উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

ঘুরে আসুন মালয়েশিয়া

এমএম রহমাতুল্লাহঃ দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকা ও সফরের সুবাদে মালয়েশিয়ার অনেক দর্শনীয় স্থান, সরকারী গুরুত্বপূর্ণ অফিস বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্ট লাইব্রেরি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, পুত্রাজায়া, মসজিদ-পুত্রা, প্রধানমন্ত্রীর অফিস, শাহআলম সুলতান মসজিদ, গেনটিং হাইল্যান্ড, ইন্টারন্যাশন্যাল কনভেনশন সেন্টার, কে এল টাওয়ার, ৭৩ মিটার উচু মিনার বিশিষ্ট মসজিদ ন্যাশন্যাল নেগারা, কে এল সিসি টু-ইন টাওয়ার, কে এল টাওয়ার, আইআইইউএম, প্রাচীন শহর ও সমুদ্র বন্দর মালাক্কা, জু-মালাক্কা  লংকাওই দ্বীপ, পেনাং, কুচিন, ক্যামেরুন হাইল্যান্ড, বাংলা মার্কেট, বুকিত বিন্তাং পরিদর্শনের সুযোগ হয়। চায়না টাউন, মায়ডিন, মসজিদে জামেক সফরকালে আধুনিক মালয়শিয়ার নাগরিকদের জীবনযাত্রা, মানবাধিকার ও বিচার ব্যবস্থা, প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের সার্বিক অবস্থা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, মাল্টি কালচার ও অভিবাসীদের জীবনযাত্রা ইত্যাদি নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ পূর্বক ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করি।
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারঃ উচ্চতার দিক থেকে বর্তমানে ১৬ নম্বরে রয়েছে মালয়েশিয়ার ‘পেট্রোনাস টাওয়ার’। ১৯৯৭ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলে সে সময়ে সর্বোচ্চ ভবন ‘সিয়ার্স টাওয়ার’কে ছাড়িয়ে শ্রেষ্ঠত্ব নিজের দখলে নেয় সুউচ্চ এই ভবনটি। ৮৮ তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন ছিল। ২০০৪ সালে এসে তাইওয়ানের ১০১ তলা বিশিষ্ট ‘তাইপে-১০১’ ভবনের কাছে শ্রেষ্ঠত্ব ছেড়ে দিতে হয় ‘পেট্রোনাস টাওয়ার’কে। তবে টুইন ভবন বিবেচনায় এটির উচ্চতা এখনো পৃথিবীতে নাম্বার ওয়ান। ‘পেট্রোনাস টাওয়ার’ হচ্ছে মালয়েশিয়ার সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি পেট্রোনাসের সদর দফতর। ৮৮ তলা বিশিষ্ট এই টাওয়ারটি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। কুয়ালালামপুর শহরের যে স্থানে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার অবস্থিত তার নাম কেএলসিসি বা কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার। কেএল সেন্ট্রাল থেকে মনোরেলে সরাসরি যাওয়া যায় কেএলসিসিতে। স্টেশনের নামও কেএলসিসি। এটি টুইন টাওয়ারের একদম নিচেই ভূগর্ভে অবস্থিত।১৯৯৮ সালে টাওয়ারটি উদ্বোধন করা হয়। এটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। আর এই টুইন টাওয়ারটি নির্মাণে আর্জেন্টিনা, ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়ার দক্ষ ইঞ্জিনিয়াররা কাজ করেছেন। টুইন টাওয়ার নির্মাণে মূল কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে স্টিল ও পাথর। যদিও টাওয়াটিকে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় শুধু স্টিল দ্বারা নির্মিত হয়েছে। টাওয়ারের ৪১ এবং ৪২তম তলাকে সংযুক্ত করেছে একটি ব্রিজ। ব্রিজটির নাম হচ্ছে স্কাই ব্রিজ। এই ব্রিজের সাহায্যেই এক ভবন থেকে অন্য ভবন যেতে হয়। এখানে রয়েছে ৮ তলাবিশিষ্ট শপিংমল। এই শপিংমলটির ৫তলা মাটির নিচে এবং বাকি ৩ তলা সমতলে অবস্থিত। কুয়ালালামপুর শহরের যে স্থানে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার অবস্থিত তার নাম কেএলসিসি বা কুয়ালালামপুর সিটি সেন্টার। কেএল সেন্ট্রাল থেকে মনোরেলে সরাসরি যাওয়া যায় কেএলসিসিতে। স্টেশনের নামও কেএলসিসি। এটি টুইন টাওয়ারের একদম নিচেই ভূগর্ভে অবস্থিত। পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের চারপাশ খুব সুন্দর করে সাজানো-গোছানো। টাওয়ারের পেছনের দিকটা শুধুই পর্যটকদের জন্য। এখানে রয়েছে নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থা। এখানে বিকাল বেলায় আয়োজন করা হয় ওয়াটার শো’র। এখানে রয়েছে কৃত্রিম একটি সেতু। এই সেতুতে দাঁড়িয়ে পুরো টাওয়ারের ছবি তোলা যায়। পর্যটকদের জন্য স্কাই ব্রিজ হচ্ছে সেরা আকর্ষণ। সেখানে উঠতে পারাটা জীবনের এক বিশাল সংগ্রহ। আর তাই কেউই কুয়ালালামপুরে এসে স্কাই ব্রিজ না ঘুরে যায় না। তবে পর্যটকদের জন্য শুধু ৪১তম তলায় যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। উপরের অংশটি পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত। প্রতিদিন সকাল ৯টা পর্যন্ত পর্যটকদের মধ্যে স্কাই ব্রিজ পরিদর্শনের টিকিট বিনামূল্যে দেওয়া হয়।
গেনটিং হাইল্যান্ডঃ মালয়েশিয়ায় বিদেশী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণগুলোর মধ্যে ‘গেন্টিং হাইল্যান্ড’ অন্যতম। প্রায় সাত হাজার ফিট পাহাড়ের উপরে গড়ে তোলা হয়েছে ‘Genting City of Entertainment’, যেখানে রয়েছে ৫টি অত্যাধুনিক পাঁচ তারকা হোটেল, প্রচুর রেস্টুরেন্ট, Cinema, Disco, Pub, Water Park, চোখ ধাঁধানো Theam park, Fast food shop, ম্যাজিক শো, বিশাল ইনডোর ও আউট ডোর থিম পার্ক, আরো কতো কি আকর্ষণীয় বিনোদন ব্যবস্থা। এখানে রয়েছে বিশাল Casino এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দীর্ঘতম ও দ্রুততম ক্যাবলকার। ক্যাসিনোতে দেশী বিদেশী কোনো মুসলমান পর্যটককে ঢুকতে দেয়া হয় না। এটা শুধুমাত্র অমুসলিমদেন জন্য সংরক্ষিত। এখানে তাপমাত্রা খুবই কম, মাত্র ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রীতিমত ঠাণ্ডা হিমেল হাওয়া ও ভেসে যাওয়া মেঘের ভেলায় মিশে যাওয়ার আনন্দ। স্বপরিবারে বা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ ও ছুটি কাটানোর চমৎকার জায়গা।
 
গেনটিং হাইল্যান্ড” তৈরির গল্পটা কি জানা আছে? তানশ্রী লিম গোহ টং ক্যামেরন হাইল্যান্ডে একটা বাণিজ্যিক মিটিঙে গেলেন । হোটেলের বারান্দায় বসে পরিবেশ, খোলা বাতাস উপভোগ করতে করতে তিনি ঠিক করলেন এমন একটি হোটেল তৈরি করবেন, যেখানে মানুষ পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি অন্যান্য মজার মজার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখতে পারবেন। এই ভাবনা নিয়েই ১৯৬৫ সালে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। ৪ বছর লাগে সমতল থেকে পাহাড়ের চূড়ায় যাবার রাস্তা তৈরি করতে। ১৯৬৯ সালে হোটেলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের সময় টিংকু আব্দুর রাহমান মুগ্ধ হয়ে যান এই বেসরকারি উদ্যোগে। সরকারের সাহায্য ছাড়া এমন একটি উদ্যোগ দেখে তিনি তাদের নানা রকম গেমিং লাইসেন্স প্রদান করেন। শুরু হোল যাত্রা। পাহাড়ি রাস্তা, কুয়াশা, পাহাড়ি বন সব মিলেই গেনটিং এর পরিবেশ অসাধারণ। গেনটিং হাইল্যান্ডে ‘স্নো ওয়ার্ল্ড’ পরিদর্শনে আমার সন্তানরা খুবই আনন্দ পায়। কৃত্রিমভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করে কিভাবে ‘স্নো-ওয়ার্ল্ড’ সৃষ্টি করা হয়েছে তা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করার কথা নয়।
দীর্ঘদিন কুয়ালালামপুরের ব্রেম্বাং ও শ্রীমায়া এলাকায় থাকার সুবাদে বাংলা মার্কেট, বুকিত বিনতাং ও কে এল সিসি টু-ইন টাওয়ার এলাকার মারাত্মক যানজটও চোখে পড়ে। যদিও মালয়েশিয়ায় যানজট দেখে অবাক হবার কিছুই নেই। তাদের সরকার দেশের নাগরিকদের গাড়ি কেনা কিংবা বাড়ি কেনার জন্য যেভাবে সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে তাতে এ ধরনের গাড়ির জট খুব স্বাভাবিক। তবে কুয়ালালামপুর শহরে তীব্র জানজট হয় খুব ভোরে এবং বিকেলে এবং এ জানজট খুব দ্রুত কেটে যায়। সেখানে রাস্তা নয় যেন রান ওয়ে। আমাদের দেশে গাড়ি বেশিদিন মজবুত না থাকার কারণ রাস্তাঘাট উন্নত বা মানসম্মত না হওয়া। তাছাড়া মালয়েশিয়ায় নতুন গাড়ি কিনতে যে টাকা লাগে আমাদের দেশে জাপানি আমদানীকৃত (রিকন্ডিশন) গাড়ি কিনতে তার দিগুণ ট্যাক্স দিতে হয়। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের গাড়ি ব্যবহার খুবই দুঃসাধ্য এবং এতে তাদের পরিবহন খাতে বিপুল অর্থের অপচয় হয়। আধুনিক মালয়েশিয়ার সাজানো শহর ও নানা সড়ক পথ পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম স্বর্গরাজ্য গেন্টিং হাইল্যান্ডের দিকে। পাহাড়ি পথে যতই গাড়ি উঠছিল আমাদের নিঃশ্বাস যেন ভারি হয়ে আসছিল। ক্রমশ ঠাণ্ডা হিমেল বাতাস, অবশেষে পৌঁছে গেলাম সেই বহু প্রতীক্ষিত ‘গেনটিং হাইল্যান্ডে’। গাড়ি থেকে আমরা নেমে গেলে হান্নান ভাই গাড়ি পার্কিং এ চলে গেলেন। আমরা টিকেট করে ক্যাবল কার এ চড়তে লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, মেঘ আর সোনালী রোদের খেলা। গেনটিং হাইল্যান্ডের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ক্যাবল কার। ঝুলন্ত ক্যাবলে বিশেষ ধরনের এ কার অনেক উঁচুতে পাহাড় চূড়ায় উঠছে, আর নামছে। বিশেষ করে ক্যাবল কারে পাহাড় চূড়ায় মেঘ ছুঁয়ে যাওয়ার দৃশ্য আমাকে কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় আনন্দ অনুভূতির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। অবশ্য এরপরে পাকিস্তানেও ক্যাবল কারে পাহাড় চূড়ায় ওঠার সুযোগ হয়েছিল আমার। কিন্তু কবে যে আমাদের দেশের বান্দরবান, কেওকারাডং, তাজিনডং-এ এমনটা হবে!এমনটা হলে পর্যটন শিল্পে এদেশ মালয়েশিয়াকেও হয়ত হার মানাতো। অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক ৩ পার্বত্য জেলা, সিলেট এবং কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে কেন্দ্র করে সামান্য উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় দেশকে বহুদূর এগিয়ে নেয়া যায়। বেসরকারি উদ্যোগকে সহায়তা ও সমর্থন দিয়ে সরকার এ কাজকে দ্রুত এগিয়ে নিতে পারে। তবে এর জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। যাহোক, ক্যাবলকারে আমরা উঠে পড়লাম। গাড়ি কিংবা ট্যাক্সিক্যাবেও গেন্টিং হাইল্যান্ডে ওঠা যায়। মালয়শিয়ায় থাকা পুরাতন বন্ধুদের কাছে জানলাম, ১৯৯৭ সালে ক্যাবলকার সংযোজন হয়, যার মাধ্যমে প্রকল্পটির আকর্ষণ বহুগুণ বেড়ে যায়। যা মালয়েশিয়ানদের কাছে গর্ব করার মতো। এ ক্যাবলকারের মাধ্যমে ৩.৩৮ কি.মি. পাহাড়ের চূড়ায় ভ্রমণকারী পরিবহনের সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। গেনটিং স্কাইওয়ে বিশ্বের দ্রুততম মনোক্যাবলকার সিস্টেম হিসেবে স্বীকৃত যা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ ২৪.৬ কি.মি.। এটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দীর্ঘতম ‘ক্যাবল কার’। অনেকগুলো কেবল কার পাশাপাশি উঠানামা করছিলো। যাত্রীরা একে অপরকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন। হাতে মেঘ যেন ছুঁই ছুঁই, একটু পরে মেঘের ভেতর দিয়েই যেন উঠে আসলাম। এখানে ছবি তুলে তা ৫০ রিঙ্গিত এ বিক্রি করা হয়। ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম আর পুরনো সংগী এবং স্থানীয়দের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছিলাম এ বিশাল রিসোর্ট সম্পর্কে নানা তথ্য। ইতঃপূর্বে যা দেখিনি এবার এসে আরো অনেক বিস্তীর্ণ আউটডোর থিম পার্ক দেখলাম। দুপুরের নামাজ ও খাবার সেরে সব ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। সর্বত্র নামাজ, ওজুর, টয়লেট এর সুন্দর ব্যবস্থা। বিশাল ইনডোর-আউটডোর ক্যাম্পাস যেন দেখা শেষ হবার নয়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় এক-দেড় ঘণ্টার রাস্তা যা প্রায় ৫০/৬০ কি. মি. দূরত্বে গেন্টিং হাইল্যান্ড, এটা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ১৮০০ মিটার উঁচুতে। সম্পূর্ণ বেসরকারি এক কোম্পানি এ বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করলো। পাহাড়টির নাম উলুকাই মাউন্টেন, যাকে সিটি অব মাউন্টেনও বলা হয়। তানশ্রী লীম গোহ টং এ কোম্পানির কর্ণধার। ১৯৬৪ সালে তাঁর বা তাঁর কোম্পানির প্রেরণা জাগে এ হিল রিসোর্ট করার। অতঃপর ১৯৬৫ সালের ২৭ অক্টোবর ‘গেন্টিং হাইল্যান্ড বারহাদ’ নামক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৫-১৯৭০ সালের মধ্যে যথাক্রমে পাহাং রাজ্য সরকারের নিকট থেকে ১২ হাজার একর জমি এবং সেলাংগার রাজ্য সরকারের নিকট থেকে ২ হাজার ৮শ একর ভূমি অনুমোদন পেতে সক্ষম হন। ১৬৬৫ সাল থেকে বিশাল এ প্রকল্প কাজে চার বছর সময় লাগে। এর জন্য কোম্পানির কর্ণধার তানশ্রী লীম তাঁর সমস্ত সময়, অর্থ উৎসর্গ করেছিলেন। হিল রিসোর্ট-এ পৌঁছাবার প্রবেশ পথ নির্মাণ শেষে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৬৯ সালের ৩১ মার্চ মালয়শিয়ার প্রধানমন্ত্রী টেংকু আবদুর রহমান এ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৭১ সালে এখানে প্রথম হোটেল নির্মাণ সফলতার সাথে সমাপ্ত হয়। তার বর্তমান নাম থিম পার্ক হোটেল। এ থেকে হিল রিসোর্ট বাস্তবায়ন এগিয়ে যাওয়া শুরু হয় এবং এর আয়তন বৃদ্ধি পেতে থাকে। বৃষ্টিবহুল এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণœ রাখে এ কোম্পানি। বর্তমানে এখানে তারকামানের ৫টি বিশাল বিশাল হোটেল রয়েছে। আরো রয়েছে দু’টি এপার্টমেন্ট। বিভিন্ন ধরনের অবসর বিনোদনের উপাদান যেমন-ইনডোর, আউটডোর, থিম পার্ক, খেলাধুলার সুযোগসুবিধা, বিশ্বমানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে একাধিক। এ হিল রিসোর্ট-এ গমনের জন্য সড়কটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে দ্রুতগতিতে উঠানামা করলেও বৃহত্তম আকারের গাড়ি উঠানামায়ায় কোনো ঝুঁকি আছে বলে মনে হবে না। এ কোম্পানি হোটেল রিসোর্টের পরও বনায়ন, পাওয়ার জেনারেশন, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া পর্যন্ত বিশাল বিশাল প্রকল্প তাদের হাতে রয়েছে। এ কোম্পানি তাদের প্রকল্প বাস্তবায়ন বিশালত্বের দিক দিয়ে এশিয়ার ২নং স্থান দখল করে। এর মালিক তানশ্রী লীম গোহ টং ২০০৭ সালের ২৩ অক্টোবর ইন্তিকাল করেন। গেন্টিং হাইল্যান্ড মালয়েশিয়ানদের কাছে গর্ব করার মতো বিনোদন প্রকল্প। যেকোনো বিদেশী মালয়েশিয়ায় গমন করলে গেন্টিং হাইল্যান্ড-এ গমন করা স্বাভাবিক ব্যাপার। এখানে মেঘের আনাগোনা উপভোগ করা যায়। তাপমাত্রা সমতল ভূমি থেকে ১০-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর কম থাকে বিধায় হালকা ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। বলে রাখা জরুরি, মালয়শিয়ার তাপমাত্রা সাধারণত ৪০/৪২ ডিগ্রি এবং এখানে সারাবছর একই তাপমাত্রা বিদ্যমান।
লংকাউইঃএটি মালয়েশিয়ার উত্তর-পশ্চিম উপকূলে আন্দামান সাগরে অবস্থিত। ৯৯টি দ্বীপ নিয়ে লংকাউই দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। এখানে আছে ছবির মত সুন্দর সৈকত, ম্যানগ্রোব ফরেস্ট ও পর্বতমালা। সম্প্রতি এখানে পর্যটকদের জন্য অনেক রিসোর্ট, হোটেল, রেস্ট্রুরেন্ট ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বীপমালার ব্যাতিক্রমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য এখানে পর্যটকরা ভীড় করেন।
তামান নেগারাঃ পশ্চিম মালয়েশিয়ার উত্তরাংশের তিনটি রাজ্য জুড়ে তামান নেগারা অবস্থিত যা বিশ্বের প্রাচীনতম রেইন ফরেস্ট। তামান নেগারা ইকোট্যুরিজম ও দুঃসাহসিক গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয়। এই পার্কটি মালয়ান টাইগার, এশিয়ান হাতি ও সুমাত্রার গন্ডারের মত দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী ও গাছপালায় পরিপূর্ণ। এই পার্কের আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে দীর্ঘ সাসপ্যানশন ব্রীজের উপর দিয়ে চাঁদের আলোয় হাঁটা। প্রায় গাছের উপর দিয়ে গেছে এই ব্রীজ যার ফলে পাখিদের আবাস দেখা যায় এখান থেকে। রাতের সাফারির ব্যবস্থা আছে এখানে। ফলে পেঁচা, চিতা বিড়াল ও ওয়াটার ড্রাগনের মত নিশাচর প্রাণী এবং শুধুমাত্র রাতে প্রস্ফুটিত হয় এমন উদ্ভিদ দেখারও সুযোগ আছে এখানে।
বাটু কেভস: মালয়েশিয়ার সবচেয়ে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থানের লিস্টের ৫ম স্থানে রয়েছে বাটু কেভস (Batu Caves)। এটি মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। এখানে ৩ টি বৃহদাকার এবং বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্রাকার গুহা রয়েছে এবং সবচেয়ে বড় গুহাটির নাম হল মন্দির গুহা। এর সিলিং প্রায় ১২২ মিটার উঁচু। এখানেই রয়েছে বাটু কেভস (Batu Caves)। বাটু কেভস অর্থাৎ শ্রী শুব্রমানিয়ার মন্দির হল প্রভু মুরুগান (হিন্দু দেবতা)-এর প্রতি উৎসর্গীকৃত হিন্দু মঠ। এর বয়স আনুমানিক ৪০ কোটি বছর। পূণ্যার্থীদের সে মন্দিরে পৌঁছাতে ২৭২ ধাপ সিড়ি বেয়ে উঠতে হয়।
এছাড়াও কোয়ালালামপুর, পেনাং, কুচিং, কোটা কিনাবালু, ক্যামেরন হাইল্যান্ড, ম্যালাকা, কোটা ভারু ইত্যাদি স্থানগুলো মালয়েশিয়ার উল্লেখযোগ্য স্থান। বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের অবস্থানের জন্য মালয়েশিয়ার খাবার ও বেশ বৈচিত্র্যময়। মালয়, চাইনিজ, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য ও থাইল্যান্ডের খাবারও পাওয়া যায় এখানে। পথের পাশের খাবারের দোকানে খুব কম দামে খাবার পাওয়া যায়। মালয়েশিয়া পাহাড়ি দেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক দেশ। বাইরের আবহাওয়া গরম। সম্পূর্ণ দেশ জুড়ে দেখা যায় পাহাড় আর জঙ্গল। এক ঋতুর দেশ বলে পরিচিত মালয়েশিয়াতে বৃষ্টি হয় প্রায় প্রতিদিনই।
কিভাবে যাবেনঃ এশিয়ার একটি ছিমছাম গুছানো শহর মালেশিয়া । প্রতিবছর অসংখ্য ভ্রমণপিয়াসী বাংলাদেশি মালেশিয়াতে ঘুরতে যায় । ঘুরতে যাবার জন্য পছন্দের তালিকায় মালেশিয়ার নাম প্রথম ৩ টি দেশের মদ্ধেই থাকে। মুলত মালেশিয়া একটি মুসলিম প্রধান দেশ এবং এর রাজধানী কুয়ালালামপুর । প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মালেশিয়াতে মাত্র একটিই ঋতু, বর্ষা। তাই এখানে প্রায় প্রতিদিন কম বেশি বৃষ্টি হয়। বাইরের আবহাওয়াটা গরম অনুভূত হয়। সম্পূর্ণ দেশ জুড়ে দেখা যায় পাহাড়ি রাস্তা আর বন-জঙ্গল। ডক্টর মাহাথির মোহাম্মদকে বলা হয় আধুনিক মালেশিয়ার জনক । দীর্ঘ ২৭ বছরের পরিশ্রম তার বিফলে যায়নি, আজ মালেশিয়া পৃথিবীর একটি উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে । কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরটি কুয়ালালামপুর মূল শহর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে। কুয়ালালামপুরে অবশ্য এয়ার এশিয়ার একটি নিজস্ব বিমান বন্দর রয়েছে তাই এয়ার এশিয়াতে মালয়েশিয়া আসলে খরচ অনেক কম হবে আপনার । কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে অবতরন করার পর মূল শহরে আসতে হলে আপনাকে টেক্সি অথবা বাস যোগে আসতে হবে। কুয়ালালামপুরে অবস্থান করার জন্য আপনি থাকার হোটেল বুকিট বিনতাং এলাকা বেছে নিতে পারেন। এখানে পর্যটক হিসেবে মালয়েশিয়া এসে বুকিট বিনতাং এলাকায় থাকলে আপনি সব রকমের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
 
মালয়েশিয়া রিটার্ন টিকিটের জন্য কত খরচ হবে?
এয়ার লাইন্সের ভিন্নতার কারণে টিকিটের মূল্য বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে । ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া যেতে টিকিট কাটতে হবে এয়ার এশিয়া, বাংলাদেশ বিমান, ইউ এস বাংলা, ইউনাইটেড এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ওয়েজ, ও মালয়েশিয়ান এয়ার লাইন্সে। সময়ভেদে টিকেটের দামের কম-বেশি হয়। যাওয়া-আসার টিকেট মিলিয়ে ইউনাইটেড এয়ার ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজের টিকিটের দাম পড়বে ২২ হাজার ৫শ’ থেকে ২৬ হাজার টাকা। বাংলাদেশ বিমানের টিকিট পাবেন ২৪ হাজার ৫শ’ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। মালয়েশিয়ান এয়ারের টিকিটের মূল্য একটু বেশি পরবে, মালয়েশিয়ান এয়ারে গেলে আপনাকে ২৭ হাজার থেকে ৩৬ হাজার ৫শ’ টাকা পর্যন্ত গুন্তে হতে পারে । ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর পৌঁছতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টা। বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সময়ে পার্থক্য ২ ঘণ্টা। তাই গভীর রাতে এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর ঝামেলা এড়াতে রাতের বিমানে রওনা দেওয়াই উত্তম।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *