উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

গ্রিনল্যান্ড, তুমি কার!

আবদুল কাদের: গ্রিনল্যান্ডের ভৌগোলিক অবস্থান সুমেরু অঞ্চলের মহাসাগর ঘেঁষা। এ রাজ্যটি আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত। দেশটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের। তবে ডেনমার্ক দ্বারা স্বীকৃত। গ্রিনল্যান্ডবাসী নিজেরাই তাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করে। কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে তারা এখনো ডেনমার্কের ওপর নির্ভরশীল। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য- অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সরকারি ভর্তুকি। জেনে অবাক হবেন, গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ৬০ শতাংশ সরকারি রাজস্বের ভর্তুকি ডেনমার্ক বহন করে। আয়তনের দিক থেকে গ্রিনল্যান্ড পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দ্বীপ। দ্বীপটি প্রায় ২১,৭৫,৬০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। যা ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, স্পেন, ইতালি, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড এবং বেলজিয়ামের সমান। তবে দেশটির প্রায় ১৮,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল বরফে ঢাকা। অর্থাৎ দ্বীপটির চার ভাগের তিন ভাগই (৮০ শতাংশ) বরফে আচ্ছাদিত। গ্রিনল্যান্ডের শহরগুলো আটলান্টিক এবং আর্কটিক মহাসাগরের উপকূল ঘেঁষা। কারণ, এই অঞ্চলগুলোই (প্রায় ৩,৪১,৭০০ কিলোমিটার) কেবল বরফমুক্ত। যা নরওয়ের চেয়ে বড় এবং ডেনমার্কের দশ গুণ। দেশটির উত্তরাঞ্চল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব ২৬৭০ কিলোমিটার। যার আয়তনে নরওয়ের বার্গেন শহর থেকে তিউনিসিয়ার রাজধানী তিউনিসের দূরত্ব। একইভাবে দেশটির পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব ১০৫০ কিলোমিটার। যা আয়তনের দিক থেকে স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গ থেকে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের সমান দূরত্ব। উত্তর মেরুর রাজ্য বলে এখানকার গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৮ থেকে মাইনাস ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানকার শীতকাল একটু বেশিই দীর্ঘ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের চাদরে ঝুলে থাকে গোটা গ্রিনল্যান্ড। এখানে এমন হিমবাহ রয়েছে যা সমুদ্রতল থেকে ৩,৩০০ মিটার বা তার বেশি পুরু। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যদি কখনো জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে তবে গ্রিনল্যান্ডে হিমবাহের বরফ গলে সমুদ্রের পানি ৭ মিটার বৃদ্ধি পাবে।

গ্রিনল্যান্ডের অধিবাসীরা: গ্রিনল্যান্ডে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের বসবাস। তবে এর সংখ্যা মাত্র ৫৭ হাজার। এটি বিশ্বের সর্বনিম্ন জনসংখ্যার দেশ। যার মধ্যে ৩০ শতাংশের বসবাস নিউইয়র্ক সিটিতে। গ্রিনল্যান্ডে দুটি প্রাথমিক ভাষা রয়েছে- গ্রিনল্যান্ডিক এবং ড্যানিশ। গ্রিনল্যান্ডিক ভাষায় গ্রিনল্যান্ডকে কালালিত নুনাত (জনগণের ভূমি) বলা হয়। এখানকার অধিবাসীরা ইনুইট নামেই পরিচিত। ইনুইট শব্দের অর্থ ‘মানুষ’। বিদেশিরা ইনুইটদের এস্কিমো বলে ভুল করে থাকে। যা স্থানীয় কিছু বাসিন্দার জন্য বেশ আপত্তিকর। তারা নিজেদের এস্কিমোর বদলে ইনুইট পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। গ্রিনল্যান্ডে প্রায় ৮৮ শতাংশ ইনুইটের বসবাস। বাকি ১২ শতাংশ আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ফিলিপাইন, সুইডেন, নরওয়ে, জার্মানি এবং ড্যানিশ বা ডাচদের উত্তরসূরি (অর্থাৎ মিশ্র ইনুইট)। প্রায় ৯০ শতাংশ ইনুইট দেশটির ১৬টি শহরে বাস করে। তন্মধ্যে গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক-এ প্রায় ১৮ হাজার ইনুইট বসবাস করে। বাকি ১০ শতাংশ ইনুইন সম্পূর্ণ বরফের তৈরি ছোট ছোট বসতিতে বসবাস করে। ইনুইটরা দেখতে সাধারণত বেঁটে ও স্বাস্থ্যবান গড়নের হয়ে থাকে। তাদের নাক থাকে চ্যাপ্টা, চুল কালো ও খাড়া। ২০১৪ সালের তত্ত্ব অনুসারে, এখানকার প্রায় ৯৫ শতাংশ ইনুইট খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। বাকি ৫ শতাংশ অন্য ধর্মাবলম্বী। গ্রিনল্যান্ডে বসবাসরত পুরুষ ও নারীর গড় আয়ু যথাক্রমে ৬৯ এবং ৭৪ বছর। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বেশির ভাগ ইনুইটের বসবাস। গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলে গড়ে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রা বিরাজ করে। অন্যদিকে শীতকালে এখানকার গড় তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। যা উত্তর গ্রিনল্যান্ডের তুলনায় অনেক ঠাণ্ডা।  সম্পূর্ণ দ্বীপটি বরফে মোড়ানো বলে এখানকার মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান উৎস মাছ শিকার। উত্তর মেরুর গ্রিনল্যান্ডবাসী নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বসবাস করলেও সৌভাগ্যবশত, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা তাদের বসবাসে কখনো বাধা হয়নি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ন্যাশনাল পার্ক: পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যান ‘ন্যাশনাল পার্ক’ গ্রিনল্যান্ডেই অবস্থিত। নাম ‘নর্থ-ইস্ট গ্রিনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক’। জীববৈচিত্র্যের অনন্য এক লীলাভূমি এটি। এখানে প্রায় ৩১০ প্রজাতির ভাস্কুলার উদ্ভিদের দেখা মেলে, যার মধ্যে ১৫ প্রজাতির উদ্ভিদ পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের দুটি মন্ত্রণালয় (জীবিকা, বাসস্থান, কৃষি, মৎস্য ও পরিবেশ সম্পর্কিত) পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব ভাগ করে নেয়। মন্ত্রণালয় দুটি প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহযোগিতা করে আসছে। নর্থ-ইস্ট গ্রিনল্যান্ড ন্যাশনাল পার্কটি ১৯৭৪ সালে প্রথম তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে এর আকার প্রসারিত করে ০.৯৭ মিলিয়ন বর্গ কি.মি. (০.৩৮ মিলিয়ন মাইল) করা হয়। পার্কটিতে সংরক্ষিত উদ্ভিদ ও প্রাণী বরফে আচ্ছাদিত গ্রিনল্যান্ডকে রক্ষা করে। এখানে বিরল প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে মাস্ক ষাঁড়, মরু ভাল্লুক, আর্কটিক নেকড়ে, আর্কটিক খরগোশ, রেইনডিয়ার এবং তুষারময় পেঁচা। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য সম্পদেও গ্রিনল্যান্ড পৃথিবীখ্যাত। এখানকার সাগর উপকূলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হুডেড ও গ্রে শিলদের। আছে সাদা বেলোগা তিমি, লম্বা দাঁতের ওয়ালরাস (বিরল প্রজাতির জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী)। আছে পেরেগ্রিন ফ্যালকন, বড় পানকৌড়ি, গাঙচিলসহ রং বেরঙের নানা প্রজাতির পাখি। সব মিলিয়ে পার্কটি জীববৈচিত্র্যের সত্যিকারের স্বর্গভূমি। এটি পশুপাখিদের অভয়াশ্রম। কারণ, এটি মানুষের হস্তক্ষেপ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। তবে, এখানেও কিছু মানুষের উপস্থিতি আছে। গবেষকরা এই অঞ্চলে টানা বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালান। অনেক পর্যটকও কৌতূহলবশত গবেষণা চালানোর প্রয়াস করেন। ফলে অনেক সময় উদ্ভিদ এবং প্রাণীর ক্ষতিসাধন ঘটে। দেশটির সবচেয়ে দূরবর্তী শহর ইতোকরতরমিত থেকে শিল ও তিমি ব্যবসায়ীরা এখানে যাতায়াত করেন। যা পূর্ব গ্রিনল্যান্ডে অবস্থিত। পার্কটির বড় হুমকি জলবায়ু পরিবর্তন। দ্রুত বরফ গলে সমুদ্রের পানি বেড়ে বিপদসীমায় অতিক্রম করছে।

নামকরণের ইতিহাস: ইতিহাসবিদরা অনেকে মনে করেন, পূর্বে দ্বীপটির নাম ছিল ভাইকিং (জলদস্যু)। তাদের মতে, আইসল্যান্ডের ভাইকিং এরিক দ্য রেড গ্রিনল্যান্ডের আবিষ্কারক। তার আসল নাম এরিক থরভালদসন। কথিত আছে, হত্যার অপরাধে এরিক আইসল্যান্ড থেকে নির্বাসিত হন। এরপর তিনি গ্রিনল্যান্ডে আসেন। তখন ছিল গ্রীষ্মকাল। এরিক নেমেছিলেন দ্বীপটির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে। যে স্থানটি উষ্ণ তাপমাত্রা, ফসল ও সবুজ প্রকৃতির জন্য সহায়ক ছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এরিক সম্ভবত বসতি স্থাপন ও অন্যদের আকৃষ্ট করার জন্য দ্বীপটির নাম দেন গ্রিনল্যান্ড। অন্য তথ্য থেকে জানা যায়, এরিক দ্বীপটি আবিষ্কারকারী প্রথম ব্যক্তি নন। তবে তিনি যে ইউরোপের প্রথম নাগরিক হিসেবে গ্রিনল্যান্ডে পা রাখেন ও বসতি স্থাপন করেন তাতে সন্দেহ নেই। আরেক তত্ত্ব মতে, দ্বীপটিতে ৪-৫ হাজার বছর আগে মানুষ এসেছিল প্রথম কানাডা থেকে। গ্রিনল্যান্ডকে গ্রিন বলা সম্পূর্ণ ভুল। কেননা, এখানে সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে। কেউ কেউ মনে করেন দ্বীপটি প্রকৃতপক্ষে ‘গ্রান্টল্যান্ড’ নামে পরিচিত ছিল।

নেই পরিবহন ব্যবস্থা: বরফের রাজ্য গ্রিনল্যান্ডে যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধাজনক নয়। অন্য দেশ থেকে গ্রিনল্যান্ডে সরাসরি যাতায়াতের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। সমুদ্রপৃষ্ঠে দেশটির অবস্থান হলেও নেই আন্তর্জাতিক ফেরি সার্ভিস। গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান উত্তর আমেরিকা মহাদেশে ঠিকই কিন্তু ইউরোপের কয়েকটি দেশের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো। অন্য দেশ থেকে গ্রিনল্যান্ডে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে কেবল  ৪টি বিমানবন্দরই ভরসা। এদের মধ্যে ৩টিই ইউরোপের আইসল্যান্ডে অবস্থিত। আইসল্যান্ডের বিমানবন্দর ৩টি- রেইকভিক, কেফ্লাভিক এবং আকুরেরি। আর চতুর্থ বিমানবন্দরটি অবস্থিত ইউরোপের আরেকটি দেশ ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে। এই বিমানবন্দর থেকে এয়ার গ্রিনল্যান্ডের ফ্লাইটে চড়ে ৫ ঘণ্টায় গ্রিনল্যান্ড পৌঁছানো সম্ভব। এ ছাড়া কানাডিয়ান আর্কটিক ও নরওয়ের সভালবার্ড থেকে সমুদ্রপথে জাহাজে  চড়ে আইসল্যান্ডে পৌঁছানো যায় এবং আইসল্যান্ড থেকে গ্রিনল্যান্ড। গ্রিনল্যান্ডের অভ্যন্তরে রয়েছে ১৬টি বড় শহর। কিন্তু একটি শহর থেকে আরেকটি শহরে যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা নেই। যদিও কিছু শহরের দূরত্ব খুবই কম। কিন্তু বছরের অধিকাংশ সময় এখানকার পুকুর, ডোবা, খালবিল, রাস্তাঘাট থাকে বরফে ঢাকা। তাই পরিবহন ব্যবস্থা ভালো নয়। তাছাড়া প্রকৃতির বড় বড় বরফের পাহাড়ের বাধা তো আছেই! অর্থাৎ নির্দ্বিধায় বলাই যায়, দেশটির অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থা মোটেও ভালো নয়। শহরগুলোয় কার্যত নেই কোনো অভ্যন্তরীণ রাস্তা, রেলপথ ও নৌপথ। তাই আর্কটিক তুন্দ্রার মতো এলাকায় বসবাসকারী মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা যে কত ভয়াবহ তা অনুমান করলেই বোঝা যায়। স্থানীয়রা তাদের যাতায়াতে ব্যবহার করে উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার। এক শহর থেকে আরেক শহরে যাতায়াতে তারা নিজেদের তৈরি যানবাহন ব্যবহার করে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্লেজ, কায়াক এবং স্নো স্যু। সাধারণত তিমি মাছের চোয়াল, রেইনডিয়ারের খুলি, শিল মাছের হাড় আর কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় এসব স্লেজ। একটা স্লেজ পাঁচটা কুকুর টেনে নিয়ে যায়। স্থানীয়দের কাছে স্লেজ টানা কুকুরগুলোর বেশ কদর। এ ছাড়া যাতায়াত এবং শিকারের জন্য স্থানীয়রা কায়াকও (ছোট নৌকা) ব্যবহার করে। মালামাল পরিবহন ও যোগাযোগ রক্ষায় এগুলোই এখানকার প্রধান বাহন। পশ্চিম গ্রিনল্যান্ডের ক্যাঞ্জারলুসুয়াক শহরে রয়েছে আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ যাতায়াতের সবচেয়ে বড় পরিবহন ব্যবস্থা।

আত্মহত্যা প্রবণতায় বিশ্বে প্রথম: স্বেচ্ছা- মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়ায় গ্রিনল্যান্ডবাসী সারা বিশ্বে প্রথম। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে গ্রিনল্যান্ড পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা প্রবণ দেশ। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য গ্রিনল্যান্ডবাসীর জন্য দুর্ভাগ্যই বটে। সংস্থাটির জরিপে আত্মহত্যার দিক দিয়ে এগিয়ে আছে এমন ১১০টি দেশের মধ্যে প্রথম পাঁচটি দেশ হলো- গ্রিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, গায়ানা, দক্ষিণ কোরিয়া এবং কাজাখস্তান।  প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্রিনল্যান্ডের প্রতি লাখে অন্তত ৮৩ জন্য মানুষ স্বেচ্ছা- মৃত্যুবরণের পথ বেছে নেন। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লাখে ১৩.৭ জন এবং গায়ানায় লাখে ৩০.২ জন আত্মহত্যা করেন। তবে যেহেতু এটি একটি দেশ নয়, ডেনমার্কের রাজ্যের একটি স্বাধীন অঞ্চল তাই বলা যায়, গায়ানা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ দেশ। এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রিনল্যান্ডের ইনুইটদের একটি বড় অংশ আদিম জনগোষ্ঠী। তাই নানা সঙ্গত কারণেই তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। যদিও গ্রিনল্যান্ডের দাবি, তারা নিজেকে হত্যা করছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বা বৈরী আবহাওয়া এর কারণ নয়। মনোবিশেষজ্ঞদের দাবি, গ্রিনল্যান্ডবাসীর মধ্যে নৈতিকভাবে অধঃপতনের ফলে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। যখন পরিবারের কোনো সদস্য বা বন্ধুদের মধ্যে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তখন তার আশপাশের লোকেরাও একই ঝুঁকিতে থাকে। এমন আত্মাহুতির যথেষ্ট রেকর্ড রয়েছে গ্রিনল্যান্ডে। একাকী এবং বিচ্ছিন্ন সম্প্রদায়গুলোই এমন পরিস্থিতির শিকার সবচেয়ে বেশি। বিস্ময়কর তথ্য হলো- দেশটিতে কোনো মনোবিশেষজ্ঞ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে গ্রিনল্যান্ডের কমপক্ষে ২০ বছর সময় লেগে যাবে।

‘প্রতিটি মেঘ রুপালি আস্তরণে ঢাকা’। প্রবাদটির মতো গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহে রত্ন ও খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। নিচেও রয়েছে মূলবান রত্ন ভাণ্ডার। চোখ ঝলসানো সাদা বরফের আস্তরণ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, গ্রিনল্যান্ডে রয়েছে সোনা, হীরা, রুবি, নিকেল, কপার ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের ভাণ্ডার। এ কারণেই গ্রিনল্যান্ড ভবিষ্যতে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করবে। বিশ বছর আগের ঘটনা, জলবায়ু পরিবর্তনে দ্বীপটি ঢেকে রাখা বেশিরভাগ হিমবাহ প্রথম গলতে শুরু করে। তাতেই প্রকাশ পায় গ্রিনল্যান্ডের রত্ন পাথরের সমৃদ্ধশীল জমিন। এক কথায়, বৈচিত্র্যময় পাথরের ভাণ্ডার গ্রিনল্যান্ড। ২০১০ সালে গ্রিনল্যান্ডের খনিজ কোম্পানি ‘অ্যাঞ্জেল মাইনিং’ প্রথম রত্ন ভাণ্ডার নিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৭ সালে প্রায় ৫৬টি অনুসন্ধানকারী দলকে অনুসন্ধানের অনুমোদন দেয় দেশটির সরকার। সরকারের তথ্য মতে, দেশটির উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে অকিক (মূল্যবান মণিরাজি), দামি পাথর এবং অ্যালমেনডাইন। পশ্চিমে রয়েছে রুবি, হীরা, পান্না, নীলকান্তমণিসহ অনেক নামিদামি পাথর। দক্ষিণ-পশ্চিমে পাওয়া যায় টাগটুপাইট, অ্যামাজোনাইট, নীলা, চন্দ্রকান্তমণি, সোডালাইট, ল্যাবরাডোরাইট খনিজ সম্পদ ও পূর্ব গ্রিনল্যান্ডের জমিনজুড়ে রয়েছে করান্ডাম, অকিক এবং দামি সব পাথর। বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ ইউরেনিয়াম খনি তৈরির পরিকল্পনা করা হয় ২০১৩ সালে। এর কিছুদিন আগে দেশটির সরকার সাংসদীয় অধিবেশনে ইউরেনিয়াম খনির ওপর নিষেধাজ্ঞা অপসারণের পক্ষে ভোট দেয়। ‘ব্লুজে মাইনিং’ গ্রিনল্যান্ডের স্থানীয় কোম্পানি ডুন্ডাস’কে সঙ্গে নিয়ে খনি সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করে। তিন বছর পর ২০১৮ সালে সরকার খনিতে প্রবেশের অনুমতি দেয়। কিছু কোম্পানি ইতিমধ্যে তার সুফলও পায়। ড্যানিশ কোম্পানি হার্টম্যানস গ্রিনল্যান্ডিক রুবি-নীলকান্তমণি ব্যবহার করে তাদের জুয়েলারি তৈরি করে।

মধ্যরাতের সূর্য: রাত ৩টা, কিন্তু চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে সূর্য। অবাক হচ্ছেন! এটা গ্রিনল্যান্ডের বিস্ময়। সারা বছর বরফে ঢাকা থাকলেও গ্রীষ্মে বরফ কেটে গেলে দেশটির রূপ পাল্টে যায়। এমন ঘটনা যে কেবল উত্তর মেরু অঞ্চলেই ঘটে তা নয়, দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের অনেকটা অংশজুড়ে গ্রীষ্মে একটা নির্দিষ্ট সময় আক্ষরিক অর্থেই সূর্য ডুবতে দেখা যায় না। অভুত হলেও সত্য যে, তখন ২৪ ঘণ্টা সূর্য আলোরিত হয়। দিন-রাত তখন সমান থাকে। গ্রিনল্যান্ডবাসীও সময়টাকে বেশ উপভোগ করে। তারা তখন নৌকা ভ্রমণ, মাছ শিকার, বারবিকিউ পার্টি এবং নানা খেলায় মেতে থাকে। প্রতি বছর গ্রীষ্মে অন্তত আধা ঘণ্টা এমন দৃশ্যের দেখা মেলে আর্কটিক উপকূলে। তবে গ্রিনল্যান্ডের কিছু অঞ্চলে মধ্যরাতের সূর্য একটু দীর্ঘায়িত হয়। দেশটির ইলুলিসাত শহরে দুই মাসেরও বেশি সময় এমন দৃশ্য দেখা যায়। কানাক শহরে তো প্রায় সাড়ে তিন মাস সূর্য অস্তই হয় না। তবে একই সময় দেশটির দক্ষিণের শহর নানরতালিকে মধ্যরাতের সূর্যের দেখা মেলে না। এখানে ২০ ঘণ্টা সূর্যের দেখা মেলে।

আমেরিকার বৃহত্তম সংরক্ষিত ধ্বংসাবশেষ: প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো বিল্ডিংয়ের ধ্বংসাবশেষ ভ্যালসি চার্চ। এটি উত্তর আমেরিকার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রথম গির্জাগুলোর একটি। সম্ভবত গ্রিনল্যান্ডে প্রথম অধিবাসীদের আগমনের কয়েক শতাব্দীর মধ্যে ১০ থেকে ১টি গির্জা নির্মিত হয়েছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম এই চার্চ। গির্জাটি ১৪ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নির্মিত। এক তত্ত্ব মতে, নর্স (নরওয়ের) অধিবাসীরা গির্জাটি নির্মাণ করেছিলেন। তারা গ্রিনল্যান্ড এসেছিলেন আইসল্যান্ড ও স্ক্যান্ডিনাভিয়া থেকে। গির্জার খুব কাছেই নির্মিত হয়েছিল ১৪টি ঘর। গির্জার ভবন এবং অভ্যন্তরীণ হল দুটি পাথর দিয়ে তৈরি। এটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল বড় গ্রানাইটের টুকরো। পুরো ভবন নির্ভুলতার সঙ্গে নির্মাণ করা হয়। তবে, একটি ভুল ঠিকই ঘটেছিল। এটি কবরস্থানে তৈরি। তবে কবরগুলো অন্য স্থানে না সরিয়ে তৈরি করায় নির্মাণের পর এর ভিত্তি ও প্রাচীর ভেঙে পড়ে। ১৯৯৯ সালে গির্জার ধ্বংসাবশেষ ভাঙা প্রতিরোধে কাজ করা হয়।

ওয়ার্ল্ড গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ: গ্রিনল্যান্ডের উম্মান্নাক, ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই শহরে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ। আর্কটিক মহাসাগর থেকে ৬০০ কিলোমিটার (৩৭৩ মাইল) উত্তরে অবস্থিত শহরটি। মাত্র ১৩০০ মানুষের বসবাস এখানে। এটি বিশ্বের উত্তরতম গলফ কোর্স। প্রতি বছর প্রতিযোগিতার আগে বরফ কেটে এর ডিজাইন (কোর্সের আয়তন নির্ধারণ) করা হয়। বিশাল তুষারস্তূপ ও হিমবাহের পথ ধরে চলে গলফ খেলা। মার্চ মাসে যখন খেলা শুরু হয় তখন তাপমাত্রা নেমে আসে মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (মাইনাস ১৩ ফারেনহাইট)। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা এবং বিরূপ আবহাওয়া অন্যান্য দেশ থেকে অংশ নেওয়া গলফারদের কোনোভাবেই নিরুৎসাহিত করতে পারেনি। পেশাদার ও অপেশাদার দুই ধরনের গলফার প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। কিন্তু চূড়ান্ত পর্বে কেবল ৩৬ জনই সুযোগ পান। জনপ্রিয় খেলাটির আয়োজক ওয়ার্ল্ড আইস গলফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফাউন্ডেশন।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *