। কিন্তু সকল সহোদর বোন মিলে এক স্বামী গ্রহণ করার কথা তার পুস্তকে তিনিই প্রথম উল্লেখ করেছেন। পণ্ডিতজী বলেছেন যে সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা না করার জন্যই তিব্বতীরা এই উভয়বিদ পদ্ধতি চালু রেখেছে। তিনি বহু স্ত্রী ভোগ করার কথাও বলেছেন। এমনকি কোন বাড়িতে অতিথি হিসেবে রাত্রি যাপন করতে ইচ্ছে করলে গৃহকর্তার স্ত্রী বা কন্যাকে ভোগ করা সহজ বলে তিনি লিখেছেন। তবে তার কাছে বেশি খারাপ লেগেছে নারী-পুরুষের একত্রে উলঙ্গ হয়ে নদীতে গোসল করা দেখে। কিন্তু সেখানকার মুসলমান অধিবাসীদের তিনি বেশ প্রশংসা করেছেন, বলেছেন, এরা নিজ ধর্মের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান।
চীনের একটি প্রদেশের নাম সিনজিয়াং বা পূর্ব তুর্কিস্তান। মঙ্গোলিয়া ও তিব্বত সীমান্তে অবস্থিত এই প্রদেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসীই মুসলমান। পণ্ডিত রাহুল তিব্বতে পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলমান ব্যবসায়ীদের দেখেছেন। মার্কিন লেখিকা পার্ল এম বাক-এর কথা অনেকেই শুনেছেন। তিনি চীনের উপর বহু বই লিখেছেন। তার অনেক বই বাংলায়ও পাওয়া যায়। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন তার গুড আর্থ বইয়ের নাট্যরূপ ধারাবাহিকভাবে প্রচার করেছিল। এই লেখিকা বুদ্ধের অনুসারী চীনা সমাজের চালচিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে একজন মুসলমান মহিলার বর্ণনা দিয়েছেন, যার বাড়ি চীনের পূর্বাঞ্চলে, তিনি তিব্বত এসেছিলেন তার পিতার কবর জিয়ারতে। তার শালীনতাবোধ ও পোশাক-আশাকদৃষ্টে স্থানীয় মেয়েরা আকৃষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে মেয়েটি পরিচয় দিতে বাধ্য হয়েছিল যে, সে মুসলমান।
পণ্ডিত রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন কিংবা পার্ল এম বাক মুসলমান সমাজ সম্পর্কে তাদের পুস্তকে বিস্তারিত কিছু লিখেননি, অনেকটা উপেক্ষা করে গেছেন। কিন্তু এই উপেক্ষার মধ্যেই এদের যে চরিত্র ফুটে উঠেছে সেটা চিরাচরিত সমাজ ব্যবস্থার চেয়ে আলাদা, শ্রেষ্ঠতর।
এইডসের মহামারী সম্পর্কে দেশ-বিদেশে অনেক সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এসব রিপোর্ট ও সেমিনারে এইডস মহামারির কারণ হিসাবে নৈতিক অবক্ষয় ও যৌনাচারকে দায়ী করা হয়েছে এবং ধর্মীয় অনুশাসন ও বিধি-নিষেধ অনুশীলনের কারণে মুসলিম দেশসমূহকে অপেক্ষাকৃত এইডসমুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ধর্মীয় মূল্যবোধ কিভাবে সমাজকে রক্ষা করতে পারে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিশ^স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯২ সালের নবেম্বর মাসের এক রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে, মুসলিম দেশগুলো তো বটেই, অমুসলিম দেশসমূহের মুসলিম সংখ্যালঘু এলাকাগুলোও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইডসমুক্ত। তারা ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় বিধি-নিষেধ নিষ্ঠার সাথে পালন করে। তাদের সামাজিক অনুশাসন এতই কঠোর যে, বেলেল্লাপনা করার সাহস কেউ রাখেন না।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী অমুসলিম দেশের বেশির ভাগ মুসলমান প্রকৃত অর্থে মর্দে মুমিন। তারা অত্যন্ত বৈরী পরিবেশে মরণপণ সংগ্রাম করে নিজেদের ঈমান-আকিদা ও তাহজিব-তমদ্দুনকে রক্ষা করে চলেছেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বসবাস করে তাদের ত্যাগ ও ঈমান রক্ষার কৌশল আমরা ধারণা করতে পারি না।
চীনের মুসলমানদের নামাজ দিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম। তাদের তাদের কথাই আবার বলি। ১৯৯২ সালের নবেম্বর মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (ঋঅঙ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত দশদিনব্যাপী এক সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমি বেইজিং সফর করি। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা উন্নয়নে সমবায়ের ভূমিকা বিশ্লেষণ ছিল এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয়। বাংলাদেশ থেকে আমি একক প্রতিনিধি ছিলাম এবং বেইজিং এর কূটনৈতিক এলাকা সংলগ্ন হোটেল নভোটলে আমাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। নির্ধারিত তারিখের একদিন আগে সকাল ১১টার দিকে আমি হোটেলে পৌঁছি এবং বরাদ্দকৃত কক্ষে উঠি। চীনাদের বেশিরভাগ লোক ইংরেজি জানেনা। আমি আমার চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া প্রভৃতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। বিশেষ করে হালাল খাবার ও নামাজের জন্য কেবলা নির্ণয়। পরদিন সম্মেলন শুরু হবার কথা, তাই খুব একটা তাড়াহুড়া ছিল না। রুমে বসে আছি, প্রায় একটার দিকে দরজায় নক করার শব্দ পেলাম। খুলেই দেখি দুজন আগন্তুক, হিজাব পরা এক মহিলা এবং স্যুট-টাই পরা এক ভদ্রলোক। সালাম দিয়ে পরিচয় দিলেন, মহিলা খাদিজা, মালয়েশিয়ান সরকারের কৃষি বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারী এবং পুরুষ ভদ্রলোক একই সরকারের সমবায় নিবন্ধক, নাম হাজী ইসমাইল। হোটেল রেজিস্ট্রারে আমার নাম দেখে ধারণা করেছেন যে, আমি মুসলমান। তাই আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। তারাই কেবলার প্রসঙ্গ তুললেন। খাদিজা তার সাথে আনা দিকনির্ণয় যন্ত্র (কম্পাস) দিয়ে আমার কক্ষের কেবলা ঠিক করে দিলেন এবং বললেন অদূরেই তাদের জানা একটি ইসলামী কমপ্লেক্স আছে, তারা সেখানে যাচ্ছেন, খাবেন এবং নামাজ পড়বেন, আমি ইচ্ছা করলে তাদের সাথে যেতে পারি। বলাবাহুল্য তারা উভয়েই স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। তাদের প্রস্তাব শুনে আমি তো মহাখুশি। তৈরি হয়ে বেলা একটার দিকে সেখানে গেলাম। হোটেল থেকে ১০ মিনিটের পায়ে হাঁটার পথ। সেখানে একটি বিরাট ক্যাম্পাসে চীনা মুসলমানরা মসজিদ, মক্তব, মাদ্রাসা, এতিমখানা, একটি সুপার স্টোর ও সুদমুক্ত ব্যাংক স্থাপন করেছেন। অসাধারণ পরিপাটি ক্যাম্পাস। মসজিদে নামাজ পড়ে খাওয়া-দাওয়া সেরে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসার প্রধানশিক্ষকের সাথে আমরা বসলাম। মালয়েশিয়ানরা দেখতে চীনাদের মতো। কিন্তু ভিন্ন চেহারার আমার প্রতি তাদের আগ্রহ ছিল বেশি, যখন বাংলাদেশের ভৌগোলিক বর্ণনা দিয়ে বললাম যে, আমরা এই দেশে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমান, সকাল বেলা ফজরের আযানের আওয়াজ শুনে আমাদের ঘুম ভাঙে, তা শুনে তারা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছিলেন। তাদের জীবনযাত্রার অধীনে কিভাবে তারা নিজেদের ধর্ম বিশ^াস রক্ষা করছেন এবং ছেলেমেয়েদের ইসলামী শিক্ষা দিচ্ছেন। তার উত্তরে তারা যে ভয়াবহ নির্যাতনের ইতিহাস শুনিয়েছেন, আমরা তার কল্পনাও করতে পারি না। ঈমান রক্ষা, দ্বীনী তরবিয়ত জারি রাখা এবং ছেলেমেয়েদের কুরআন-হাদীস শিক্ষা দেয়ার জন্য তারা নির্ধারিত দূরত্বে মাটির নিচে বাড়ি ঘর করে জীবনের প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে দ্বীনী কাজ করেছেন। হাল ছেড়ে দেননি। মাও সেতুং এর পতনের পর ডেং এর আমলে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হওয়ায় তারা প্রকাশ্যে বেরিয়ে এসেছেন। আমার মনে হয়েছে প্রতিটি চীনা মুসলমান একেকজন মুজাহিদ। আল্লাহ তাদের এবং আমাদের সহায় হউন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *